খালেদার সেহরি ইফতারে যা ছিল by মহিউদ্দিন অদুল

কারান্তরীণ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থতার কারণে রোজা বাদ দিতে চান না। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কারাগারে সেহরি খেয়ে তিনি এই রমজানের প্রথম রোজা রাখেন। তাকে সেহরিতে ভাত মাছ, মুরগির মাংস, সবজি ও ডাল দেয়া হয়। গতকাল বিকালে পুরোনো কারাগারের প্রধান ফটকে মানবজমিনকে এসব কথা জানান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, কেরাণীগঞ্জের সহকারী সার্জন ডা. মো. মাহমুদুল হাসান শুভ। তিনি এখন কারাগারে প্রায় প্রতিদিন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্যগত দিক দেখাশুনা করছেন। তার খাবারও তিনি দেখে দেন বলে জানা গেছে।
ডা. শুভ মানবজমিনকে বলেন, তার অবস্থা স্বাভাবিক রয়েছে। তিনি প্রায় সব রোজা রাখতে চান। রোজা ছাড়ার ইচ্ছা তার নেই। গতকাল তাকে সেহেরিতে যে ভাত, মাছ, মুরগির মাংস, সবজি ও ডাল দেয়া হয়েছে; সেখান থেকে অল্প খাবার খেয়ে তিনি রোজা রেখেছেন। তাকে দেয়া সব খাবার তিনি খাননি। রোজা রাখতে তার কোনো অসুবিধা নেই বলেও মন্তব্য করেন ডা. শুভ।
ইফতারির বিষয়ে তিনি বলেন, ইফতারের তালিকায় রয়েছে ছোলা, মুড়ি, খেজুর ও ফল থাকবে। তা খেয়েই তিনি রোজা ভাঙ্গাবেন।
কারাসূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাত ৩টায় খালেদা জিয়াকে সেহেরি খাওয়ার জন্য ঘুম থেকে জাগানো হয়। এরপর তিনি হাত-মুখ ধোয়ে খাওয়ার জন্য তৈরি হন। পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে তার কক্ষে দেখাশুনার দায়িত্বে রয়েছেন জ্যেষ্ঠ কারারক্ষী মাহফুজা। গত ১২ই মে থেকে ডেপুটি জেলার শিরিন সরকারি প্রশিক্ষণে দক্ষিণ কুরিয়ার থাকায় তার পরিবর্তে মাহফুজা ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে রয়েছেন। সঙ্গে রয়েছেন আরো কয়েজন নারী ও পুরুষ কারারক্ষী। তারা সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে খাবারের আয়োজন এনে দেন। এরপর তিনি সেহেরি খেয়ে রোজা রাখেন।
কারা অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন্স-সদর দপ্তর) মো. বজলুর রশিদ বলেন, জেল কোড অনুযায়ী একজন ডিভিশনপ্রাপ্ত ভিআইপির প্রাপ্য খাবার তাকে দেয়া হচ্ছে। সেহেরি ও ইফতারে তা খেয়ে তিনি রোজা রাখছেন।
ইফতারি নিয়ে কারাফটক থেকে ফেরত বিএনপি নেতাকর্মীরা: এদিকে গতকাল বিকালে চেয়ারপারসনের জন্য ইফতারির ডালা নিয়ে নাজিম উদ্দিন রোডের পুরোনো কারাগারে যান বিএনপির নেতাকর্মীরা। অনুমতি না থাকায় কারা ফটক থেকে তাদের ফেরত দেন কারাকর্তৃপক্ষ। সাক্ষাৎ করতে দেয়া হয়নি। ইফতারের ডালাও গ্রহণ করা হয়নি।
গতকাল বিকাল আড়াইটার দিকে বেশ কয়েকটি ইফতারের ডালা নিয়ে নাজিম উদ্দিন রোডে কারা ফটকের কাছে যান জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের অন্তত ১৫ নেত্রী। তাদের অধিকাংশের হাতেই বিভিন্ন রকমের ফলের ডালা। এ দলের নেতৃত্বে ছিলেন বিএনপির মহিলা দলের সধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ। প্রধান ফটকের আগেই তারা পুলিশি বাধার মুখে পড়েন। এরপর তারা প্রথমে নেত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সুযোগ চান। তা পাওয়া না গেলে তাদের নেয়া ফলমুলগুলো পৌঁছে দেয়ার অনুরোধ জানায়।
দায়িত্বরত প্রধান কারারক্ষী আল হাসান মোবাইল ফোনে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানায়। তাতে সম্মতি পাওয়া না গেলে তিনি তাদের মুখোমুখি হন। বলেন, আপনারা দলের নেতাকর্মী। আসতেই পারেন। কিন্তু তার পরিবারের কোনো সদস্য ছাড়া তার জন্য খাবার নেয়া যাবে না। তার নিরাপত্তার স্বার্থেই তা সম্ভব নয়। আর আপনারা যদি সাক্ষাৎ করতে চান তাহলে আগামী রোববার অনুমতির জন্য আবেদন করেন। অনুমতি পাওয়া গেলে দেখা করতে পারবেন।
মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের মা তিন মাসের বেশি সময় ধরে জেলে। আজ প্রথম রমজান। তিনি কী খাচ্ছেন জানি না। আমরা আমাদের মা বেগম খালেদা জিয়ার জন্য ইফতার সামগ্রী নিয়ে এসেছিলাম। সাক্ষাৎ করতে দেয়া না হলেও তা আমাদের মায়ের কাছে পৌঁছে দেয়া হোক। এ সময় একাধিক নেত্রী বলেন, একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী সাড়ে ৩৯টাকায় কী ইফতার করবেন। আমাদের ইফতার সামগ্রী পৌঁছে দিলে কী হয়। উল্লেখ্য, জেল কোড অনুযায়ী একজন ডিভিশনপ্রাপ্ত ভিআইপির ইফতারের জন্য বরাদ্দ সাড়ে ৩৯ টাকা।
এ সময় জেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি না পেয়ে ইফতার সামগ্রী নিয়ে ফিরে যান বিএনপি নেতাকর্মীরা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নূরে আলাপ সাফা, সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আখতার, ঢাকা উত্তর মহানগর বিএনপির সভানেত্রী পিয়ারা মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক আমেনা বেগম।
এরপর বিকাল সোয়া তিনটার দিকে একটি ভ্যানগাড়ি বোঝাই ইফতারের ডালা নিয়ে কারাগারে যান ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি ডা. ডন মো. সালাহ উদ্দিন ও বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী। তারাও পুলিশি বাধার মুখে পড়েন। কিছুক্ষণ চেষ্টা তদবির করে অবশেষে ভ্যানগাড়িসহ ফিরে যান তারাও। এ সময় সঙ্গে ছিলেন ঢাকা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল কবির পল, যুগ্ম সম্পাদক মো. মাসুদ পারভেজসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী।
উল্লেখ্য, গত ৮ই ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় রায়ে ৫ বছরের কারাদণ্ডের আদেশের পর থেকে ওই কারাগারে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এরপর থেকে বিগত ৩ মাস ১০ দিন ধরে তিনি কারান্তরীণ। গত বুধবার হাইকোর্টের আপিল বিভাগে এই মামলায় তার জামিন হলেও আরো বেশ কয়েকটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ফলে ঠিক কবে নাগাদ তার মুক্তি মিলবে তা নিশ্চিত নয়।

No comments

Powered by Blogger.