এক দুর্ধর্ষ মাদক ব্যবসায়ীর অভিনব কৌশল

ব্রাজিলের দুর্ধর্ষ এক মাদক ব্যবসায়ী ক্লাউভিনো ডি সিলভা (৪২)। তাকে আটক করে রাখা হয়েছে জেলে। কিন্তু সেখান থেকে প্রহরীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালাতে চেষ্টা করেছে সে। এ জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। পরেছে মুখোশ, মাথায় নারীদের মতো লম্বা পরচুল, পরনে নারীদের পোশাক। এর মধ্য দিয়ে সে নিজের ১৯ বছর বয়সী মেয়ে সাজে। সেই পরিচয়ে জেল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথে প্রহরীদের সন্দেহ হয়। ঠিক বেরিয়ে যাওয়ার পথের কাছাকাছি তার গতিরোধ করেন জেল প্রহরীরা।
তারা তাকে চ্যালেঞ্জ করেন। এতে ধরা পড়ে যায় তা চালাকি। তাকে একটি রুমে নিয়ে চেক করা হয়। একে একে খুলে ফেলা হয় মুখোশ, চুল আর পোশাক। তার ভিতর থেকে তার মেয়ে নয়, বেরিয়ে আসে সে। তাকে এই পলায়নে সহায়তা করে একজন অন্তঃসত্ত্বা সহ সাতজন নারী পরিদর্শক। এ খবর দিয়েছে বৃটেনের একটি ট্যাবলয়েড পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ।
ব্রাজিলের পশ্চিমাঞ্চলে রিও ডি জেনিরোতে একটি জেলের এক ইউনিটে উচ্চ সতর্ক জেলখানায় এ ঘটনা ঘটে গত ৩ আগস্ট শনিবার বিকেলে। ক্লাউভিনো ডি সিলভা স্থানীয়ভাবে ব্রাইক্সিনহো নামেও পরিচিত। বাইক্সিনহো মানে হলো খর্বকায়। তার এমন নাম দেয়ার কারণ, তার উচ্চতা অনেক কম। রিও রাজ্যের জেল প্রশাসন বিষয়ক একজন সেক্রেটারির মুখপাত্র বলেছেন, ক্লাউভিনো পালানোর জন্য পরেছিল একটি গোলাপি রঙের টি শার্ট। তার নিচে পরেছিল কালো রঙের ব্রা। মাথায় ছিল দীর্ঘ কালো লম্বা চুল। পরনে ছিল আঁটোসাঁটো জিনস। পায়ে ছিল সাদা স্যান্ডেল। গায়ে ছিল একটি কোট। চোখে ছিল চশমা। তাকে দেখতে হুবহু একজন নারীর মতো মনে হলেও তার চলাফেরা নারীর মতো ছিল না।
তিনি আরো বলেন, তার এমন চলাফেরা দেখে জেল কর্মকর্তাদের সন্দেহ হয়। এ সময় অন্য সাতজন নারী পর্যটকের ঠিক মাঝখানে ছিল সে। তারা জেল থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। তাকে ওই নারীরা এমনভাবে ঘিরে রেখেছিলেন যাতে জেল কর্তৃপক্ষের প্রহরীরা তাকে পরিষ্কারভাবে দেখতে না পান। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। জেলের এজেন্টরা একটি ভিডিও রেকর্ড করেছেন। তা তারা পাঠিয়ে দিয়েছেন ফোকাস অন নিউজকে। তাতে দেখা যায়, জেল কর্মকর্তারা ক্লাউভিনোর পরচুল খুলে নিচ্ছেন। এ সময় তার দু’হাত ছিল পিছনে। স্থির দাঁড়িয়ে ছিল সে। সে যখন কথা বলছিল তখন তার মুখের মাংসপেশী নড়াচড়া করছিল না। এ অবস্থায় এজেন্টরা তাকে তার পোশাক খুলতে নির্দেশ দেন। কিন্তু পোশাক খুলতে অস্বীকৃতি জানায় সে। বলে, আমার সবকিছু খোলার প্রয়োজন নেই। সঙ্গে সঙ্গে গোয়েন্দা এজেন্টরা তাকে ধমকে ওঠেন। বলেন, এখন সবকিছুতে লেজেগোবরে করে ফেলার সময় নয়। পোশাক খুলুন। এখানে কেউ আপনার কোনো ক্ষতি করবে না।

বাধ্য হয়ে অভিযুক্ত এই অপরাধী নিজের পোশাক খুলে ফেলে। এ সময় তার বাহুতে দেখা যায় ট্যাট্টু  আঁকা। বেরিয়ে আসে মাংসল বাহু, যা তার সিলিকন মুখোশের চেয়ে বেশি কালো। শেষ পর্যায়ে আসে তার মুখের মুখোশ খোলার পালা। খুলে ফেলা হয় তা। অমনি বেরিয়ে আসে রিও ডি জেনিরোর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর মাদকের ব্যবসায়ীদের অন্যতম ক্লাউভিনোর মুখ।
জেল কর্তৃপক্ষ বলছে, ক্লাউভিনো পালানোর জন্য বেছে নেয় ভিজিটিং আওয়ার বা দর্শনার্থীদের সাক্ষাতের সময়। এ সময়ে সে তার মেয়ে আনা গাব্রিয়েলের পোশাক পরে নেয়। বাদবাকি মুখোশ ও অন্য জিনিসগুলো পরে নিয়ে জেল থেকে পালানোর চেষ্টা করে। অন্তঃসত্ত্বা একজন সহ যে সাত নারী তাকে পালাতে সহায়তা করেছিলেন তাদেরকে আটক করা হয়। তার মধ্যে রয়েছে ক্লাউভিনোর এক মেয়ে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্থানীয় একটি পুলিশ স্টেশনে নেয়া হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, ওই জেলখানাটি উচ্চ নিরাপত্তার অধীনে। সেখানে রাখা হয়েছে রিও ডি জেনিরোর রেড কমান্ডের অনেক দুর্ধর্ষ বসকে। এ বছর সেখান থেকে কমপক্ষে ৭৩০০ মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। ক্লাউভিনোকে তার অপরাধের জন্য ৭৩ বছর ১০ মাসের জেল দিয়েছে আদালত। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে জেল ভেঙে যে ৩১ জন বন্দি বেরিয়ে যায়, তার মধ্যে অন্যতম সে। তাকে ওই ঘটনার অল্প পরেই গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

No comments

Powered by Blogger.