ট্রাম্পের বর্ষপূর্তির দিনেই শাটডাউন

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বাজেট বাড়ানো নিয়ে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে উত্থাপিত একটি বিল পাস না হওয়ায় দেশটির সরকারি কার্যক্রমে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দুই দলের কোন্দলে বিলটি সিনেটে আটকে যায়। বিবিসি জানায়, আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকারের বাজেট বাড়ানো নিয়ে প্রস্তাবিত ওই বিল রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ সিনেটে প্রয়োজনীয় ৬০ ভোট পড়েনি। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই প্রথম হোয়াইট হাউস ও কংগ্রেস একই দলের নিয়ন্ত্রণে থাকার পরও সরকারের বাজেট বাড়ানোর বিল অনুমোদন পেতে ব্যর্থ হল। ফলে স্থবির হয়ে পড়েছে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, পরিবেশ ব্যবস্থাপনা, খাদ্য নিরাপত্তাসহ কেন্দ্রীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিভাগের কার্যক্রম। খবর ওয়াশিংটন পোস্ট ও এএফপির।
সিনেটের এ ব্যর্থতায় ডেমোক্রেটদের দায়ী করছে হোয়াইট হাউস। দফতর থেকে বলা হয়, ‘তারা তাদের বেপরোয়া দাবির নিচে বৈধ নাগরিকদের জিম্মি করে রেখেছে।’ হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র সারাহ স্যান্ডার্স বলেন, ‘তারা (ডেমোক্রেটরা) রাজনীতিকে সবকিছুর উপরে রেখেছে। তারা জাতীয় নিরাপত্তা, সামরিক ব্যবস্থা, অরক্ষিত শিশু এবং দেশকে তার সব নাগরিকের সেবা করতে সক্ষম রাখার বিষয়গুলোকে অবহেলা করেছে।’ অন্যদিকে সিনেটে ডেমোক্রেটিক নেতা চাক শুমার বলেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিলটি মেনে নিতে কংগ্রেসে তার দলকে ‘প্রভাবিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন’। আগামী মাস পর্যন্ত সরকারের বাজেট বাড়ানোর বিল পাসের শেষ সময় ছিল শুক্রবার মধ্যরাত। কিন্তু শেষ মুহূর্তেও বিলের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট সিনেটরদের মধ্যে তীব্র মতবিরোধ থাকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ রিপাবলিক সিনেটরদের নেতা মিথচ ম্যাককনেল ভোটের সিদ্ধান্ত নেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার করা যুক্তরাষ্ট্রে অনিবন্ধিত তরুণ অভিবাসীদের সুরক্ষা কর্মসূচি ‘ডাকা’ বাতিলের প্রচেষ্টার বিরোধী ডেমোক্রেটরা। এটি বহাল রাখলে বাজেট বিলে সহযোগিতা দেবেন বলে ঘোষণা দেন চাক শুমার। বৃহস্পতিবার রাতে বিলটি নিন্মকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে ২৩০-১৯৭ ভোটে পাস হয়। কিন্তু সিনেটে সেটি আটকে যায়। বিলটি ৫০-৪৯ ভোটে ব্যর্থ হয়। পাঁচজন রিপাবলিক সিনেটর বিলটির বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন বলে জানায় বিবিসি।
যদিও পাঁচ ডেমোক্রেট সিনেটর বিলে সমর্থন দিতে র‌্যাঙ্ক ভেঙেছেন। সিনেটে ভোট শুরুর ঘণ্টাখানেক আগে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক টুইটে নিজের হতাশা প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘এটা আমাদের দক্ষিণের বিপজ্জনক সীমান্তের সামরিক, সুরক্ষা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য একদমই ভালো কিছু মনে হচ্ছে না।’ এ নিয়ে ১৯৯০ সালের পর যুক্তরাষ্ট্রে চতুর্থবারের মতো প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ হল। সর্বশেষ ওবামার আমলে ২০১৩ সালে ওবামাকেয়ার বিলের ব্যয় বরাদ্দ নিয়ে এমন উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রায় ৮ লাখ সরকারি কর্মকর্তাকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছিল, যা ১৬ দিন পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এর আগে ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে বিল ক্লিনটনের শাসনামলেও এমনটি হয়েছিল। এ নিয়ে ১৯৭৬ সালের পর গত ৪২ বছরে মোট ১৯ বার অচলাবস্থার মুখে পড়ল যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন। তহবিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন অনেক দফতর বন্ধ হয়ে যাবে। তবে জরুরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ চলবে। যার মধ্যে জাতীয় নিরাপত্তা, ডাক, বিমান ওঠানামার কাজ, হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের সেবা, হাসপাতালে জরুরি বিভাগে সেবা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, কারাগার, কর বিভাগ এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন অন্যতম। বন্ধ হয়ে যাবে জাতীয় উদ্যান এবং স্মৃতিস্তম্ভগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ কাজ; ওবামার আমলে যা নিয়ে জনরোষ দেখা দিয়েছিল। দেশটির প্রায় ১০ লাখ সরকারি কর্মকর্তা বাধ্যতামূলক ছুটিতে যেতে হবে।
ইতিমধ্যে মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতরের অর্ধেক কর্মচারীর (প্রায় ৬ লাখ) কাজে আসতে হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অচলাবস্থায় দেশটিতে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি আবদুল মোমেন বলেন, এর আগেও আমরা এ ধরনের অচলাবস্থা দেখছি। ২০১৩ সালে বারাক ওবামার আমলে ১৬-১৭ দিন যুক্তরাষ্ট্রের কার্যক্রম অচল ছিল। এর মানে এ নয় যে আমেরিকার সাধারণ নাগরিকরা বিভিন্ন রকম প্রয়োজনীয় সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন। এ দফায় ডেমোক্রেটরা একটা ভালো স্ট্যান্ট নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের তরুণ অভিবাসী প্রকল্প বহাল রাখার শর্ত দিয়েছে তারা। কিন্তু মিস্টার ট্রাম্প এ শর্তে ছাড় দিতে রাজি নন। আবদুল মোমেন আরও বলেন, ট্রাম্পের নিজ দল রিপাবলিকানের কয়েকজন নেতাও তাদের নেয়া বিলের বিরুদ্ধে গিয়ে ভোট দিয়েছেন। ফলে এ শাটডাউনটা হয়েছে। এমন এক সময় এ অচলাবস্থা হল যখন ট্রাম্প তার ক্ষমতার এক বছর পূর্ণ করছেন। এক বছরে যুক্তরাষ্ট্র কোনো পরিবর্তন হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুল মোমেন বলেন, জেরুজালেম ইস্যুতে দুই রাষ্ট্র সমাধানের পথ নষ্ট করেছেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্র সংকীর্ণমনা হয়ে পড়েছে। তবে দেশের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি হয়েছে তার আমলে।

No comments

Powered by Blogger.