দুদকে যাননি বাচ্চু নথি দেননি মিজান

দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) হাজির হওয়ার জন্য আরো এক সপ্তাহ সময় পেলেন বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চু। গতকাল তার হাজির হওয়ার কথা থাকলেও অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে আসেননি তিনি। নতুন নোটিশে আগামী   ১৫ই মে তাকে দুদকে হাজির হতে বলা হয়েছে। অপরদিকে দুদকের অনুসন্ধান দলের কাছে নথিপত্র জমা দেয়ার কথা থাকলেও নির্দিষ্ট সময়ে তা জমা দেননি ডিআইজি মিজান। গতকাল আবদুল হাই বাচ্চুকে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির থাকতে তলবি নোটিশ পাঠিয়েছিলেন সংস্থার উপপরিচালক শামসুুল আলম। এ প্রসঙ্গে দুর্নীতি দম কমিশন সচিব মো. শামসুল আরেফিন বলেন, আব্দুল হাই বাচ্চু অসুস্থতার কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৫ই মে তার হাজিরার নতুন সময় দেয়া হয়েছে। সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার ঋণ কেলেঙ্কারি নিয়ে অভিযোগের মুখে থাকা বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান বাচ্চুকে গত ৬ই মার্চ সর্বশেষ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। অনিয়মের মাধ্যমে ২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখা থেকে ওই টাকা ঋণ দেয়ার অভিযোগ উঠলে তদন্তে নামে দুদক। প্রায় চার বছর পর ২০১৬ সালে রাজাধানীর তিনটি থানায় ১৫৬ জনকে আসামি করে ৫৬টি মামলা করে কমিশন। কিন্তু আসামিদের তালিকায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান বাচ্চু বা তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের কারও নাম না আসায় ওই তদন্ত প্রশ্নবিদ্ধ হয়। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করলে দুদক আবার উদ্যোগী হয়। এরপরই জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি আব্দুল হাই বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়। এদিকে আবদুল হাই বাচ্চুর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ নিয়েও দুদকের অনুসন্ধান চলছে। এর অংশ হিসেবে বাচ্চুর ভাই শেখ শাহরিয়ার পান্নার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য যাচাই করে দেখতে চেয়েছে দুদক। গত বছর বাচ্চু ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংকিং লেনেদেনের সব ধরনের নথিপত্র চেয়ে দুদকের পক্ষ থেকে উপপরিচালক শামসুল আলমের সই করা একটি চিঠি বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়েছিল।
অপরদিকে নথি দিয়ে সহযোগিতা না করায় মামলা হতে পারে পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে। এ কথা জানিয়েছেন দুদক সচিব শামসুল আরেফিন। গতকাল সাংবাদিকদের তিনি জানান, অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ নানা অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের পর  দুদকের অনুসন্ধান দলের কাছে সম্পদের কিছু নথিপত্র জমা দেয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা না দেয়ায় মামলার কথা ভাবছেন তারা। শামসুল আরেফিন বলেন, দুদকের অনুসন্ধানের জন্য কিছু নথি রোববারের মধ্যে দুদক-এ নিয়ে আসার কথা ছিল ডিআইজি মিজানের। কিন্তু তিনি জমা দেননি । এভাবে যদি তদন্তে অসহযোগিতার ধারা অব্যাহত থাকে তাহলে দুদক আইনের ১৯/৩ ধারা মোতাবেক তার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। গত ৩রা মে সকাল থেকে টানা সাড়ে সাত ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ডিআইজি মিজানকে। এর আগে ২৫শে এপ্রিল এক তলবি চিঠিতে তাকে ডাকা হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশের এ কর্মকর্তা নিজেকে সৎ দাবি করে বলেন, আমার ট্যাক্স ফাইলের বাইরে কোনো সম্পদ নেই।
ডিআইজি মিজান ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত জানুয়ারির শুরুর দিকে তাকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। দ্বিতীয় বিয়ে গোপন করতে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ত্রী মরিয়ম আক্তারকে গ্রেপ্তার করানোর অভিযোগ ওঠে ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনেরও অভিযোগ ওঠে। অভিযোগের প্রমাণ পায় পুলিশের তদন্ত কমিটি। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাকে প্রত্যাহার করা হয়।
পুলিশের এই কর্মকর্তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে  দুদক গত ৪ঠা জানুয়ারি থেকে অনুসন্ধানে নামে। সে সূত্রে জানা গেছে, চাকরিকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির মাধ্যমে প্রায় শত-কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন তিনি। তার নামে-বেনামে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট ও জমি রয়েছে। একাধিক ব্যাংক হিসাবে রয়েছে মোটা অঙ্কের টাকা। রয়েছে মেয়াদি আমানত। বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, ডিআইজি মিজানুর রহমান বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ পৌর এলাকার পাতারহাট-উলানিয়া সড়কের পাশে কালীকাপুর নামক স্থানে প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেছেন বিলাসবহুল দোতলা পাকা বাড়ি। পাকা বাউন্ডারিতে ঘেরা বাড়িটির নাম রাখা হয়েছে ‘আমেনা ভিলা’। দৃষ্টিনন্দন ও জাঁকজমকপূর্ণ হওয়ায় এলাকার মানুষ বাড়িটিকে ‘স্বর্ণকমল’ বলে উল্লেখ করেন।

No comments

Powered by Blogger.