দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদির শপথ

দ্বিতীয় মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোটের নেতা নরেন্দ্র মোদি। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় তিনি শপথ নিয়েছেন। তার সঙ্গে শপথ নিয়েছেন মন্ত্রিসভার আরো ৫৫ জন সদস্য।
রাষ্ট্রপতি ভবনের সামনে এক রাজকীয় অনুষ্ঠানে প্রায় ৮ হাজার অতিথির উপস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ সকলকে শপথ বাক্য পাঠ করিয়েছেন। ৫৫ মন্ত্রী এদিন পূর্ণমন্ত্রী, রাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন।
গত মন্ত্রিসভার প্রবীণ ও অভিজ্ঞদের মধ্যে অনেকেই স্বপদে বহাল আছেন। তবে সবচেয়ে বড় চমক এসেছে দুই এক জায়গায়। এর মধ্যে সবার আগে রয়েছে, বিজেপির সভাপতি অমিত শাহকে মন্ত্রী করা।
মোদির পরপরই শপথ গ্রহণ করেন তিনি। এ ছাড়া সাবেক পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শঙ্করকে মন্ত্রী করা হয়েছে।
এদিকে, মোদির গত মন্ত্রিসভার দু’টি বড় মুখ থাকছে না এবারের মন্ত্রিসভায়। এর মধ্যে প্রথম হচ্ছেন অসুস্থতার কারণে নির্বাচনে না লড়তে পারা সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। দ্বিতীয় হচ্ছেন, সাবেক মন্ত্রিসভার অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তিনিও অসুস্থতার কারণে দায়িত্ব নিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। অনেকে ধারণা করছেন, জেটলির জায়গায়ই বসতে পারেন অমিত শাহ। তবে এই পদের আরেকজন প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন স্মৃতি ইরানি। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে তার পারিবারিক আসন আমেথিতে হারিয়ে পুরো দেশকেই অবাক করে দিয়েছেন সাবেক এই অভিনেত্রী।
পশ্চিমবঙ্গ থেকে মন্ত্রী করা হয়েছে বাবুল সুপ্রিয় এবং দেবশ্রী চৌধুরীকে। বাবুল অবশ্য আগের মন্ত্রিসভাতেও ছিলেন। তবে দেবশ্রী এবারই প্রথম রায়গঞ্জ থেকে জয়ী হয়েছেন। মন্ত্রিসভায় একমাত্র সংখ্যালঘু মুখ হলেন- মুক্তার আব্বাস নকভি। গত দু’দিন ধরে মোদি এবং শাহ একাধিকবার ম্যারাথন বৈঠক করে মন্ত্রীদের নাম চূড়ান্ত করেছেন। এদিন দুপুরের পর থেকে বিজেপি সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে ভাবী মন্ত্রীদের কাছে টেলিফোনে বিকালে প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতে দেখা করার অনুরোধ জানানো হয়েছিল।
এদিন পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে ২৪ জন শপথ নিয়েছেন। এরা হলেন- রাজনাথ সিং, অমিত শাহ, নিতীন গড়গড়ি, নির্মলা সীতারমন, রবিশঙ্কর প্রসাদ, প্রকাশ জাভড়েকার, ধর্মেন্দ্র প্রধান, পীযূষ গোয়েল, সদানন্দ গৌড়া, রামবিলাস পাশোয়ান, নরেন্দ্র সিং টোমার, হরসিমরিত কাউর বাদল, টি সি গেহলট, এস জয়শঙ্কর, রমেশ পোখরিয়াল নিশান্ত, অর্জুন মুণ্ডা, স্মৃতি ইরানি, হর্ষবর্ধন, মুক্তার অব্বাস নকভি, প্রহ্লাদ যোশী, মহেন্দ্র নাথ পাণ্ডে, অরবিন্দ সাবান্ত, গিরিরাজ সিং ও গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত। এ ছাড়া রাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন, সন্তোষ গাঙ্গোয়ার, কিরেণ রিজিজু, ইন্দ্রজিৎ সিং, জীতেন্দ্র সিং, প্রহ্লাদ সিং প্যাটেল, আর সিং, হরপ্রিত সিং পুরী, মনসুখলাল মাণ্ডারিয়া, ফগন সিং পুলন্ত, অশ্বিনী চৌবে, অর্জুন রাম মেঘাওয়াল, জেনারেল ভিকে সিং, কৃষ্ণপাল গুর্জর, রাওসাহেব দানবে, জি কিষাণ রেড্ডি, পুরুষোত্তম রূপালা, রামদাস অটওয়ালে, সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতি, বাবুল সুপ্রিয়, সঞ্জীব কুমার বালিয়ান, সঞ্জয় সামরাও, অনুরাগ সিং ঠাকুর, সুরেশ সিং বসাপ্পা, নিত্যানন্দ রাই প্রমুখ। এনডিএ’র শরিক দলগুলো থেকে একজন করে মন্ত্রী হয়েছেন। ২০১৪ সালে মোদির সঙ্গে ৪৬ জন মন্ত্রী শপথ নিয়েছিলেন।
পরে অবশ্য তা বেড়ে ৭০ জনে পৌঁছেছিল। শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ, তার পত্নী রাশিদা খানম এবং মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। এ ছাড়া যোগ দেন শ্রীলঙ্কা, কিরঘিজিস্থান, ও মিয়ানমারের রাষ্ট্র প্রধান এবং নেপাল, ভুটান ও মরিশাসের প্রধানমন্ত্রীরা। থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে দেশটির কৃষিমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। বিমসটেকভুক্ত দেশের প্রধানদেরই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। অনুষ্ঠানে দেশটির সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চার চেয়ারপারসন সোনিয়া গান্ধী, কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং সহ ভারতের সব রাজ্যের রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন।
এবারই প্রথম বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকে এখন পর্যন্ত তৃণমূল কংগ্রেসের সন্ত্রাসে নিহত ৫৪ জন বিজেপি নেতা ও কর্মীর পরিবারের আমন্ত্রিতরা । উপস্থিত ছিলেন, পুলওয়ামায় জঙ্গি হানায় নিহত জওয়ানের পরিবারও। তবে এদিনের অনুষ্ঠানে নিহত বিজেপি নেতা ও কর্মীদের পরিবারের উপস্থিতির প্রতিবাদে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সৌজন্যের আবহ নষ্ট করে রাজনৈতিক ‘প্রতিহিংসা’ চরিতার্থ করার অভিযোগ তুলে অনুষ্ঠান বয়কট করেছেন। উল্লেখ্য, লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি লোকসভার ৫৪২টি আসনের মধ্যে ৩০৩টি আসন পেয়ে এককভাবে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। আর জোট হিসেবে এনডিএ ৩৫৩টি আসনে জয়ী হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.