পুরুষের অনুমতি নেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকছে না সৌদি নারীদের

স্বাধীনভাবে নিজস্ব ব্যবসা শুরুর অধিকার পেয়েছে সৌদি নারীরা। সৌদি নারীরা স্বামী বা পুরুষ আত্মীয়ের অনুমতি ছাড়াই নিজের ব্যবসা শুরু করতে পারছে এবং সরকারের ই-সেবা থেকে লাভবান হতে পারবে। অনেকক্ষেত্রে নারীই নারীর অভিভাবক, নারীই নারীর সিদ্ধান্ত নিতে পারছে। সৌদি আরব সম্প্রতি সরকারি চাকরিতেও নারীদের নিয়োগ দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সৌদি আরবে কয়েক দশক ধরে নারীদের গাড়ি চালানোর ওপর যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, তাও তুলে দেয়া হয়েছে। বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ ও যুব সমাজের কাছে দেশের একটি আধুনিক ও ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ার লক্ষ্যে সৌদি আরবে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে গত অক্টোবরে ‘মধ্যমপন্থী ও মুক্ত’ সৌদি আরব গড়ার প্রত্যয়ে শুরু হওয়া ‘ভিশন-২০৩০’ সংস্কার কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেশটি নারীর হার মোট কর্মজীবীর ২২ শতাংশ থেকে প্রায় এক তৃতীয়াংশে উন্নীত করতে চায়। সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ধর্মীয় পরিষদের এক সিনিয়র নেতা শেখ আবদুল্লাহ আল মুতলাক বলেছেন-নারীদের পর্দা করা জরুরি, বোরকা পরা নয়। নারীদের অবশ্যই পর্দা করা উচিত, তার মানে এ নয় যে তাদের বোরকাই পরতে হবে। অথচ সৌদি আরবের আইন অনুযায়ী দেশটির নারীদের ঘরের বাইরে এলে বোরকা পরা বাধ্যতামূলক। রিয়াদের রাস্তায় বোরকা খুলে ফেলার অপরাধে ২০১৬ সালে এক নারীকে আটক করা হয়েছিল। সৌদি আরবে গত কিছু দিন ধরেই পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। গত বছর সেখানে বাণিজ্যিক সিনেমার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। এ বছরের মার্চে সেখানে প্রথম সিনেমা হল খুলবে। গত ডিসেম্বরে সেখানে প্রথম কোনো গানের কনসার্টে মহিলা সঙ্গীত শিল্পীকে গান গাইতে দেখা গেছে। সৌদি আরবে স্টেডিয়ামে গিয়ে মেয়েদের খেলার দেখারও অনুমতি দেয়া হয়েছে। বর্তমানে প্রাইভেট সেক্টরে কাজ করেছে ৬ লাখ সৌদি নারী, ২০১১ সালে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৯০ হাজার। গত বছরের সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবরেই ৩০ হাজার সৌদি নারী মার্কেটে কাজ শুরু করেন। বর্তমানে দেশটিতে বেকারত্বের হার ১২.৮% কে ২০৩০ সালের মধ্যে ৭% এ কমিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে দেশটির ক্রাউন প্রিন্সের। ২০১৬ সালের এপ্রিলে সৌদি সরকার বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংস্কার পরিকল্পনা অনুমোদন করে। ‘ভিশন ২০৩০’ নামের এই মহাপরিকল্পনার লক্ষ্য দেশটির তেলনির্ভর অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনা। তেলের রাজস্বের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো। তেলের বাইরে অন্য খাতে ভালো কর্মসংস্থান সৃষ্টি। ভিশন ২০৩০-এর অংশ হিসেবে সাড়ে ২৬ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে একটি শহরের পরিকল্পনা করা হচ্ছে, নাম নিওম। শহরটি সম্পর্কে একটা ধারণা দিতে কিছু প্রমোশনাল ভিডিও প্রকাশ করে সৌদি আরব। ভিডিওতে হিজাবহীন নারীদের দেখা যাচ্ছে পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজে অংশ নিতে। সৌদি আরবের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতিতে কিছু তাত্পর্যপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে। জনসাধারণকে হলে গিয়ে সিনেমা দেখার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। ২০১৮ সালের মার্চের মধ্যেই প্রথম সিনেমা মুক্তি পাবে।
১৯৮০’র দশকের শুরুর দিকে ধর্মীয়ভাবে কঠোর রক্ষণশীল দেশ সৌদি আরবে সিনেমা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ৩৫ বছরেরও বেশি সময় পর এই প্রথম তা আবার চালু হচ্ছে অর্থাৎ সিনেমার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হচ্ছে। ২০১৮ সালের জুন থেকে সৌদি আরবে নারীদের গাড়ি চালাতে দেওয়ার সিদ্ধান্তের পর নারীদের স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখার সুযোগ দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছে সৌদি আরব। সম্প্রতি দেশটির একটি স্টেডিয়ামে প্রথমবারের মতো নারীদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে সৌদি আরব প্রথমবারের মতো দেশটির নারীদের প্রার্থী ও ভোটার হওয়ার সুযোগ করে দেয়। সৌদি আরবের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের মুঠোফোন ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। রেড সি'তে পর্যটকদের জন্য বিলাসবহুল আবাসনের ব্যবস্থা হচ্ছে, যার অর্থ নারীরা সেখানে বিকিনি পরতে পারবেন, উন্মুক্ত থাকবে বার৷ ২০১৭ সালেই প্রথমবারের মতো রাজধানী রিয়াদের একটি বড় রেস্টুরেন্টে প্রধান শেফ হিসেবে নিয়োগ পান এক নারী। সৌদি নারীদের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে বিমানবন্দর ও সীমান্ত চৌকিতে ইমিগ্রেশন অফিসে বিভিন্ন পদে চাকরির সুযোগ। দেশটির পাসপোর্ট অধিদফতর জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে ১৪০ জনকে নিয়োগ দেয়া হবে। একদিনের মধ্যেই ১ লাখ ৭ হাজার নারী এই চাকরির জন্য আবেদন করেছেন। নারীদের কর্মসংস্থানে রিয়াদের ভিশন-২০৩০ পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই এই উদ্যোগ। দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সৌদির সামাজিক প্রেক্ষাপটে নারীদের ব্যবসা করা সহজ নয় বলে চাকরিপ্রত্যাশীদের সংখ্যা অনেক বেশি। তবে যাদের জন্ম ও বেড়ে ওঠা সৌদি আরবে শুধুমাত্র সেসব নারীরাই এই চাকরির আবেদন করতে পারবেন। বয়স অবশ্যই ২৫-৩৫ বছরের মধ্যে হতে হবে। শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে সেদেশের হাইস্কুল ডিপ্লোমা বা সমতূল্য যে কোনো ডিগ্রি হলেই চলবে।

No comments

Powered by Blogger.