কঠিন চেষ্টায় সফলতা আসবেই by সাব্বিন হাসান

ভিক্টোরিয়া নামেই বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত। পুরো নাম ভিক্টোরিয়া ক্যারোলিন বেকহ্যাম। জন্ম ১৭ এপ্রিল ১৯৭৪। জন্মস্থান হারলো, ইংল্যান্ড। নিজের প্রথম পরিচিতি তৈরি করেন স্পাইস গার্ল হিসেবে। এরপর একে একে ব্যবসায়ী, ফ্যাশন ডিজাইনার, মডেল এবং গায়ক- সব আদলেই ছড়িয়েছেন তিনি প্রতিভা আর যোগ্যতা। নিজের প্রথম অ্যালবাম ‘আউট অব ইয়োর মাউন্ড’ ইউকে একক চার্টে দ্বিতীয় স্থানে জায়গা করে নেয়। গত এক দশক জুড়ে ভিক্টোরিয়া বিশ্ব অঙ্গনে আন্তর্জাতিক স্টাইল আইকন এবং ফ্যাশন ডিজাইনার হয়ে দাপুটে অবস্থান তৈরি করেন। ২০০৮ সালে ‘লেবেল’ ব্র্যান্ড নিয়ে কাজ শুরু করেন। ২০১১ সালে একটু স্বল্প দামের ব্র্যান্ড ‘ডিফিউশন’ উন্মোচন করেন। মা জ্যাকুলিন ডোরেন। বাবা অ্যান্থনি উইলিয়াম অ্যাডামস। পারিবারিকভাবে ইলেকট্রুনিক ব্যবসা সফল একটি পরিবারেই বেড়ে ওঠেন ভিক্টোরিয়া। ১৯৮০ সালে ফেম চলচ্চিত্র দেখে সঙ্গীত অঙ্গনে ক্যারিয়ার গড়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ১৯৯১ সালে লেনি থিয়েটার আর্টস স্কুলে ডান্স অ্যান্ড মডেলিং নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। এরপরের তো শুধুই খ্যাতি আর ইতিহাস তৈরির পরিক্রমা রচনা করেছেন ভিক্টোরিয়া। বিয়ে করেন বিখ্যাত ফুটবলার ডেভিড বেকহ্যামকে। চার সন্তানের মা ভিক্টোরিয়া। বহুল আলোচিত এ দম্পতির সম্পদের পরিমাণ ৫০ কোটি ইউরো ছাড়িয়ে গেছে। প্রজেক্ট রানওয়ে, জার্মানি’স টপ মডেল এবং আমেরিকান আইডল- এ তিনটি জনপ্রিয় শোতে অতিথি বিচারক হিসেবেও তিনি দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করেন। তার ক্যারিয়ারের শুরুটা গায়িকা হিসেবে। এরপর ডিজাইনার। একাধিক পরিচয়ে নিজেকে পরিচিত করেছেন ভিক্টোরিয়া বেকহ্যাম। বিশ্বের ফ্যাশন দুনিয়ায় যারা খোঁজখবর রাখেন, ভিক্টোরিয়া বেকহ্যাম তাদের কাছে অপরিচিত নয়। তবে গান ছেড়ে তিনি ব্যবসায় এতটা সফল হবেন তা কেউই অনুমান করতে পারেনি। নিজের ব্যবসাকে ধীরে ধীরে বাড়াতে চান ভিক্টোরিয়া বেকহ্যাম। ভিক্টোরিয়া বেকহ্যাম এক নামেই যেন সবার কাছে বিখ্যাত। সাবেক এই পপ সঙ্গীতশিল্পী ডিজাইনার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেই তাক লাগিয়ে দেন সবাইকে।
ভিক্টোরিয়ার ‘লেবেল’ ব্র্যান্ড ব্রিটিশ ডিজাইনারের বাৎসরিক পুরস্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকায় জায়গা করে নেন। বিশ্বে সাড়া জাগানো ফ্যাশনের জন্য পরিচিত মালবারি, বারবারি এবং প্রিঙ্গল- এ সবের পাশাপাশি জায়গা করে নিয়েছে ভিক্টোরিয়া লেবেল ব্র্যান্ড। নিজের কাজের সম্পর্কে ভিক্টোরিয়া বলেন, এখনও আমার হাতে আনুমানিক বিশ বছর সময় আছে। ফ্যাশন সমালোচক সুজি মেঙ্কেস