এমপিদের ক্ষমতা খর্ব করতে আচরণবিধি সংশোধন প্রয়োজন - সিইসি

সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে এমপিদের ক্ষমতা খর্ব করা প্রয়োজন মনে করছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা। গতকাল প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআইবি)-এ  সাংবাদিকদের এক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন করলে আচরণবিধি সংস্কার করতে হবে। এবিষয়ে অবশ্যই ইসি ভেবে দেখবে। নির্বাচনের সময় সংসদ বহাল থাকলে আচরণবিধিতে কিছু সংযোজন করে ইসি এমপিদের ক্ষমতার জায়গা খর্ব করবে কিনা- এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, এটা ভালো প্রশ্ন। এটা অবশ্যই চিন্তা করা দরকার। তাদের রেখে নির্বাচন করতে হলে আচরণবিধিতে কিছু পরিবর্তন আনা দরকার। রাজনৈতিক দলে অনাস্থা দূর করতে ইসি কি কার্যকর ভূমিকা পালন করবে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, রাজনৈতিক দলের কমিশনের নিরপেক্ষতার ব্যাপারে কথাবার্তা কম বলছে। তারা রাজনৈতিক ব্যাপারে তাদের যে ইস্যু আছে সেটা নিয়েই ভাবে। কি ধরনের সরকার হবে, তাদের মামলা মোকদ্দমা কি হবে- এসব নিয়ে ভাবে। অনাস্থার বিষয়টা আসে না। সেটা যদি আসে তবে আমরা তা চিহ্নিত করব। সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন হলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কীভাবে সম্ভব-এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, কিছু কিছু জিনিস আছে নির্বাচন কমিশনের কিছু করার নেই। সরকারের কাঠামো কেমন হবে, নির্বাচনের সময় সরকার কিরকম- এগুলো সম্পূর্ণ সরকারের বিষয়। নির্বাচন কমিশনের বিষয় না। কিরকম সরকার হবে না হবে সেটা নিয়ে আমরা কিছু করতে পারবো না। সংসদ নির্বাচনে ইসি ও মিডিয়ার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কি? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠান করাটাই বড় চ্যালেঞ্জ। দশম সংসদ নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি রোধ করতে ইসি’র কি ভূমিকা থাকবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা দুঃখজনক হবে যদি আগের মতো হয়। সব দল নির্বাচনে না আসলে সে নির্বাচন ভালো হয় না। আমরা প্রত্যাশা করতে পারি। এক্ষেত্রে মিডিয়ার ভূমিকা আছে। এসময় তিনি আরো বলেন, আমরা নির্বাচন নিরপেক্ষভাবে করব সে ব্যাপারে আমাদের দৃঢ়তা আছে। কিন্তু সব দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাটা জরুরি। আমি এখনো আশা করি সব দল অংশগ্রহণ করবে। সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে ইসি’র প্রস্তুতি সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা বারবার বলেছি ইভিএম পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করতে পারি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের প্রস্তুতি আমাদের এখনো নেই। তবে ইভিএমের বিষয়টি আমরা চেষ্টা করে যাবো। ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে ভোট দেয়া কষ্টকর। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সেটা যেন কমিয়ে আনতে পারি সে চেষ্টা করে যাবো। কেএম নূরুল হুদা বলেন, রংপুরে আমরা চেষ্টা করেছি। গাজীপুর ও খুলনায় আংশিক যতটা পারি সেখানেও আমরা মানুষের কাছে নিয়ে যাবো। সেটা যদি গ্রহণযোগ্য হয় তখন ধীরে ধীরে এটাকে সংস্কার করা হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত তো হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তি না থাকলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে আংশিকভাবে ইভিএম ব্যবহার হতে পারে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, যদি মেশিনগুলো ভালোভাবে কাজ করে, যারা নির্বাচন করবেন তাদের যদি বিশ্বাস জন্মে ইভিএম গ্রহণযোগ্য হবে, যারা ভোট দেবেন তারা শিখতে পারেন এবং যারা ভোটগ্রহণ করবেন তারা যদি প্রশিক্ষিত হন। এই সবগুলোর সমন্বয় হলে তারপর দেখা যাবে। স্টেকহোল্ডাররা অর্থাৎ রাজনৈতিক দলগুলো যদি সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নেন কেবলমাত্র তখনই ইভিএম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যবহার করা সম্ভব। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবুয়াল হোসেন বলেন, নির্বাচনের আগে সাংবাদিকদের এ প্রশিক্ষণ অত্যন্ত সময়োপযোগী। নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রশাসন, পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেটসহ প্রশাসনযন্ত্রের সঙ্গে সাংবাদিকদেরও দায়িত্ব আছে। সঠিক প্রতিবেদনের মাধ্যমে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন সাংবাদিকরা সহযোগিতা করতে পারে। পিআইবি’র মহাপরিচালক শাহ আলমগীর সভাপ্রধানের বক্তব্যে বলেন, সাংবাদিকরা রাষ্ট্রের ওয়াচডগ হিসেবে কাজ করে। সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দল না থাকলে গণমাধ্যমকেই সে ভূমিকা পালন করতে হয়। গণমাধ্যম, গণতন্ত্র এবং রাষ্ট্রকে একসঙ্গেই চলতে হয়। তিন দিনব্যাপী ‘নির্বাচন বিষয়ক রিপোর্টিং’ প্রশিক্ষণের শেষ দিনে প্রথম শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান ড. মো. শাহজাহান, ইসি’র সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী, যুগ্ম সচিব এসএম আসাদুজ্জামান, সিনিয়র সাংবাদিক আশীষ সৈকত প্রশিক্ষক হিসেবে অংশ নেন।

No comments

Powered by Blogger.