মন্ত্রী-কন্যা মুক্ত যখন

তিনি ভারতের কর্নাটক রাজ্যের এক মন্ত্রীর কন্যা। বয়স ২৬ বছর। ভালবাসেন এক যুবককে। কিন্তু তার সঙ্গে তাকে বিয়ে না দিয়ে পিতামাতা ও আত্মীয়রা তাকে জোর করে অন্য এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হন ওই মন্ত্রী-কন্যা। এক পর্যায়ে তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। আশ্রয় নেন আদালতের। সোমার এ বিষয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে। তাতে বিচারকরা ওই যুবতীকে তার ইচ্ছামতো সিদ্ধান্ত নেয়ার অনুমতি দিয়েছেন। বলেছেন, আপনি যেহেতু প্রাপ্ত বয়স্কা তাই নিজের ইচ্ছামতো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন আপনি। ওই বিয়ে থেকে মুক্তি পেতে পারেন। চাইলে পিতামাতার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারেন। নাটকীয় এ সিদ্ধান্তকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে ভারতের মিডিয়া। এতে কর্নাটকের ওই মন্ত্রীর পদবী বা তার নাম প্রকাশ করা হয় নি। তবে ওই যুবতীকে শুধু ইংরেজি অক্ষর ‘এক্স’ দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, প্রেমিকের সঙ্গে বিয়ে না দিয়ে নির্যাতন করা হয় এক্স’কে। এরপর তাকে জোর করে অন্য এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে দেয়া হয়। ফলে ২০ দিন আগে কর্নাটকের গুলবারগায় পিতামাতার বাড়ি থেকে পালান তিনি। তার আশ্রয় হয় দিল্লি কমিশন ফর ওমেন। তাকে দিল্লি পুলিশ নিরাপত্তা দেয়। দিল্লি গিয়ে আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংয়ের সহায়তা নেন তিনি। সোমবার এ নিয়ে আবেদনের শুনানিতে গঠিতে বেঞ্চে উপস্থিত ছিলেন ভারতের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র, বিচারপতি এ এম খানউইলকার এবং ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। শুনানি শেষে আদালত তার রায়ে বলেন, আপনি প্রাপ্ত বয়স্কা। যেখানে খুশি আপনি যেতে পারেন। আপনার যা খুশি তা-ই আপনি করতে পারেন। এ সময় এক্স নামের ওই যুবতী আইনজীবীর মাধ্যমে জানান, তিনি ব্যাঙ্গালুরুতে ফিরে যেতে চান। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করতে চান। এক্ষেত্রে তার ভয়, পিতামাতা ও তাকে যার সঙ্গে বিয়ে দেয়া হয়েছে তারা প্রতিশোধ নিতে পারে। আইনজীবী জয়সিং বলেন, তার মায়ের সমর্থন নিয়ে তারই ভাই তাকে ধর্ষণের হুমকি দিয়েছে। পিতামাতার বা শ্বশুরপক্ষের এমন কোনো নৃশংস আচরণের শিকার হতে পারেন উল্লেখ করে আদালতের কাছে তার জন্য নিরাপত্তা চাওয়া হয়। জবাবে আদালত বলেন, এই যুবতী যেখানে খুশি যেতে পারেন। তার চলার পথে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারবেন না তার পিতামাতা বা পরিবারের কোনো সদস্য, স্বামী বা তার পরিবারের কোন সদস্য। ওদিকে ওই যুবতীর পিতামাতার পক্ষে আদালতে উপস্থিত হন সিনিয়র আইনজীবী বাসাবা পাতিল। তিনি আদালতকে বলেন, ওই যুবতীর বিরুদ্ধে কোনো ক্ষতিকর ব্যবস্থা নেয়া হবে না পিতামাতা বা অন্য পরিবারের পক্ষ থেকে। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অন্যান্য সনদ সহ সমস্ত জিনিসপত্র তার কাছে হস্তান্তর করা হবে। তার জীবনে কোনো হস্তক্ষেপ করবে না পিতামাতা। এ সময় এডভোকেট অন রেকর্ড সুনীল ফার্নান্দেজের মাধ্যমে তার কাছে সব রকম ডকুমেন্ট ফেরত দিতে তার পিতামাতাকে নির্দেশ দেন আদালত। শুনানির এক পর্যায়ে মন্ত্রী কন্যা এক্স-এর আইনজীবী আদালতের কাছে যুুক্তি তুলে ধরে বলেন, যেহেতু অসম্মতিতে তাকে বিয়ে দেয়া হয়েছিল তাই ওই বিয়েকে বাতিল ঘোষণা করতে হবে সুপ্রিম কোর্টের। এর জবাবে আদালত বলেন, যদি বিয়ে বাতিল করতে চান তাহলে ওই যুবতী আদালতে যেতে পারেন। প্রাথমিক প্রক্রিয়া অবলম্বন ছাড়া তার বিয়েকে বাতিল ঘোষণা করতে পারে না আদালত। এ সময় এক্স-এর আইনজীবী আদালতে জানান, যেহেতু এক্স-এর পিতা একজন মন্ত্রী, তার রয়েছে যথেষ্ট প্রভাব। এ জন্য নিজের নিরাপত্তা নিয়ে সন্দিহান তিনি। এরও জবাব দেন আদালত। বলা হয়, যদি তিনি এমন কোনো আচরণের শিকার হন তাহলে তিনি অবাধে পুলিশের সহকারী কমিশনারের কাছে যেতে পারেন। তারাই তার নিরাপত্তার জন্য যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নেবেন। মন্ত্রী-কন্যা অভিযোগ করেন, তাকে জোর করে বিয়ে দেয়ার জন্য ১৪ই মার্চ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন তার পিতামাতা ও ভাই। এ নিয়ে তিনি পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছিলেন। তা সত্ত্বেও তাকে জোর করে বিয়ে দেয়া হয়েছে। এমন একজনের সঙ্গে তাকে বিয়ে দেয়া হয়েছে, যাকে তিনি ভালবাসেন না।

No comments

Powered by Blogger.