কে রাবিশ, কে বোগাস? by মীযানুল করীম

১৫ জানুয়ারি পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় প্রবীণ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের একটি বক্তব্য এসেছে শিরোনামে। তা হলো- ‘এটা রাবিশ অ্যান্ড বোগাস’। তিনি হরহামেশাই নানা বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে এ ধরনের কথা বলে থাকেন। তাই এখন আর এটা কাউকে অবাক করে না। সবাই জানেন, মানুষের মুদ্রাদোষ থাকে। তবে এবার যে ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী রাবিশ আর বোগাস বলে গালি দিলেন, তা বিশেষ কোনো দল বা ব্যক্তি প্রসঙ্গে নয়। জনজীবনের সাথে সম্পৃক্ত একটি বিষয়ের ওপর এভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। তাই কৌতূহল হওয়াই স্বাভাবিক যে, মন্ত্রী দেশের অর্থনীতি সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন নিয়ে এত ক্ষেপে গেলেন কেন? এর যুক্তি বা প্রয়োজন আছে কি না।
১৩ তারিখে প্রকাশিত সিপিডির ওই গবেষণা প্রতিবেদন প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলছেন, সিপিডির প্রতিবেদন প্রকাশ করার পেছনে দুরভিসন্ধি আছে এবং তাদের দেয়া তথ্য বাস্তবভিত্তিক নয়। বেসরকারি ‘থিংকট্যাংক’ সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) গত ১৩ জানুয়ারি তাদের একটি ‘গবেষণা প্রতিবেদন’ প্রকাশ করেছে আনুষ্ঠানিকভাবে। ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের পশ্চিম পাশে অবস্থিত সিরডাপ অডিটোরিয়ামে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সিপিডি তার পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে। বিষয় ছিল, বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতি। সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনের মূল সুর ছিল, দেশে প্রবৃদ্ধির হার বাড়লেও আয়ের বৈষম্য ও দারিদ্র্য কমছে না। ফলে চলতি বছর দেশের অর্থনীতি অতিরিক্ত ঝুঁকির মুখে পড়বে। ২০১৭ সালের আর্থিক দুর্বলতার পাশাপাশি ব্যাংক দখল, অর্থপাচার, দারিদ্র্য ও সম্পদের বৈষম্য বৃদ্ধি, জিডিপি প্রবৃদ্ধির মান উন্নত না হওয়া, প্রভৃতির পরিণামে দারিদ্র্য ও বৈষম্য থাকবে অব্যাহত। গত বছরটি বাংলাদেশে ‘ব্যাংক-কেলেঙ্কারির বছর’ হিসেবে চিহ্নিত হবে। আর্থিক খাতের অব্যবস্থাপনার সাথে আসন্ন সংসদ নির্বাচন যোগ করবে বাড়তি ঝুঁকি। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারকে তাগিদ দেয়া হয়েছে অর্থনৈতিক সুব্যবস্থাপনার জন্য। সিপিডি মনে করে, এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দূরদর্শিতাসহ যথাযথ নীতি অনুসরণ করতে হবে। এসব কিছু শুধু সিপিডির পর্যবেক্ষণ নয়, দেশের সচেতন নাগরিকসহ ওয়াকিবহাল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানমাত্রই প্রায় অভিন্ন উপলব্ধি প্রকাশ করে আসছেন। প্রবৃদ্ধির তোড়জোড়ের পাশাপাশি বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে কি না, কিংবা ধনী আরো ধনী এবং গরিব আরো গরিব হচ্ছে কি না, দুর্নীতি