ভাঙা সেতু জোড়া লাগানোর চেষ্টা by রস ডৌথাট

প্রেসিডেন্সির প্রথম বছরে নীতিগত বিষয়ে ট্রাম্পের অবস্থান খুবই সোজাসাপটা ছিল। ব্যাপারটা হলো, প্রার্থী হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন ও হোয়হাইট হাউস জয়ের জন্য রক্ষণশীলদের গোঁড়ামি উপেক্ষা করেছিলেন। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার জন্য তিনি মানুষকে হাতে চাঁদ পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই প্রার্থী এমন এক প্রেসিডেন্টে পরিণত হলেন, যিনি জনতুষ্টিবাদী নির্বাচনী প্রচারণার ধারায় বাহিত হয়ে পল রায়ান ও মিচ ম্যাককনেলের হাতে নিজের অ্যাজেন্ডার নিয়ন্ত্রণ তুলে দিয়েছেন। 
অন্যদিকে তাঁর হাতে যে সীমিত রাজনৈতিক পুঁজি ছিল, তা দিয়ে তিনি প্রথাগত ডানপন্থী নীতি প্রণয়নের চেষ্টা করেছেন। স্বাস্থ্যসেবায় পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে তিনি অতটা সফল না হলেও করের বেলায় তিনি সফল। কিন্তু কোনো বেলায়ই তিনি মধ্যপন্থী বা দ্বিদলীয় সমর্থন পাননি। নানা কারণেই অত্যন্ত অজনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প প্রথম স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন বক্তৃতা দিলেন। মার্কিন দেশের অর্থনীতি মোটামুটি শক্তিশালী হলেও নির্বাচনের জনতুষ্টিবাদী প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থতা তাঁকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। সে কারণে এই বক্তৃতাকে তাঁর সমঝোতার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা যায়। ভবিষ্যবাচ্য গোঁড়া আদর্শবাগিশ না হয়ে তিনি নিজেকে মধ্যপন্থী চুক্তি সম্পাদনকারী হিসেবে হাজির করলেন। প্রথম বছরে আইনি পরিবর্তনে নিজের ব্যর্থতা পেছনে রেখে তিনি মানুষ যে ফুলে তুষ্ট সেই ফুলেই তাকে পূজা দেওয়ার রীতিতে ফিরে গেলেন। কর হ্রাস নীতির সাফাই গাইলেও ট্রাম্প কার্যত ওবামাকেয়ার বাতিলে ভবিষ্যৎ চেষ্টার সম্ভাবনা নাকচ করে দিলেন। তবে তিনি ঘাটতি হ্রাস বা ব্যয় হ্রাস প্রসঙ্গে কথা বলেননি। হাউস স্পিকারের প্রিয় বিষয় অধিকারবিষয়ক সংস্কার নিয়েও কথা বলেননি তিনি। অভিবাসন বিষয়ে পুরোনো অবস্থান পরিবর্তন এবং বিচার বিভাগের নিয়োগে সায় দিলেও বক্তৃতায় তিনি শুধু পতাকা, বিশ্বাস, পরিবার প্রভৃতি সাধারণ বিষয়ে রক্ষণশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। আর গর্ভপাতের মতো মেরুকরণ সৃষ্টিকারী বিষয়ে তিনি শুধু আকারে-ইঙ্গিতে কথা বলেছেন। আর ইসলামিক স্টেট, উত্তর কোরিয়া ও গুয়ানতানামো বে ছাড়া পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে এই বক্তৃতা লক্ষণীয়ভাবে শূন্যগর্ভ ছিল। আর তাঁর যুক্তরাষ্ট্রই প্রথম নীতির মাজেজা হলো, শত্রু ছাড়া মার্কিন উপকূলের বাইরে আর কারও নাম মুখে না আনা। আর অভ্যন্তরীণ নীতির ক্ষেত্রে ২০২০ সালের নির্বাচনে বার্নি স্যান্ডার্স বেশ কিছু বিষয়ে প্রচারণা চালাতে পারেন: প্রেসক্রিপশনের ওষুধের দাম কমানো, অবকাঠামো খাতে দেড় লাখ কোটি ডলার ব্যয়, বেতনসহ পারিবারিক ছুটি। এগুলো কিন্তু রক্ষণশীল ধারণা নয়, খুবই জনপ্রিয়।
