একের পর এক পরাজয়ে দিশেহারা সৌদি আরব বিপজ্জনক খেলায় মেতেছে

সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান গত সপ্তাহে ওয়াশিংটন সফরকালে ইরানকে মধ্যপ্রাচ্যের জন্য হুমকি ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী হিসেবে তুলে ধরার জন্য ব্যাপক চেষ্টা চালিয়েছেন।
এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান মার্কিন দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দেয়া সাক্ষাতকারে আরো কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইরানের ওপর চাপ বাড়ানোর জন্য পাশ্চাত্যের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, "ইরানের ওপর আরো নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে আমরা সামরিক সংঘাত এড়াতে পারি। যদি এতেও আমরা সফল না হই তাহলে আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে সৌদি আরব ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ করতে পারে।"
সৌদি যুবরাজের এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বাহরাম কাসেমি বলেছেন, অপরিণত সৌদি যুবরাজের অপরিপক্ক মন্তব্য মধ্যপ্রাচ্যে দেশটির অপরাধযজ্ঞের বিষয়ে জনমতকে বিভ্রান্ত করতে পারবে না। এই তরুণ যুবরাজ জানেই না যে, যুদ্ধ কী অথবা সে ইতিহাস পড়ে নি।" সৌদি যুবরাজ ইরানের শক্তি উপলব্ধি করতে পারে নি বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইয়েমেন যুদ্ধে লজ্জাজনক পরাজয় ঢাকার জন্য সৌদি আরব পাগলের মতো অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছে। সৌদি আরবের অভ্যন্তরে ইয়েমেনি যোদ্ধাদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা এবং ইয়েমেনিরা নিজেদের সীমান্তের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেয়ায় সৌদি আরব কার্যত হতাশ হয়ে পড়েছে। এখন সৌদি কর্মকর্তাদের উচিত নিজেদের পরাজয় স্বীকার করা। এই পরাজয় সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের জন্যও সতর্ক সংকেত যাতে তারা ইয়েমেন যুদ্ধ থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখে।
খ্যাতনামা আরব রাজনৈতিক বিশ্লেষক আব্দুল বারি আতাওয়ান বলেছেন, "ইয়েমেন যুদ্ধ সৌদি আরবের জন্য আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি ছাড়া আর কিছুই বয়ে আনেনি। এ ছাড়া, এটাও প্রমাণিত হয়েছে যে, সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট মধ্যপ্রাচ্যে ইরানকে মোকাবেলায় ব্যর্থ। এসব লজ্জাজনক পরাজয়ের পর সৌদি আরব এখন বিপদজ্জনক খেলা শুরু করেছে।"
বাস্তবতা হচ্ছে, সৌদি আরব তার সাম্রাজ্য বিস্তার এবং দখলদার ইসরাইলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য মধ্যপ্রাচ্যে একের পর এক প্রক্সি কিংবা সরাসরি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু করেছে। কিন্তু কোথাও বিজয়ের মুখ দেখেনি। ফিলিস্তিনের বিশেষজ্ঞ ও লেখক মুহাম্মদ ফার্স জারাদাত মনে করেন, মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার উপস্থিতি জোরদার করার জন্য সৌদি আরব যে বিপদজ্জনক খেলায় মেতেছে আজ হোক কাল হোক তা এক সময় সেই বিপদ রিয়াদের শাসকগোষ্ঠীকেই গ্রাস করবে।
বর্তমানে এ অঞ্চলের জাতিগুলোর কাছে আমেরিকার অশুভ লক্ষ্য উদ্দেশ্যের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেছে এবং এটাও প্রমাণিত হয়েছে যে, সৌদি আরব ফিলিস্তিন ও লেবাননের প্রতিরোধ শক্তিগুলোকে ধ্বংস করার জন্য আমেরিকার হুকুমের গোলামী করছে। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে এবং সৌদি আরব মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিকে নিজেদের অনুকূলে আনতে পারবে না। কিছু অস্ত্র কিনে রিয়াদের আঞ্চলিক পরাশক্তি হওয়ার স্বপ্ন কখনই বাস্তবায়িত হবে না।

No comments

Powered by Blogger.