ইফতার পণ্যের দাম বেড়েছে দুই থেকে আড়াই গুণ

রমজান মাসে সাধারণত ইফতারের তালিকায় থাকে খেজুর, পিয়াজু, বেগুনি, ছোলা, মুড়ি, হালিম, জিলাপি ও বুন্দিয়া। এছাড়াও থাকে বিভিন্ন ধরনের ফল, চিঁড়া ও মুড়ি।
কিন্তু রমজানকে কেন্দ্র করে এসব পণ্যের বাজার বেশ উত্তপ্ত। দাম বেড়েছে হু হু করে। গত একবছরে দাম বেড়েছে দুই থেকে আড়াই গুণ। গতবার যে মূল্য ছিল এবার সেগুলো দ্বিগুণ দামে বিক্রি করতে দেখা গেছে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে। এর মধ্যে কোনো কোনো পণ্যের দাম বেড়েছে শতভাগ। তবে রাস্তা ও ফুটপাথ দখল করে ইফতারির খণ্ডকালীন দোকানগুলোতে ইফতারির দাম হোটেল রেস্তরাঁর চেয়ে কম। অবশ্য এখানেও দাম আগের চেয়ে একটু বেশি। আবার দাম ঠিক থাকলেও আকারে ছোট হয়েছে গতবারের চেয়ে। দাম বেড়ে যাওয়ায় দোকানিদের সামনেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ক্রেতারা। এ নিয়ে বিক্রেতারাও অস্বস্তিতে।
রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রমজান সংশ্লিষ্ট বেশির ভাগ পণ্যেরই দাম বেড়ে গেছে। বাজার মনিটরিং ও পণ্যমূল্য তদারকির অভাবে নিত্যপণ্যের বাজার টালমাটাল হচ্ছে বলে মনে করেন দোকানদাররা। তাদের মতে, স্বাভাবিক সময়ের বাজারের চেয়ে রমজান ঘিরে ক্ষেত্র বিশেষে ইফতার সামগ্রীর দাম ৫ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এছাড়া খেজুর, ফলসহ সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে।
রমজান মাসে সাধারণত বেশির ভাগ এলাকাতেই ইফতারের সময় খেজুর মুখে দিয়ে রোজা ভাঙেন রোজাদাররা। সেই খেজুরের দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। বাজারে ১০ কেজির খেজুরের কার্টনে ২০০ টাকা করে বেড়েছে। প্রতি কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। খেজুর বিভিন্ন ক্যাটাগরির আছে। সর্বনিম্ন ২০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত কেজি রয়েছে। তবে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা দরের খেজুরই বেশি কিনছেন ক্রেতারা।
কাওরান বাজারের খেজুর বিক্রেতা রহিম বলেন, ফরিদা খেজুরের কেজি ২৬০ টাকা। সৌদি আরবের মরিয়ম খেজুর ৪০০ টাকা। বরই খেজুর ১৪০ টাকা। এছাড়া বিভিন্ন খেজুরের দাম বিভিন্ন রকম। একেক দোকানদার একেক রকম বিক্রি করেন। যার কাছ থেকে যেমন নেয়া যায়। খেজুর কিনতে আসেন আবেদ খান বলেন, খেজুর ছাড়া ইফতার করি না। কিন্তু বাজার যে গরম। এসবে সরকারের নজর দেয়া উচিত।
ফলের দামও বেড়েছে। ১৮ কেজির আপেলের কার্টনে বেড়েছে ৩০০ টাকা করে। ১৪ কেজি মাল্টার কার্টন আগে ছিল ১ হাজার ৫৫০ টাকা। তা বেড়ে এখন হয়েছে ১ হাজার ৭০০ টাকা। আপেল ও মাল্টার দাম কেজিপ্রতি ২০ থেকে ২৫ টাকা বেড়েছে। তবে বেদানা ও আঙ্গুর আগের দামেই আছে।
কাওরান বাজার ফল বিক্রেতা আতিক বলেন, আফ্রিকান আপেল প্রতি কেজি ১৫০ টাকা থেকে বেড়ে ১৮০ টাকা হয়েছে। নাশপাতি ফল ২২০ টাকা থেকে বেড়ে ২৫০ টাকা হয়েছে। এছাড়া প্রায় সব ফলের দাম টুকটাক বেড়েছে।
কাওরান বাজারের কয়েকটি মুড়ি ও চিড়ার দোকান ঘুরে দেখা যায়, কেজি প্রতি মুড়ি ৬০ থেকে ৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। চিড়া বিক্রি হতে দেখা যায়, ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে। তারা জানান, মুড়ি গত কয়েক দিনে ১০ টাকা কেজি দরে বেড়েছে। আর যে চিড়া ৬৮ টাকা করে ছিল সেই চিড়া এখন ৭৫ টাকা দরে কিনতে হয়েছে তাদের।
