গোয়াইনঘাটে বিলের টাকার ন্যায্য হিস্যা চাওয়ায় খুন রহিম

গোয়াইনঘাটের খাটিয়া লুম বিলের ইজারাদার লাকী গ্রামের মানুষ। প্রায় তিন বছর ধরে বিলের লভ্যাংশের কোনো টাকা পান না গ্রামবাসী। স্থানীয় মাতব্বর মনির উদ্দিনসহ কয়েকজন তিন বছরের জমানো কোটি টাকা আত্মসাতের চেষ্টা চালায়। এতে প্রতিবাদ করেছিলেন গ্রামের আব্দুর রহিম। এ প্রতিবাদের জের ধরে গত ১৯শে মে আব্দুর রহিমকে উপর্যুপরি কুপিয়ে খুন করে মাতব্বররা। এ ঘটনার জের ধরে লাকী গ্রামে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এদিকে, আহতদের গুরুতর অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনায় সিলেটের গোয়াইনঘাট থানায় নিহত আব্দুর রহিমের বড় ভাই ফরিদ আহমদ বাদী হয়ে মনির উদ্দিনকে   প্রধান আসামি করে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- মৃত ইন্তাজ আলীর পুত্র সমছুল ইসলাম, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পিপড়াখাই গ্রামের মৃত হারিছ আলীর পুত্র মছব্বির আলী (৪৭), লাকী গ্রামের সমছুল ইসলামের পুত্র ছইল মিয়া, আইয়ুব আলীর পুত্র কুতুব উদ্দিন, মৃত আব্দুল করিমের পুত্র জয়নাল মিয়া, মৃত ইছরাইল আলীর পুত্র তৈয়বুর রহমান, মৃত আরজদ আলীর পুত্র আব্দুল মতিন, মৃত সোনা মিয়ার পুত্র জিয়াউর রহমান, মৃত আব্দুল খালিকের পুত্র ময়না মিয়া, মৃত খলিলুর রহমানের পুত্র আব্দুর রহিম। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়- গত ১৯শে মে বিকাল সাড়ে ৫টায় তোয়াকুল বাজার পুরাতন হাইস্কুলের মাঠে কাঠমিস্ত্রী শহিদ মিয়ার দোকানের সামনে এ ঘটনার সূত্রপাত ঘটে। বাদীর লিখিত অভিযোগ সূত্রে আরো জানা যায়, লাকী গ্রামবাসীর মালিকানাধীন ছোট ছোট কুড়ি, বিল অর্থাৎ (জলমহাল) বিক্রির টাকা বিবাদী সমছুল ইসলাম, তৈয়বুর রহমান, জিয়াউর রহমান ও ময়না মিয়া গণের কাছে জমা ছিল। ঘটনার দিন সকালে রহিম উদ্দিনসহ লাকী গ্রামের ৭-৮ জন লোক ওইসব মুরব্বিদের কাছে গ্রামের ছোট বড় কুড়ি অর্থাৎ জলমহালের টাকার বিষয়ে জানতে চান। এতে মুরব্বিরা ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন এবং আব্দুর রহিমসহ উপস্থিত ওই ৭-৮ জন লোককে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন। এরই সূত্র ধরে ঘটনার পদন রহিম উদ্দিন তোয়াকুল বাজার পুরাতন হাইস্কুল মাঠের পাশে বসে ভলিবল খেলা উপভোগ করছিলেন। হঠাৎ মনির উদ্দিনসহ গ্রামের জলমহালের টাকা আত্মসাৎকারীরা আব্দুর রহিমের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। ফলে আব্দুর রহিমের অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে পড়ে। এই খবরে লাকী গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এতে উভয় পক্ষে ২০ জনের অধিক আহত হয়েছেন। স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, লাকী গ্রামের ছোট বড় বেশ কয়েকটি জলমহাল রয়েছে। এইসব জলমহাল থেকে প্রতি বছর ৮০-৯০ লাখ টাকা আয় হয়। কিন্তু গ্রামের শক্তিশালী ও লাঠিয়াল বাহিনী সমছুল ইসলাম, তৈয়বুর রহমান, জিয়াউর রহমান, ময়না মিয়াসহ ১৫-১৬ জনের একটি কুচক্রি মহল প্রতি বছর ওইসব টাকা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে আত্মসাৎ করেন। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরের ও বিভিন্ন জলমহাল থেকে আয়কৃত সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করার হীন উদ্দেশ্যে এ কুচক্রি মহলটি নানা টালবাহানা চালিয়ে আসছিল। ফলে আব্দুর রহিমসহ এলাকার যুব সমাজ ওইসব কুচক্রি মহলের কাছ থেকে গ্রামের টাকা আদায় করে গরিবদের মাঝে বণ্টনের চিন্তায় মগ্ন ছিলেন। এতে ঘটে বিপত্তি।

No comments

Powered by Blogger.