মঙ্গলবাড়িয়ার রসালো লিচু by সাখাওয়াত হোসেন হৃদয়

রসে টুইটম্বুর। স্বাদে গন্ধে অতুলনীয়। খেতে সুস্বাদু। আকারে বড়। বাতাসের তালে, গাছের পাতার ফাঁকে লাল হয়ে দোলছে আর দোলছে। দেখে যেন জিভে জল এসে যায়। মন চায় হাত দিয়ে ধরে মুখে নিয়ে খেতে। হ্যাঁ, এমনই লিচুর আবাদ হয়ে থাকে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে। যে লিচুর স্বাদ নেওয়ার জন্য রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার লোকজন ভিড় জমাচ্ছেন ওই গ্রামটিতে। এমনকি দেশের ভিভিআইপি’র ঘরেও পৌঁছে এই লিচু। যায় দেশের বাইরেও।  কিন্তু এ বছর ঝড়ো বাতাস, অতি বৃষ্টি, অসময়ে বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টিতে লিচুর ফলন অনেকটাই কম হয়েছে। এছাড়াও ঘন ঘন শিলাবৃষ্টিতে লিচুর অনেকাংশে ফেটে গেছে। এতে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর লিচু চাষিরা তেমন লাভবান হতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন তারা। তবে বাজারে উঠতে শুরু করেছে মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু। পুরোপুরি পাকতে লাগবে আরও সপ্তাহ খানেক। থাকবে সপ্তাহ দুয়েক। এরই মধ্যে শেষ হয়ে যাবে এখানকার লিচু। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন মঙ্গলবাড়িয়ায় আসছেন লিচু কেনার জন্য। বিক্রিও হচ্ছে চড়া দামে। প্রতি একশ লিচু বিক্রি হচ্ছে ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকায়। তবে এখানকার অধিকাংশ গাছই আগাম বিক্রি হয়ে যায়। কিছু গাছ পাইকাররা কিনে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করে থাকেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ব্রিটিশ আমলে এ গ্রামের জনৈক দারোগা সদূর চীন থেকে এই জাতের লিচু সর্বপ্রথম রোপণ করেন। এরপর থেকে এ লিচুর স্বাদ, গন্ধ, সুস্বাদু দেখে পুরো মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে লিচু চাষ। এ গ্রামের অনেকেই লিচু চাষে এখন স্বাবলম্বী। গ্রামের প্রায় শতাধিক লিচু চাষির সহস্রাধিক লিচু গাছ রয়েছে। এক কথায় বলতে গেলে, মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতেই কমবেশি লিচু গাছ রয়েছে। দিনদিন এর ব্যাপকতা বেড়েই চলছে।  মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের লিচুর সঠিক জাত জানা সম্ভব হয়নি। তবে গ্রামের নামানুসারে একে ‘মঙ্গলবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহি’ লিচু বলে দেশে খ্যাতি অর্জন করেছে। সরেজমিনে গিয়ে লিচু চাষি ও স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় গত বছরের তুলনায় এবছর লিচুর ফলন তেমন ভালো হয়নি। এ গ্রামে প্রতিবছর প্রায় অর্ধকোটি টাকার মতো লিচু বিক্রি হয়ে থাকে বলেও জানা গেছে।দীর্ঘদিন ধরে লিচু চাষ করে আসছেন মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের তৌহিদ মিয়া। যাকে সবাই লিচু তৌাহিদ ভাই নামেই চিনে। মানবজমিনকে তিনি বলেন, বাপ-দাদার সময় থেকে তিনি লিচু চাষের সাথে জড়িত। লিচু চাষ করে তিনি পরিবারের ভরণ-পোষণসহ আর্থিকভাবেও লাভবান। নিজের গাছ ছাড়াও তিনি প্রতিবছর আরও কয়েক চাষির গাছ কিনে থাকেন। এ বছর তাঁর নিজের ৮টি গাছসহ ৬০টি গাছে লিচু চাষ করেছেন। এতে তার প্রায় লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু শিলাবৃষ্টিতে ফলন কম হওয়ায় এবার লিচু চাষে লাভের অংশ কম হবে বলে এ প্রতিবেদককে জানান। এছাড়াও এবার রমজান মাসে লিচু পাকা শুরু হয়েছে। বাজারে রমজান মাসও অনেকটা প্রভাব পড়বে বলে তিনি জানান। মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি অফিসার ড. গৌর গোবিন্দ দাশ মানবজমিনকে জানান, এবার অতি বর্ষণ, ও অসময়ে বর্ষণ এবং শিলা বৃষ্টি কারণে লিচুর ফলন কিছুটা কম হয়েছে। লিচু গাছের প্রতি চাষিরা পর্যাপ্ত যত্ন নেয়া কিংবা কৃষি বিভাগ থেকে পর্যাপ্ত পরামর্শ দেয়ার কোন কমতি ছিলো না বলে তিনি জানান।

No comments

Powered by Blogger.