শাবি অধ্যাপকের সঙ্গে প্রতারণা এক নাইজেরিয়ান আটক

সিলেটে এক অধ্যাপকের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে নাইজেরিয়ান নাগরিক ডোনাটস এমেকা ওনিজিউয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সিলেট মহানগরের পুলিশ মাধবপুরের একটি রেস্টুরেন্ট থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। সিলেট থেকে পালিয়ে ঢাকায় যাওয়ার মুহূর্তে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানায় শাহপরাণ থানা পুলিশ। পুলিশ জানায়- ওই নাইজেরিয়ান নাগরিক আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্রের সদস্য। সে এবং তার চক্রের সদস্যরা আমেরিকার একটি সেমিনারে যোগদানের কথা বলে ওই অধ্যাপকের কাছ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। পরে ওই অধ্যাপককে একটি জাল ডলার মেশিন সমঝে দিয়ে সে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। গতকাল শুক্রবার দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার পরিতোষ ঘোষ। পুলিশ জানায়- যুক্তরাষ্ট্রে একটি সেমিনারে অংশ নেয়ার জন্য শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফারুক মিয়ার কাছে গত ফেব্রুয়ারি মাসে একটি ই-মেইল আসে। ওই ই-মেইলে ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন সেক্সুয়্যাল ট্রান্সমিটেড ডিজিস অ্যান্ড ইনফেকশন’ শীর্ষক একটি সেমিনারে অংশ নিতে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেমিনারে অংশ নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে এবং প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে ১৪ই ফেব্রুয়ারি তিনি ফিরতি মেইল পাঠান। এরপর কনফারেন্সে অংশ নেয়ার জন্য তাকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি হোটেলে ১০ দিনের রুম বুকিং দিয়ে বুকিং স্লিপ পাঠাতে বলা হয়। এ ব্যাপারে ড. ফারুক আয়োজকদের সহযোগিতা চাইলে রুম বুকিং বাবদ ৫০০ ডলার চায় তারা। ওই টাকা বেলজিয়ামে অবস্থানরত তার এক ছাত্রের মাধ্যমে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন মানি ট্রান্সফারের মাধ্যমে পরিশোধ করেন ওই অধ্যাপক। এরপর গত ১লা মার্চ একটি ই-মেইলে অধ্যাপক ড. ফারুক মিয়াকে জানানো হয়, ১৯-২১শে মার্চের জন্য তিনি আমেরিকার ভিসা পেয়ে যাবেন। ভিসা দেয়ার বিষয়টি ইউএসএ ইমিগ্রেশন সার্ভিস কনফার্ম করেছে বলেও আশ্বস্ত করা হয় তাকে। এজন্য তাকে পাসপোর্টের ফটোকপি, ভিসা ফি ১৬০ ডলার, ইন্স্যুরেন্স ফি ৯৫ ডলার এবং ফেরতযোগ্য জামানত ১৩৯৯ ডলার পরিশোধ করতে বলা হয়। জামানতের ১৩৯৯ ডলার সেমিনারে অংশ নিয়ে ফেরার সময় ওয়াশিংটন বিমানবন্দরে তাকে ফেরত দেয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয় ই-মেইলে। ওই ই-মেইল পাওয়ার পর অধ্যাপক ফারুক বেলজিয়ামে অবস্থানরত তার এক বন্ধুর মাধ্যমে ১৬৫৪ ডলার করে দুবারে ৩৩০৮ ডলার পাঠান তাদের দেয়া ব্যাংক হিসেবে। এরপর এক ই-মেইলে কনফারেন্স প্যাকেজ, ভিসা অ্যাপ্রোভাল লেটার, ইউএস অ্যাম্বাসি অ্যাপয়নমেন্ট লেটার ও বিমান টিকিটসহ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট হ্যান্ডেলিং বাবদ ১৮০০ ডলার পাঠাতে বলা হয়। ওই টাকাও ফেরতযোগ্য বলে উল্লেখ করা হয় ই-মেইলে। ২৫শে মার্চ ওই ডলারের সমমূল্যের টাকা তিনি ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করেন। ২৭শে মার্চ ঢাকাস্থ হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংলগ্ন একটি পেট্রেল পাম্পের কাছে অধ্যাপক ফারুকের সঙ্গে দেখা করেন এক আফ্রিকান নাগরিক। সে তার গাড়িতে একটি লাগেজ তুলে দেয় এবং সেটি সিলেট নিয়ে এসে সেমিনার আয়োজক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলে। লাগেজটি সিলেটে নিয়ে এসে ভেতরে ডিজিটাল লক করা একটি বাক্স দেখতে পান তিনি। কিন্তু লক করা থাকায় তিনি তা খুলতে ব্যর্থ হন। পরদিন ২৮শে মার্চ বিকালে আয়োজক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি তাকে লাগেজটি নিয়ে গাড়িতে করে নগরীর উপশহরস্থ হোটেল রোজভিউর কাছে একা আসতে বলেন। সেখানে গিয়ে একজন নাইজেরিয়ানকে দেখতে পান অধ্যাপক ফারুক। নাইজেরিয়ান ব্যক্তিটি গাড়িতে ওঠে তাকে পার্শ্ববর্তী একটি স্কুলের মাঠে নিয়ে যায়। সেখানে লক করা বাক্সটি খুলে জাল ডলার তৈরির একটি মেশিন দেখায়। এসময় সে দুটি একশত ডলারের জাল নোট তৈরি করেও দেখায়। ওই অধ্যাপকের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, এসময় তিনি জাল নোট তৈরির মেশিন কেন তাকে দিতে চাইছে তা জানতে চান। এই মেশিন ফেরত নিয়ে সেমিনারে অংশ নেয়ার কাগজপত্র দিতে বললে তাকে গাড়িতে বসিয়ে রেখে হোটেলের দিকে যায় ওই নাইজেরিয়ান। এর কিছুক্ষণ পর সে মোবাইল বন্ধ করে দিলে তিনি প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে পুলিশকে জানান। তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের মাধবপুরস্থ হাইওয়ে ইন রেস্টুরেন্ট থেকে তাকে আটক করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, আটক নাইজেরিয়ান নাগরিককে নির্ধারিত মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.