আইজিপি কমপ্লেইন সেল by ১০০৭ অভিযোগ by আল-আমিন

আফরোজা বেগম। মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানা এলাকার বাসিন্দা। তিনি ৪ঠা জানুয়ারি ঢাকার ফুলবাড়িয়ার পুলিশ সদর দপ্তরের আইজিপি কমপ্লেইন সেলে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। এতে বলা হয়েছে, তার ১ একর চাষাবাদের জমি রয়েছে। জমিটি স্থানীয় প্রভাবশালী এক ব্যক্তি দখলের চেষ্টা করছে। আর এতে সায় জোগাচ্ছে থানা পুলিশের এএসআই সাদেকুর রহমান। তাদের এই অপকর্মে তিনি ভীত। তার সেই সম্বলটি জমিখেকোর হাত থেকে রক্ষার জন্য তিনি সরাসরি পুলিশ সদর দপ্তরে গিয়ে ‘আইজিপি কমপ্লেইন সেলে’ অভিযোগ দাখিল করেছেন। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশের বিরুদ্ধে এমন ১০০৭টি অভিযোগ জমা পড়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
অভিযোগের মধ্যে রয়েছে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ, অবৈধভাবে টাকা আদায়, মিথ্যা মাদক মামলায় আসামি করা, মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়, ফুটপাথে চাঁদাবাজি, জমি দখল, প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীকে মামলায় আসামি করা, প্রতারণা ইত্যাদি। এসব বিষয়ে তদন্ত করার জন্য পুলিশ সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে একটি তদন্তকারী কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি মাঠ পর্যায়ে এসব বিষয়ে তদন্ত করছে। তদন্তকারী দল প্রত্যেকটি অভিযোগ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করছে। ভিকটিম ও যে পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদের উভয়ের বক্তব্য শুনছেন। ‘আইজিপি কমপ্লেইন’ নামে এই সেলটিতে মোবাইল ফোন, ই-মেইলে বা কুরিয়ার সার্ভিস ও ডাকযোগে অভিযোগ পাঠানো যাবে। আবার যদি কোন ভুক্তভোগী সরাসরি দরখাস্ত করে অভিযোগ দিতে চান তাহলে তিনি তার দরখাস্ত নিয়ে ঢাকার ফুলবাড়িয়ায় পুলিশের সদর দপ্তরে অফিস চলাকালে গিয়ে জমা দিতে পারবেন। ভুক্তভোগীর আবেদন গ্রহণ করার জন্য পুলিশ সদর দপ্তরে ২ নম্বর ভবনের নিচতলায় একটি কক্ষ খোলা হয়েছে। সেখানে সার্বক্ষণিক তিনজন পুলিশ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন। কোনো ভিকটিম যদি ইচ্ছা করেন তাহলে তিনি তার নাম গোপন রাখতে পারবেন। সেলটির তত্ত্বাবধান করছেন পুলিশ সদর দপ্তরের ডিসিপ্লিইন অ্যান্ড প্রফেশনালর্স স্টান্ডার্ড (ডিঅ্যান্ডপিএস) শাখা। একজন এডিশনাল ডিআইজি সেলের প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৭ সালের ১৪ই নভেম্বর পুলিশ সদর দপ্তরের এক অনুষ্ঠানে পুলিশের তৎকালীন আইজি একেএম শহীদুল হক সেলটি উদ্বোধন করেন। এই সেলটিতে শুধু পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রহণের জন্য খোলা হয়েছে। এ বিষয়ে সেলটির প্রধান সমন্বয়কারী পুলিশ সদর দপ্তরের এডিশনাল ডিআইজি ডিঅ্যান্ডপিএস মো. রেজাউল হক বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগগুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। পুলিশের সব কাজের স্বচ্ছতা বিধান ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণের আরও বেশি কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার জন্য এই সেলটি খোলা হয়েছে। এতে পুলিশের পেশাদারি বাড়বে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এই সেলটি ছিল আগে সিকিউরিটি সেল। বিষয়টি সাধারণ মানুষ তেমন বুঝত না। মাসে বা বছরে অভিযোগও আসতো কম। সেলটি জনমুখী করার জন্য একে ‘আইজিপি কমপ্লেইন’ সেল বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ভুক্তভোগীরা সরাসরি, কুরিয়ার বা ডাকযোগে আইজিপি কমপ্লেইন সেলের পুলিশ সদর দপ্তরের ঠিকানা চিঠি পাঠাতে পারেন। অথবা যে কেউ সরাসরি এই ০১৭৬৯৬৯৩৫৩৫ ও ০১৭৬৯৬৯৩৫৩৬ নম্বরে ফোন করতে পারেন। আবার পড়সঢ়ষধরহ@ঢ়ড়ষরপব.মড়া.নফ ঠিকানায় ই-মেইল করতে পারেন। আবার কোন ভুক্তভোগী যদি সরাসরি দরখাস্ত করতে চান তাহলে ঢাকার ফুলবাড়িয়ায় পুলিশ সদর দপ্তরের আইজিপি কমপ্লেইন সেলে দরখাস্ত জমা দিতে পারবেন। ভুক্তভোগীর নিরাপত্তার স্বার্থে এবং নির্মোহভাবে তদন্তের স্বার্থে পুলিশ আবেদনকারীর পরিচয় গোপন রাখবে। সূত্রে জানা গেছে, সেলটি চালু হওয়ার পর গত চার মাস ১৭ দিনে ১০০৭টি অভিযোগ জমা পড়েছে। তারমধ্যে ই-মেইলে ৪৭৮টি, মোবাইল ফোনে ১৩৯টি ও চিঠিতে ৩৯০টি  অভিযোগ করা হয়েছে। যে ৩৯০ জন সরাসরি চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন তার মধ্যে ১৬২ জন হচ্ছেন নারী। সেলের অভিযোগের তদন্তের জন্য একজন পরিদর্শকের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি দল মাঠে কাজ করছে। পরে পুলিশ তার নিজস্ব সোর্স দিয়ে বিষয়গুলো তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে। তবে কেউ যাতে কোনো হয়রানির শিকার না হন এজন্য পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষভাবে খেলায় রাখা হচ্ছে। সেলে দায়িত্ব পালনকারী এসআই মিনহাজুল ইসলাম জানান, এই সেলে অনেক ভিকটিম নির্বিঘ্নে অভিযোগ করছেন। অনেকেই ফোন দিয়ে বিষয়টি খোলাসাভাবে জানতে চান। আমরা ভিকটিমকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি। সূত্র জানায়, গত বছরের ১০ই ডিসেম্বর দারুস সালামে মাজার রোডের বাসিন্দা তোফাজ্জল হোসেন নামে এক ব্যক্তি পুলিশ সদর দপ্তরে একটি দরখাস্ত জমা দিয়েছেন। সেই দরখাস্তে তিনি অভিযোগ করেছেন যে, স্থানীয় কিছু বখাটে যুবককে দিয়ে থানা পুলিশের সদস্যরা মাজার রোড এলাকায় মাদক ব্যবসা করে যাচ্ছেন। এতে সেখানে ভাসমান লোকের আনাগোনা বাড়ছে। এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিঘ্ন ঘটছে। দারুস সালাম থানার পুলিশের যে সদস্যরা এ অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আবেদন করেন। চলতি বছরের ২০শে জানুয়ারি ভাষানটেক থানার বাসিন্দা সোহরাব আলী নামে এক ব্যবসায়ী ওই সেলে একটি অভিযোগ করেছেন। চিঠি দিয়ে তিনি দাবি করেছেন, ভাষানটেকের ডি-ব্লকে তিনি একটি বাড়ি নির্মাণ করছেন। থানা পুলিশের এক কর্মকর্তা তার কাছে চাঁদা দাবি করেছেন। তিনি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পুলিশের আইজির প্রতি আহ্বান জানান।

No comments

Powered by Blogger.