ও দলবাজি দেশে বেড়েছে না কমেছে- এসব কিছু জনগণের ভালো করেই জানা। দখলবাজি আর লুটপাটের চৌহদ্দির আওতায় ব্যাংকও যে চলে এসেছে, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে না। সজাগ দেশবাসী মনে করেন, গণতন্ত্রকে এতিম বানিয়ে, সুশাসন লাটে তুলে, উন্নয়নের ধুয়া তোলা জনমনে বিভ্রান্তির ধোঁয়া সৃষ্টির অপপ্রয়াস। তবুও জাতীয় অর্থনীতি নিয়ে কারো তিক্ত সত্য উচ্চারণ কিংবা স্পষ্ট বক্তব্য সরকারের কাছে সহনীয় নয়। তাই পত্রিকায় দেখা গেল, দুই মন্ত্রী সিপিডিকে একচোট নিলেন। সিপিডি বা আর কোনো প্রতিষ্ঠান বড় কথা নয়; কথা হলোÑ তাদের প্রতিবেদনে যেসব উদ্বেগজনক তথ্য রয়েছে, তা অনেকটাই বাস্তব।
এটা সবার জানা। সবাই দেখছেন, পত্রিকায় পড়ছেন এবং প্রাজ্ঞ অর্থনীতিবিদদের মুখে এসব শুনে আসছেন বছরের পর বছর। ১৫ জানুয়ারি নয়া দিগন্তের প্রথম পাতার খবর, অর্থমন্ত্রী বলেছেন- সিপিডি বাংলাদেশকে টেনে নামানোর চেষ্টা করছে। বাণিজ্যমন্ত্রী বললেন, সিপিডি দেশের উন্নয়ন খুঁজে পায় না। অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, সিপিডির রিপোর্ট All are Rubbish. অর্থাৎ মন্ত্রী আলোচ্য প্রতিবেদনটি পুরোই প্রত্যাখ্যান করছেন। এখন মন্ত্রীদের দায়িত্ব হলো, আসলে দেশের অর্থনীতির কী অবস্থা, তার প্রামাণ্য চিত্র তুলে ধরা, যা হবে জনগণের বিশ্বাসযোগ্য ও বাস্তব তথ্য-উপাত্ত-পরিসংখ্যানপূর্ণ। তা যদি সিপিডির উত্থাপিত বক্তব্য থেকে ভিন্ন হয় এবং তার পক্ষে যথেষ্ট যুক্তি-প্রমাণ থাকে, তাহলে দেশের মানুষ সরকারের কথাকেই সঠিক বলে মনে করবে। অন্যথায়, বেসরকারি বা আন্তর্জাতিক মহলের বক্তব্যই অধিক গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হওয়া স্বাভাবিক। অর্থমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়ার একটি স্ববিরোধী দিক রয়েছে। সিপিডির সমালোচনা করে, ২০১৭ কে ‘ব্যাংক কেলেঙ্কারির বছর’ বলা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেছেন, কই- ‘অতবড় কেলেঙ্কারি (হলমার্ক) হয়ে গেল, তখন তো তারা কিছু বলেনি।’ যদি সত্যিই সিপিডি সে ব্যাপারে নিশ্চুপ থাকে, তার সমালোচনা করা যায়। কিন্তু খোদ মন্ত্রী হলমার্কের চার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে লুণ্ঠন করার ব্যাপারে বলেছিলেন, ‘এই অর্থের পরিমাণ বেশি নয়।’ বাণিজ্যমন্ত্রীর বক্তব্য কোনো কোনো পত্রিকায় যেভাবে এসেছে, তাতে মনে হতে পারে সিপিডির গবেষণার চেয়েও এই গবেষণার রিপোর্ট প্রকাশ করে দেয়া বেশি অন্যায়। মন্ত্রী এটাকে ‘দুরভিসন্ধিমূলক’ বলেই ক্ষান্ত হননি, সিপিডির এ রিপোর্ট আর বিএনপির বক্তব্যকে তিনি এক করে দেখেছেন। এর মধ্য দিয়ে যা ফুটে ওঠে তা হলো, যারাই সরকারের প্রচারিত বক্তব্যের সাথে একমত হবে না, তারাই যেন ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের লোক! অথচ এটা কে না জানে যে, সিপিডি যারা চালান, তারা আর যা-ই হন, অন্তত বিএনপিকে সমর্থন দেবেন না।
