সিরিয়ায় তুর্কি বাহিনীকে রাশিয়ার মদত

গত ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে সিরিয়ার আফরিন প্রদেশে বিমান ও স্থল হামলা শুরু করেছে তুরস্ক। ‘অলিভ ব্রাঞ্চ’ নামে ওই অভিযানের লক্ষ্য সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশটির কুর্দি মিলিশিয়াদের ঘাঁটি নিশ্চিহ্ন করা। অভিযানের মাত্রা ক্রমেই বাড়ছে। তুর্কি বাহিনী এগিয়ে যাচ্ছে সিরিয়ার ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে। সিরিয়ায় এরকম একটি সামরিক অভিযান যে রাশিয়ার সম্মতি ছাড়া হতে পারে না সে ব্যাপারে অনেকেই নিশ্চিত। প্রথম কথা হচ্ছে, এই অভিযানের জন্য তুর্কি বিমানবাহিনীকে প্রবেশ করতে হচ্ছে সিরিয়ার আকাশসীমায়। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে বাশার আল আসাদের সরকারের পক্ষে সরাসরি যুদ্ধ করতে দেশটিতে আছে রাশিয়ার বিমান সেনাদের বড় একটি দল। তাই রাশিয়ার সম্মতি ছাড়া সিরিয়ার আকাশসীমায় তুর্কি বিমান প্রবেশ করা সম্ভব নয়। তদুপরি আফরিনের তুর্কি সমর্থিত ফ্রি সিরিয়ান আর্মিকে নতুনভাবে পরিচালিত করার জন্য আঙ্কারাকে রাশিয়ার কাছ থেকে এই নিশ্চয়তা পেতে হবে যে বাশার সরকার এই পরিস্থিতির সুবিধা নেবেন না এবং ইদলিবে তুর্কি নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোও দখল করতে চেষ্টা করবে না। সিরিয়ার কুর্দি ও আরবদের যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত মিত্র সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সও (এসডিএফ) জানে যে, মস্কোর সাথে সমঝোতা ছাড়া তুরস্ক কিছুতেই অপারেশন অলিভ ব্রাঞ্চ শুরু করতে পারে না। যে কারণে এই গ্রুপটি মস্কোর ওপর ুব্ধ হয়েছে। এই বাহিনীর অংশ কুর্দিদের সশস্ত্র সংগঠন ওয়াইপিজি সরাসরিই মস্কোর এই মনোভাবকে কুর্দিদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। অপারেশন অলিভ ব্রাঞ্চের পরিকল্পনা হয়েছিল গত গ্রীষ্মে ইস্তাম্বুলে রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু ও তুর্কি সেনাপ্রধান হুলুসি আকারের বৈঠকে। সে সময়ই তুরস্ককে সিরিয়ার আকাশসীমা আংশিক ব্যবহারের অনুমতি দেয় রাশিয়া। মূলত এর ফলেই তুরস্কের অভিযানের পথ সুগম হয়।
এক মাস ধরে আঙ্কারা সিরীয় সীমান্তের কাছে তার শক্তি বৃদ্ধি শুরু করে। তুর্কি অভিযানে মস্কোর সম্মতির বিষয়টি আবারো প্রকাশ হয় যখন এই অপারেশন শুরুর দিনেই রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আফরিন থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়। রাশিয়া এই ইস্যুতে তুরস্কের সাথে সমঝোতা করেছে নিজেদের স্বার্থেই। কুর্দিদের সাথে মস্কোর সম্পর্ক কখনোই দীর্ঘ মেয়াদি ছিল না। বিভিন্ন ইস্যুতে মস্কো কুর্দি কার্ড ব্যবহার করেছে নিজেদের স্বার্থে। বিশেষ করে তুরস্কের সাথে কোনো সমঝোতার বিষয়ে। কুর্দিরা তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকা বাশার সরকারের হাতে তুলে দেয়ার রুশ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। ওয়াশিংটনও তাদের মিত্র কুর্দিদের রক্ষা করতে এগিয়ে আসছে না। কাজেই রাশিয়া সুযোগ পেয়েছে মিত্রদের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতারণামূলক চরিত্র তুলে ধরার। রাশিয়ার সোচিতে সিরিয়া নিয়ে যে শান্তি আলোচনা শুরু হয়েছে সেটি সফল করতে হলে তুরস্কের সহযোগিতা দরকার মস্কোর। এই সম্মেলন সফল করে পুতিন তার আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ভোটারদের কাছে শান্তির বার্তাবাহক হিসেবে নিজের ইমেজ তৈরি করতে চাইছেন। এ ছাড়া তুরস্কের সহযোগিতা নিয়ে সিরিয়ার বিদ্রোহীদের সবচেয়ে বড় ঘাঁটি ইদলিব ইস্যুতে বিনা যুদ্ধে সমঝোতায় পৌঁছতে চাইছেন পুতিন। রাশিয়া জানে এখানে সঙ্ঘাত হলে সেটি সিরিয়ার সরকারের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। সর্বশেষ বিষয় হচ্ছে, রাশিয়ার সাথে তুরস্কের আরেকটি দরকষাকষির বিষয় হলো গ্যাস পাইপলাইন। তুরস্ক থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস পেতে মস্কো খুবই আশাবাদী। এসব কারণেই কুর্দিবিরোধী অভিযানে তুরস্ককে সমর্থন দিচ্ছে রাশিয়া।

No comments

Powered by Blogger.