মেয়ে শিশুদের ২০ ভাগ যৌন নির্যাতনের শিকার

গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশু শ্রমিকদের ৮৩ ভাগই মেয়ে শিশু। যাদের ২০ ভাগই যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে। আর গৃহকর্মীদের ৫৭ দশমিক ৩ ভাগ শারীরিক ও ৫৮ ভাগ মানসিক নির্যাতনের শিকার হন। এই নির্যাতন বন্ধে বিদ্যমান শ্রম আইন সংশোধন করা প্রয়োজন। গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট (এএসডি)’র গবেষণা প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনাকালে এ মতামত ব্যক্ত করা হয়। এএসডি’র নির্বাহী পরিচালক জামিল এইচ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে ‘পারসেপশন স্ট্যাডি অন চাইল্ড লেবার ইন ডমেস্টিক ওয়ার্ক’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন উত্থাপন করেন শিশু বিশেষজ্ঞ শরফুদ্দিন আহমেদ খান। আলোচনায় অংশ নেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মো. ইমান আলী, অসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. নিজামুল হক, শিশু অধিকার ফোরামের পরিচালক আব্দুস শহীদ মাহমুদ, বিলস-এর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, এএসডি উপ-নির্বাহী পরিচালক মো. মোজাম্মেল হক, এএসডি’র প্রজেক্ট ম্যানেজার ইউকেএম ফারহানা সুলতানা প্রমুখ। সেমিনারে উত্থাপিত গবেষণা প্রতিবেদনে ১৬ দফা সুপারিশ তুলে ধরে বলা হয়, অর্থনৈতিক কারণের পাশাপাশি নিরাপত্তার কারণেও বাবা মায়েরা শিশুদের শহরে কাজে পাঠিয়ে থাকে। তাই বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করা গেলে গৃহশ্রম বন্ধ করা যাবে না। আর বিদ্যমান শ্রম আইন ও গৃহকর্মী সুরক্ষা নীতিমালার মধ্যে সাংঘর্ষিক অবস্থার কারণে এই শ্রম বন্ধ করা যাচ্ছে না। শ্রম আইনে শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিষিদ্ধ করা হলেও নীতিমালায় ১২ বছরের শিশুদের গৃহকর্মে নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে। আবার আইনে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমের তালিকায় গৃহশ্রমকে রাখা হয়নি। ফলে বিদ্যমান আইন ও নীতিমালা সংশোধনী আনা প্রয়োজন।
সেমিনারে প্রধান অতিথি মো. ইমান আলী গৃহ শ্রমিকদের সুরক্ষায় সচেতনতা বাড়ানোর উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, আইন সংশোধনের পাশাপাশি জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর কাজটি করতে হবে। এক্ষেত্রে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে শিশু আইন প্রণয়ন করেছিলেন। বর্তমান সরকারও আন্তরিক। কিন্তু দেশে অনেক আইন থাকলেও সেই আইনের যথাযথ প্রয়োগ নেই। তাই আগে আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারি বেসরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে মনিটরিং জোরদার করার আহ্বান জানান তিনি। শিশু অধিকার ফোরামের আব্দুস শহীদ মাহমুদ বলেন, অনেক ক্ষেত্রে শিশুরা নিরাপত্তার কারণে শহরে গৃহকাজে আসে। যারা কোনো বেতন বা মজুরি পায় না। আবার অনেকে প্রতিশ্রুত বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত হয়। তারা নির্যাতনের শিকার হলেও তাদের আইনি সহায়তা দেয়ার কেউ নেই। তিনি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বাজেটে শিশুখাতের বরাদ্দের একটি অংশ শিশু অধিকার রক্ষায় কর্মরত সংগঠনগুলোকে দেয়ার প্রস্তাব করেন। বিলসের সুলতান উদ্দিন বলেন, শ্রম আইনে ১৪ বছরের নিচের শিশুদের ঝুঁঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু এই বিধান কার্যকর করার কেউ নেই। এ ধরনের অনেক বিধানই অকার্যকর। তিনি এ ব্যাপারে আদালতের স্বপ্রণোদিত নির্দেশনা প্রত্যাশা করেন। এছাড়া সেমিনারে গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুসহ অবহেলিত শিশুদের সামগ্রিক উন্নয়ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিদ্যমান আইন ও নীতিমালার পূর্ণ বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়। সর্বোপরি শিশু হত্যা নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।

No comments

Powered by Blogger.