তারা আদর্শিকভাবে আওয়ামী লীগের মতোই সেক্যুলার। বিএনপির প্রচারিত ‘ইসলামি মূল্যবোধ’ কিংবা ‘বাংলাদেশী’ জাতীয়তাবাদকে সিপিডির মতো প্রতিষ্ঠান সমর্থন করবে বলে কেউ বিশ্বাস করে না। সিপিডির রিপোর্টে বিগত বছরটাকে ‘ব্যাংক কেলেঙ্কারির বছর’ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে। এটা তো কোনো অতিরঞ্জন কিংবা বিষোদগার নয়। আসলে বাংলাদেশে ফ্রি স্টাইলে ‘আপনজন’রা ব্যাংকের ভাণ্ডার লোপাট করার অপকর্মে নেমেছেন আরো কয়েক বছর আগেই। এটা যদি ব্যাংক খাতের কেলেঙ্কারি না হয়, তো কেবল যৌন অপকর্মই কি ‘কেলেঙ্কারি’ হিসেবে গণ্য হবে? এখনকার সংসদে কারা আছেন, তা জাতি দেখে আসছে ২০১৪ থেকে। কোনো প্রকৃত বিরোধী দল নেই। ‘বিরোধী’ তকমা এঁটে যারা আছেন সেখানে, তারা ‘গাছেরও খান, তলারও কুড়ান’। সবাই ‘আমরা আমরাই তো’। সেই সংসদ পর্যন্ত ব্যাংকিং সেক্টরের নৈরাজ্যে ক্ষুব্ধ না হয়ে পারছে না। গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ‘সরকারি’ ও ‘বিরোধী’ উভয় পক্ষের এমপিরা ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাট বন্ধ করতে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন। তারা শুধু ঋণখেলাপিদের নয়, দুর্নীতি-লুণ্ঠন-অনিয়মের দোসর ব্যাংক কর্মকর্তাদের নামের তালিকাও মিডিয়ায় প্রকাশ করতে বলেছেন। তাদের কথা, ব্যাংকিং খাতের লুটপাট, দুর্নীতি ও অনিয়ম সরকারের যাবতীয় অর্জনকে শেষ করে দিচ্ছে। সংসদ সদস্যরা নতুন করে কোনো ব্যাংকের অনুমতি দেয়ার বিরোধিতা করেছেন। স্মর্তব্য, সম্প্রতি স্বয়ং অর্থমন্ত্রী বলে দিয়েছেন, ‘আমার কাছে নতুন ব্যাংকের অনুমতি চাইলে তা দিয়ে দেবো।’ বিশিষ্ট গবেষক ও কলামিস্ট আফসান চৌধুরী গত বুধবার ইংরেজি দৈনিক নিউ এজ-এ তার নিবন্ধের শিরোনাম করেছেন- Saying 'rubbish' won't make economic disparity go away (‘রাবিশ’ বললেই অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর হবে না)। সিপিডি বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান দেশের অবস্থা কিংবা অর্থনীতির দশা খারাপ বললে জনগণ কেবল তখনই খারাপ বলে বিশ্বাস করবে, তা নয়। আসলে আমাদের দেশে দীর্ঘ দিনের যে ট্র্যাডিশন দাঁড়িয়েছে সরকারি বক্তব্যÑ বয়ান আর শুমারি-সংখ্যার, তাতে সাধারণ মানুষ তেমন আস্থা রাখতে পারে না। লোকে মনে করে, প্রশাসন বা কর্তৃপক্ষ, এমনকি সরকারের রাজনৈতিক নেতৃত্বও নিজেদের ঢোলটা বেশি বাজায়, আর ‘ময়লা আবর্জনা কারপেটের তলায় লুকিয়ে’ সব সাফসুতরো দেখায়। এ ক্ষেত্রে ঔপনিবেশিক আমলের ‘ঐতিহ্যবাহী’ আমলাতন্ত্রের চরিত্র এবং ক্ষমতাসীনদের সব ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের প্রবণতা- এই দুটোরই দায় রয়েছে।
রাবিশ-বোগাস-স্টুপিড-ইডিয়ট