ভিক্টোরিয়া বেকহ্যামকে একজন একেবারেই অন্যরকম সেলিব্রেটি হিসেবে অভিহিত করে বলেন, তিনি লাল গালিচার ওপর দিয়ে নেমে গিয়েছেন আবার লাল গালিচার ওপরেই উঠে এসেছেন। ফ্যাশন দুনিয়ায় ব্যস্ত হয়ে যাওয়ায় গান একেবারে ছেড়ে দিয়েছিলেন ’৯০ দশকের নারীদের এ ফ্যাশন আইডল। ‘দ্য লেট লেট শো উইথ জেমস করডেন’ এর ‘কারপুল কারাওকে’ সেশনে আবার গান গাইতে দেখা যায় তাকে। ২০০৮ সালে গানের ভুবন ছেড়ে দেন ভিক্টোরিয়া বেকহ্যাম। দীর্ঘ বিরতির পর তিনি তার ইনস্টাগ্রামে একটি ছবি দিয়ে নতুন করে আলোড়ন তোলেন ভক্তকুলের হৃদয়ে। সেই ছবিতে হেয়ার ড্রেসার তার চুলের নতুন স্টাইল করছিলেন করডেন শো’র জন্য। ‘কারপুল কারাওকে’ অনুষ্ঠানে করডেন গায়িকাদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে তাদের জনপ্রিয় গানগুলো গেয়ে শোনান তিনি। ভিক্টোরিয়ার আগে আরও অনেক জনপ্রিয় শিল্পী এ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউনের বিলাসবহুল সম্মেলনে সাবেক স্পাইস গার্ল ভিক্টোরিয়া বলেন, এবারে আমি জুতার ব্যবসার কথা চিন্তা-ভাবনা করছি। তবে আমাকে সময় দিতে হবে। জুতার ব্যবসা করতে পারলে খুশিই হব। কিন্তু সেজন্য একটি যোগ্য দল দরকার। এটা নিয়ে সত্যিই আমাকে গবেষণা করতে হবে। উঁচু হিল নয়, সাধারণ জুতা পরবেন তিনি- এমন মন্তব্য করে ফ্যাশন দুনিয়ায় নতুন ঝড় তোলেন তিনি। এ প্রসঙ্গে ভিক্টোরিয়া জানিয়েছেন, আমি আর উঁচু হিল পরতে পারছি না। বিশেষ করে কাজের সময়। উঁচু হিল ছেড়ে দেয়ার কারণ ব্যাখ্যায় ভিক্টোরিয়া বলেন, আমাকে প্রচুর ভ্রমণ করতে হয়। পোশাক বেছে নিতে হয় সাধারণ ও আরামদায়ক। আর মানুষ আমার সত্যিকারের রূপটা জানে। উঁচু হিল পড়লে আর্থারাইটিস হওয়ার ঝুঁকি থাকে এমন বার্তা দিয়ে সমাজে নারীদের কাছে স্বাস্থ্য পরামর্শক হিসেবেও আলোচিত হয়েছেন। সাফল্য, সম্মান আর অর্থ- এসব কোনো কিছুতেই কমতি নেই ভিক্টোরিয়ার। বিশ্ব মিডিয়ায় অনেকটাই সাবলীল আর সরল অভিব্যক্তিতে দেখা যায় তাকে। বহু অঙ্গনের সাফল্যের কথা এলে ভিক্টোরিয়া তরুণ প্রজন্মের কাছে অপরাজেয়, অপ্রতিরোধ্য একটি নাম। ২০০১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বের হয় তার প্রথম বই ‘লার্নিং টু ফ্লাই’। বই সম্পর্কে তিনি বলেন, এ বইটা আমাকে চিরদিনের জন্য বাঁচিয়ে রাখবে। ওই বছর ইংল্যান্ডের নন-ফিকশন টাইটেলের মধ্যে এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ বই বিক্রির তালিকাভুক্ত হয়। বইটির ৫ লাখ কপি বিক্রি হয়। ব্রিটেনের ব্যবসা পরিসরে ভিক্টোরিয়া একটি প্রতিভার নাম। সামাজিক পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলেও পারিবারিক আবহের বাহিরে নিজের নাম আর যোগত্যার প্রমাণ দিয়ে তিনি উদ্ভাবক, বিশেষ করে নারীদের জন্য আইকন।

No comments

Powered by Blogger.