ইয়াবা হোতা সাইফুল ‘বন্ধুকযুদ্ধে’ নিহত

বহুল আলোচিত শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণায়লয়সহ সকল গোয়েন্দা তালিকায় মাদককারবারীদের মধ্যে শীর্ষে থাকা হাজী সাইফুল করিম (৪৫) পুলিশের সঙ্গে ‘বন্ধুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২ টার দিকে টেকনাফ স্থল বন্দরের সীমানা প্রাচীরে শেষ প্রান্তে এ বন্ধুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।
ঘটনাস্থল থেকে ৯ টি এলজি, ৪২ রাউন্ড তাজা কার্তুজ, ৩৩ রাউন্ড কার্তুজের খোসা, ১ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। এসময় তিন জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। আহতরা হচ্ছে, এসআই রাসেল আহমদ, কনস্টেবল ইমান হোসেন ও মো. সোলেমান। হাজী সাইফুল করিম টেকনাফ সদর ইউনিয়নের শীলবুনিয়া পাড়ার ডা. মো. হানিফের পুত্র। সে ইয়াবা ব্যবসা করে দেশের সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি এবং মোস্ট ওয়ান্টেড আসামী। সাইফুল গত শনিবার ইয়াঙ্গুন থেকে একটি প্রাইভেট বিমানে করে দেশে ফেরেন।
পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিমানবন্দর থেকেই তাকে আটক করে নিয়ে যায়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাস জানান, গত কয়েক দিন পূর্বে ইয়াবার একটি বড় চালান ইঞ্জিন চালিত বোট যোগে মায়ানমার হতে টেকনাফ স্থল বন্দরের সীমানা প্রাচীরের শেষ প্রান্তে নাফ নদীর পাড়ে মজুদ করেছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে আটক হাজী সাইফুল করিমসহ ইয়াবা উদ্ধারের জন্য ৩০ মে দিবাগত রাত সাড়ে ১২ টার দিকে উক্ত স্থানে পৌঁছলে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে অস্ত্রধারী ইয়াাবা ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে। এতে ঘটনাস্থলে পুলিসের তিন সদস্য আহত হয়। তাৎক্ষণিক নিজেদের জীবন ও সরকারী সম্পত্তি রক্ষার্থে পুলিশও ৫২ রাউন্ড গুলি করে। এক পর্যায়ে আটককৃত হাজী সাইফুল করিম (৪৫) গুলিবিদ্ধ হয়। গোলাগুলির শব্দ শুনে ঘটনাস্থলে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসলে পুলিশ গুলি করা বন্ধ করে।
পরে গুরুতর আহত গুলিবিদ্ধ হাজী মো. সাইফুল করিম কে রাত দেড়টার দিকে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠায়। কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে।
এব্যাপারে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন এবং এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলেও জানান তিনি।
ওসি আরো জানান, নিহত হাজী সাইফুল করিমের বিরুদ্ধে টেকনাফ মডেল থানাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় মাদক, অস্ত্র ও মানি লনডারিংয়ের একাধিক মামলাসহ বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে।
ব্যবসায়ী হাজী সাইফুল করিম আত্মগোপনে চলে যায়। পরে সরকার আত্মসমর্পনের সুযোগ দিলে প্রথম ধাপে ১০২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করে। তখন থেকে সাইফুল করিমও দ্বিতীয় ধাপে আত্মসমর্পনের সুযোগ খুঁজে। কিন্তু বন্ধুক যুদ্ধে নিহত হওয়ায় সে সুযোগ রইলো না। ফলে দেশের দক্ষিণ সীমান্তের এক শীর্ষ মাদক ইয়াবা স¤্রাটের পতন ঘটে। এই ইয়াবা ব্যবসায়ীর নামে বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ দেশের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে বলেও জানা যায়।
গত বছরের ৪ এপ্রিল চট্টগ্রামের হালিশহরে এক চালানে ১৩ লাখ ইয়াবা বড়ি আটক হওয়ার পর কক্সবাজার ও মিয়ানমারের মূল চোরাকারবারিদের নাম বেরিয়ে আসে। তাঁদের একজন সাইফুল করিম। ১৩ লাখ ইয়াবা পাচারের সঙ্গে জড়িত দুই আসামি রশিদ ওরফে মুন্না ও আশরাফ আলী চট্টগ্রামের আদালতে সাইফুল করিম এবং মিয়ানমারের চোরাকারবারি আবদুর রহিমকে জড়িয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাতে ১৮ কোটি টাকা লেনদেনের বিষয়টি উঠে আসে।
২০১৮ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১১৫১ জনের মাদক কারবারির তালিকার এক নম্বরে ছিল এই সাইফুল করিমের নাম।  ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশে প্রথম ইয়াবার চালান এনেছিলেন। দেশের লাখ লাখ তরুণ-তরুণীকে মাদকাসক্ত করার পেছনে তাঁর ভূমিকা রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাদক ব্যবসায়ীর তালিকায় ১ নম্বর, কক্সবাজারের গডফাদারের তালিকায় ২ নম্বরে ছিল সাইফুলের নাম।
কাগজে কলমে সাইফুল করিম টেকনাফ স্থলবন্দরের একজন সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী। কিন্তু আমদানী-রফতানির আড়ালে তিনি মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান নিয়ে আসতেন। সরকারের সর্বশেষ তালিকায় এক নম্বর ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে তার নাম উঠে আসে। এমনকি প্রত্যেক গোয়েন্দা রিপোর্টের শীর্ষে সাইফুল করিম এবং তার পরিবারের সদস্যদের নাম রয়েছে। গত মাসেও দুদকের পক্ষ থেকে তার নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তার পাঁচ ভাইয়ের বিরুদ্ধেও ইয়াবা ব্যবসায় স¤পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। সর্বশেষ টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাসের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে ৩ মে সাইফুলের ছোট ভাই মাহবুব করিম ও রাশেদুল করিমকে টেকনাফ নিজ বাড়ি থেকে ১০ হাজার ইয়াবা ও ৪টি অস্ত্রসহ আটক করেছে পুলিশ।

No comments

Powered by Blogger.