মাননীয় অর্থমন্ত্রী প্রায় সময় কোনো ব্যাপারে নিজের ক্ষোভ, বিরক্তি, আপত্তি, অসন্তোষ প্রভৃতি প্রকাশ করতে গিয়ে যে ক’টি ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করেন, সেগুলোর মধ্যে আছে রাবিশ, বোগাস, ইডিয়ট, স্টুপিড প্রভৃতি। কোনো কোনো সময় তিনি ননসেন্স কথাটাও বলেছেন। স্মর্তব্য, তিনি বিগত পঞ্চাশের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন। অর্থমন্ত্রী সাধারণত কোনো ব্যক্তির ওপর চটলে স্টুপিড আর ইডিয়ট এবং তার কাছে অগ্রহণযোগ্য- এমন বক্তব্য বা বিষয়কে রাবিশ ও বোগাস বলে থাকেন। আমরা জানি, ইংরেজিতে যে কয়েকটা শব্দ গালি বা ভর্ৎসনা হিসেবে বেশি প্রচলিত সেগুলো হচ্ছে- ইডিয়ট, ননসেন্স, স্টুপিড, স্কাউন্ড্রেল, বাস্টার্ড প্রভৃতি। আমাদের সৌভাগ্য যে, কোনো নেতা কিংবা সরকারি কর্মকর্তা এখন পর্যন্ত শেষের শব্দ দু’টি অন্তত প্রকাশ্যে প্রয়োগ করেননি। যা হোক, আমরা এখন অর্থমন্ত্রীর উল্লিখিত চারটি গালির তাৎপর্য কী, তা দেখব। Oxford Advanced Learner's Dictionary of Current English থেকে জানা যায়, IDIOT-এর দু’টি অর্থ। ক. Person so weak-minded that he is incapable of rational conduct (যে ব্যক্তি এত দুর্বলমনা যে, যুক্তিসঙ্গত আচরণ করতে অক্ষম)। খ. Fool (বোকা)।
STUPID শব্দটির অর্থ : ক. Slow-thinking (দ্রুত চিন্তা করতে অক্ষম); Foolish (সোজা কথায়, ‘বেকুব ও বেআক্কেল’)। খ. In a state of stupor (প্রায় অচেতন অবস্থায় থাকা যার কারণ হতে পারে আঘাত, মাদক সেবন বা মদ্যপান)।
RUBBISH মানে, ক. Waste material (বর্জ্য বস্তু, যা মূল্যহীন ও পরিত্যক্ত বিধায় ছুড়ে ফেলে দিতে হয়। খ. Nonsense, Worthless ideas (অর্থহীন ও মূল্যহীন চিন্তাভাবনা ও ধারণা) গ. Nonsense!(এত বাজে ও বোকামিপূর্ণ যে হতবাক হতে হয়)।
আর Bogus-এর অর্থ হলো, Sham (মেকি) ও Counterfeit (নকল)।
৮৩ বছর বয়সী, তথা আমাদের সবচেয়ে সিনিয়র মন্ত্রী উল্লিখিত চারটি কথা কোন অর্থে বারবার ব্যবহার করে তার ক্ষোভের প্রকাশ ঘটান, তা এই আলোচনা থেকে স্পষ্ট। তিনি সম্প্রতি দেশের প্রধান বিরোধী দল (যে দল কয়েক দফায় সরকার পরিচালনা করেছে) বিএনপি আর যারা এ দল সমর্থন করেন, তাদের ইডিয়ট-স্টুপিড বলেছেন বলে পত্রপত্রিকার খবরে জানা যায়। কিন্তু মন্ত্রীপ্রবরের দলটিকে কেউ আজ পর্যন্ত ইডিয়ট বা স্টুপিড বলেছেন বলে জানা যায় না। যদি বলা হতো, তা হলে প্রতিক্রিয়া যে কত চরম রূপ ধারণ করত, তা বলা বাহুল্য মাত্র। যা হোক, ইডিয়ট-স্টুপিড ধরনের কথাকে সাধারণত মারাত্মক ধরনের গালি হিসেবেই ধরে নেয়া হয়। যিনি এসব বলেন, তিনি তার প্রচণ্ড ক্ষোভ, ঘৃণা ও অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে থাকেন এমন ব্যক্তি বা দল কিংবা কাজের ব্যাপারে যা তার মোটেও সহ্য হয় না এবং যা তার দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ অন্যায় ও অবাঞ্ছিত। আর যাকে বা যাদের এমন গালি দেয়া হয়, তারা সাঙ্ঘাতিক রকম অপমানিত বোধ করে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। কখনো বা এ ধরনের গালি দেয়ার ফলে বেকায়দায় পড়ে কেউ কেউ সুবিধা মতো ‘ব্যাখ্যা’ দিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন এবং অভিযুক্তের প্রতি নমনীয় হওয়ার প্রয়াস পান। তবে মাননীয় অর্থমন্ত্রীর এসব ভর্ৎসনা অনেক সময় অর্থহীন হলেও তাকে দুঃখ প্রকাশ অথবা ভুল স্বীকার করতে দেখা যায় না।

No comments

Powered by Blogger.