সরজমিন দেখা গেছে, ইফতারির দোকানগুলোয় এলাকা ভেদে বেগুনি, পিয়াজু, সমুচা বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকা থেকে ১৫ টাকা পিস হিসেবে। অবশ্য এবার আইটেমগুলো আকারে কিছুটা ছোট হিসেবে দেখা গেছে। এছাড়া ডিমের চপ ১৫ থেকে ২০ টাকা, জালি কাবাব ২০ থেকে ২৫ টাকা, ভেজিটেবল রোল ৩০ টাকা, জিলাপি প্রতিকেজি ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া দইবড়া প্রতি কেজি ২৭৫ থেকে ৩০০ টাকা, হালিম ৫০ থেকে ৬০০, টানা পরোটা ৪০, কিমা পরোটা ৫০, চিকেন ললি ৬০-৭০, বিফ মিনি কাবাব ৫০-৬০, চিকেন সিংগার স্টিক ৪০, ছোলা প্রতিকেজি ২৫০-২৭০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া চিকেন স্টিক পিস ৭০ থেকে ৯০ টাকা, জালি কাবাব ২০ থেকে ৪৫ টাকা, বিফ স্টিক ৪০ থেকে ৬০ টাকা, হালিম (বাটির আকারভেদে) ৬০ থেকে ৩০০ টাকা। এছাড়া অন্যান্য উল্লেখযোগ্য খাবারের মধ্যে খাসির কাবাব প্রতি কেজি ৮০০, গরুর কাবাবের কেজি ৬০০ টাকা। খাসির রানের রোস্ট প্রতি পিস ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা, দেশি ছোট মুরগি রোস্ট ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, কবুতরের রোস্ট ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব আইটেম গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে এবার।
বিক্রেতারা জানান, রমজানে ছোলা, চিনি, ডাল, খেজুর, পেয়াজ, বেগুন ও ভোজ্যতেলসহ অন্য পণ্যেও মূল্য বেড়ে যাওয়ায় মূলত ইফতারির আইটেমগুলোর দাম বেড়েছে। এসব পণ্য আমরা যদি কম দামে কিনতে পারতাম তাহলে আমরাও কমে দিতে পারতাম। পণ্যভেদে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে বলে জানান তারা।
রাজধানীর অভিজাত শ্রেণির মানুষের ইফতারির বাজার হিসেবে খ্যাত বেইলি রোড। মন্ত্রিপাড়ার বাসিন্দা, ব্যাংকার, বিভিন্ন সরকারি আমলা ও কর্মকর্তা, বড় ব্যবসায়ী এবং শিল্পপতিরাই মূলত এখানকার ক্রেতা। তবে সাধারণ মানুষ আসে। এখানে রয়েছে বিখ্যাত ফখরুদ্দিনের ইফতার। এছাড়া রয়েছে স্কাইলার্ক, গোল্ডেন ফুড, আমেরিকান বার্গার, ক্যাপিটাল কনফেকশনারি, রেডকোর্ট, বুমার্স, মিস্টার বেকারস, কেএফসি, পিৎজা হাটসহ সব লোভনীয় সব ফাস্টফুডের দোকান। এসব বিভিন্ন খাবারের দোকানগুলোয় ইফতার সামগ্রী গতবারের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান ক্রেতারা। তারা জানান, মূলত সুন্দর পরিবেশ ও বাড়তি স্বাদের কারণে বেইলি রোডের ইফতারি কেনেন তারা।
বেইলি রোডে দোকান ভেদে রয়েছে দামের তারতম্য। এখানে দইবড়া প্রতিকেজি ২৭৫ থেকে ৩০০ টাকা, জিলাপি ২৫০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি, হালিম ২০০ থেকে ১০০০ টাকা, আলু চপ প্রতিপিস ৫-২০, বেগুনি ও পিয়াজু ১০-২০, ছোলা প্রতিকেজি ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বাছাই করে কেনার সময় নেই যাদের, তাদের জন্য রয়েছে ইফতার প্যাকেজ। ১২ পদের ইফতার প্যাকেজের দাম পড়বে ৩৫০ টাকা। রেস্তরাঁয় বসে দুই ধরনের সেট মেন্যু দিয়ে ইফতার করা যাবে। আম্রপালির জুস, শামি কাবাব, হালিম ও ফিরনিসহ ১৭ পদের সেট মেন্যুর দাম পড়বে ভ্যাট ছাড়া জনপ্রতি ৫৫০ টাকা। এসবের দাম বেড়েছে গতবারের চেয়ে দ্বিগুণ।

No comments

Powered by Blogger.