আমি ধারণা করি, এই অর্থে বক্তৃতাটি কার্যকর হয়েছে। এতে হয়তো ট্রাম্পের অনুমোদন হার সাময়িকভাবে ৩৮ শতাংশের ওপরে উঠে যাবে। কিন্তু কার্যকর বক্তৃতা আর কার্যকর অ্যাজেন্ডা এক জিনিস নয়। আর এই মুহূর্তে ট্রাম্পের জনপ্রিয় ধারণাগুলো কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাঁর দলের আদর্শবাগীশরা তাঁকে চান না। এমনকি সমর্থনলাভের জন্য ট্রাম্প তাঁদের সঙ্গে চুক্তি করুন, সেটাও তাঁরা চান না। অন্যদিকে তিনি যে বাগাড়ম্বর করলেন, হোয়াইট হাউস তার সমর্থনে নথিপত্রও দেখাতে পারবে না। এই ভাবনাগুলো প্রেসিডেন্ট সম্ভবত বাস্তবায়ন করতে চান, এর বেশি কিছু নয়। তিনি হয়তো একসময় এসব ভুলে যাবেন বা কংগ্রেস কখনো তা গ্রহণ করবে না। এ ক্ষেত্রে একমাত্র ব্যতিক্রম হচ্ছে অভিবাসন, যে ব্যাপারে তাঁর হাতে কিছু বিস্তারিত পরিকল্পনা আছে। একই সঙ্গে তিনি আবার অভিবাসীদের অপরাধের বিবরণ দিলেন। সে কারণে তাঁর প্রতিশ্রুতির ওজন কমে গেল। মার্কিন দেশের অভিবাসন নীতি ডেফার্ড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভাল সম্পর্কে তিনি চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছেন, তা মূলত ভবিষ্যতে অভিবাসন হ্রাসের বিনিময়ে এই মুহূর্তে নাগরিকত্বের প্রস্তাব। আর ডেমোক্র্যাটরা মনে করেন, এমন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দর-কষাকষি করে লাভ কী, যিনি মনে করেন যে অভিবাসীদের অর্ধেকই সংঘবদ্ধ অপরাধী? অর্থাৎ এই স্টেট অব ইউনিয়ন বক্তৃতায় বোঝা যাচ্ছে, ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির অধিকতর সফল রূপটি কেমন হবে, যদিও তিনি অনেক বিষয়েই রক্ষণশীল কিন্তু প্রকৃতপক্ষে জনতুষ্টিবাদী। ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির দ্বিতীয় বছর প্রথম বছরের তুলনায় অধিক সফল হতে পারে-এমন ধারণাও আছে। কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন করার মতো পরিকল্পনার অভাব আছে। ট্রাম্প যে সেতু পুড়িয়ে দিয়েছেন, সেই সেতু আবার গড়বেন, তেমন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সাময়িকভাবে জরিপের ফলাফলে ভালো করা ছাড়া এর ভিন্ন উদ্দেশ্য নেই। এখন থেকে ২০২০ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত যেটা শোনা যাবে তা হলো, আপনি যদি এই অর্থনীতি পছন্দ করেন, তাহলে তাঁকেও আপনার পছন্দ করতে হবে। রাজনীতিকেরা এই ধরনের বার্তা দিয়ে পুনরায় নির্বাচনে জিতেছেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে খুব কম প্রেসিডেন্টকেই সাধারণ পছন্দ-অপছন্দ অর্জন করতে এত কিছু করতে হয়েছে, যেটা ডোনাল্ড ট্রাম্প করেছেন।
অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন, নিউইয়র্ক টাইমস থেকে নেওয়া।
রস ডৌথাট, মার্কিন কলাম লেখক।

No comments

Powered by Blogger.