দীর্ঘতম উৎসবের প্রস্তুতি

জাতিসংঘের ইকোনমিক ও সোশ্যাল কাউন্সিলের ত্রিবার্ষিক সভা শুরু হতে বাকি মাত্র ২০ দিন। পাঁচ দিনব্যাপী ওই সভা শুরু হবে ১২ মার্চ। সেখানেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হতে যাচ্ছে ‘বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ’। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের সুপারিশপত্র তুলে দেয়া হবে বাংলাদেশের প্রতিনিধির হাতে।
এ সুসংবাদ সোমবার বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদকে দিয়েছেন জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী এবং ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সিপ্পো। মন্ত্রীর মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশকে আগাম অভিনন্দন জানিয়েছেন। সিপ্পো বলেন, উন্নয়নে বিশ্বে রোল মডেল হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণকে স্বাধীনতা-পরবর্তী জাতীয় জীবনের অন্যতম বড় অর্জন হিসেবে দেখছে সরকার। এটি স্মরণীয় করে রাখতে তাই বহুমাত্রিক কর্মসূচির সমন্বয়ে দীর্ঘ উৎসবের আয়োজন করতে চাইছে। পাঁচ দিনের ওই উৎসব শুরু হতে পারে ২২ মার্চ। চলবে ২৬ মার্চ অর্থাৎ স্বাধীনতা দিবস পর্যন্ত। সরকারের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের এ বার্তা সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থা, অধিদফতর, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এমনকি ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারিভাবে পাঁচ দিনব্যাপী উৎসব আয়োজন করা হলে তা হবে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম উদযাপন। এ বিষয়ে জানতে মঙ্গলবার যোগাযোগ করা হয় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শফিকুল আযমের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিষয়টি এখনও পর্যালোচনা পর্যায়ে আছে। তবে উৎসব পালন করা হবে, তা নিশ্চিত। সেটি ২০-২৬ মার্চ বা ২২-২৬ মার্চও হতে পারে। সংশ্লিষ্টরা জানান, একটি দেশকে স্বল্পোন্নত (লিস্ট ডেভেলপড কান্ট্রি-এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে (ডেভেলপিং কান্ট্রি-ডিসি) পরিণত হতে তিন সূচকে যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। বাংলাদেশ সব শর্তই পূরণ করেছে। শুধু তা-ই নয়, জাতিসংঘের তালিকাভুক্ত উন্নয়নশীল দেশের ইতিহাসে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ, যেটি সব সূচকেই সক্ষমতা নিয়ে উন্নয়নশীল দেশের মাইলফলক ছুঁতে যাচ্ছে। সূচকগুলো হচ্ছে- ১. মাথাপিছু আয় ১২৪২ মার্কিন ডলার হতে হয়, বাংলাদেশ তা অনেক আগেই অতিক্রম করে ১৬১০ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২. মানবসম্পদের উন্নয়ন অর্থাৎ দেশের ৬৬ ভাগ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হতে হয়, বাংলাদেশের অর্জন ৭২ দশমিক ৯ ভাগ। ৩. অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুর না হওয়ার মাত্রা ৩২ ভাগের নিচে হতে হয়, বাংলাদেশ ২৫ ভাগে রয়েছে।
সূত্রমতে, ২২ জানুয়ারি গণভবনে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এলডিসি থেকে উত্তরণের বিষয়টি জানানো হয়। সেখানেই এ অর্জনটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপনের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। পরে ২২-২৬ মার্চ উৎসব উদযাপন কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়। এর ভিত্তিতে এলডিসি সংক্রান্ত জাতীয় টাস্কফোর্স ৩১ জানুয়ারি বৈঠক করে। ওই বৈঠকেই দীর্ঘতম উৎসবের কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এবিষয়ক কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, উদযাপন পর্ব শুরু হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দেয়ার মধ্য দিয়ে। ২২ মার্চ সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও ইআরডি এ আয়োজন করবে। বিরল অর্জনের জন্য নেতৃত্বের ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীকে এ সম্মান জানানো হবে। অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের দেয়া সুপারিশপত্রও হস্তান্তর করা হবে প্রধানমন্ত্রীর হাতে। এ স্তরে উত্তরণে বাংলাদেশের কর্মপ্রচেষ্টা নিয়ে তথ্যচিত্র দেখানো হবে। প্রকাশ করা হবে স্মরণিকা। অনুষ্ঠানে স্মারক ডাক টিকিটও উম্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হবে বিদেশিদেরও। ওই দিন বেলা ৩টায় ঢাকার চার স্থান থেকে একযোগে বের করা হবে শোভাযাত্রা। সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে থাকছে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ভিডিও কনফারেন্সে এটি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। আতশবাজি ও লেজার শো’ও থাকবে এতে। ২৩ মার্চ হোটেল র‌্যাডিসন ব্ল–তে আয়োজন করা হবে আন্তর্জাতিক সেমিনার। দেশি-বিদেশি অর্থনীতিবিদ, সুশীল সমাজ, উন্নয়নকর্মী ও বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে এ সেমিনারে সভাপতিত্ব করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। পরে একই স্থানে বিশেষজ্ঞ আলোচকদের নিয়ে মতবিনিময়ের আয়োজন করা হবে। পরদিন থেকে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে থাকছে সেমিনার, চিত্র প্রদর্শনী, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাসহ নানা আয়োজন। ব্যানার-ফেস্টুনসহ নানাভাবে সাজসজ্জা এবং গণমাধ্যম ও সামাজিকমাধ্যমে চালানো হবে এ উৎসবের প্রচার। তথ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গণমাধ্যমেও থাকবে নানা আয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.