টাকা বন্ধ, তাই চাকা বন্ধ

ফেডারেল বাজেটের জন্য অর্থ বরাদ্দে ব্যর্থ হওয়ায় শুক্রবার মধ্যরাতের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের অধিকাংশ অফিসের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে গেছে। গভীর রাত ও সপ্তাহের শেষ দিন হওয়ায় এই চাকা বন্ধের প্রতিক্রিয়া এখনো ব্যাপকভাবে অনুভূত হয়নি। তবে দু-এক দিনের মধ্যে ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটরা যদি তাঁদের মতপার্থক্য দূর করতে না পারেন তাহলে উভয় দলই ভোটারদের রোষের শিকার হতে পারে।
হোয়াইট হাউস থেকে বলা হয়েছে, সরকারের কার্যক্রম বন্ধের প্রতিক্রিয়া যাতে সীমিত হয়, সে জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ফেডারেল সরকারের কার্যক্রম বন্ধের এই ঘটনা ঘটল ঠিক ২০ জানুয়ারি, যেদিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের এক বছর পূর্ণ হলো। ট্রাম্প নিজেকে সেরা ‘ডিল মেকার’ বা চুক্তি সম্পাদনকারী হিসেবে বারবার উপস্থিত করেছেন, অথচ তাঁর ব্যক্তিগত নেতৃত্বের অভাবেই শেষ পর্যন্ত বাজেট প্রশ্নে কোনো চুক্তি অর্জিত হয়নি। দুই দলের ছয় সদস্যের একটি গ্রুপ তাঁর বিবেচনার জন্য একটি প্রস্তাব রেখেছিল, কিন্তু সরকারের অতিরক্ষণশীল সদস্যদের আপত্তির কারণে ট্রাম্প তা প্রত্যাখ্যান করেন। শুক্রবার রাতে ডেমোক্রেটিক সিনেট নেতা চাক শুমার সমঝোতার লক্ষ্যে ব্যক্তিগতভাবে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন, কিন্তু সেখানেও কোনো সমঝোতা অর্জিত হয়নি। বর্তমানে রিপাবলিকান দলের হাতে শুধু হোয়াইট হাউস নয়, কংগ্রেসের উভয় কক্ষের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। ১৯৭৬ সাল থেকে এই পর্যন্ত মোট ১৭ বার যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল সরকারের কার্যক্রম বন্ধের ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু এই প্রথম এমন ঘটনা ঘটল যখন একই দলের হাতে সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। সরকারের কার্যক্রম বন্ধ বা ‘শাটডাউন’ চলাকালীন ৮ লাখ ফেডারেল কর্মীকে ছুটি দেওয়া হবে। এর মানে হলো এ সময় সরকারি সব পার্ক এবং স্মিথসোনিয়ান জাদুঘরগুলো বন্ধ থাকবে, পাসপোর্ট, ভিসা বা আগ্নেয়াস্ত্রের অনুমতি জুটবে না। তবে ডাক বিভাগ খোলা থাকবে। ফলে চিঠিপত্র লেনদেন করা যাবে। সামাজিক ভাতা অব্যাহত থাকবে। উভয় দলই দাবি করেছে তারা সরকারের কার্যক্রম বন্ধের বিরুদ্ধে। ডেমোক্রেটিক পার্টির দাবি, বাজেট সমঝোতার অংশ হিসেবে ‘ড্রিমার’ হিসেবে পরিচিত প্রায় আট লাখ তরুণ-তরুণী, যাঁরা এ দেশে শিশু অবস্থায় বাবা-মায়ের সঙ্গে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন, তাঁদের পূর্ণ বৈধতা দেওয়া হোক।
ওবামা আমলে তাঁদের সাময়িকভাবে বৈধতা দেওয়া হয়েছিল। চলতি বছরের মার্চের মধ্যে তাঁদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত না হলে তাঁরা অবৈধ হয়ে পড়বেন ও দেশ থেকে বহিষ্কারের হুমকির মুখোমুখি হবেন। জনমত জরিপ অনুসারে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ তাঁদের বৈধতা প্রদান সমর্থন করে। ট্রাম্প নিজেও নীতিগতভাবে ‘ড্রিমার’দের বৈধতা প্রদানে রাজি। কিন্তু তিনি শর্ত দিয়েছেন এর বদলে তাঁর প্রস্তাবিত মেক্সিকোর সঙ্গে দেয়াল তৈরির জন্য অর্থ বরাদ্দ করতে হবে এবং অভিবাসন ব্যবস্থায় বড় রকমের পরিবর্তন আনতে হবে। এই পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো এবং ভিসা লটারি ও পারিবারিক ভিসা ব্যবস্থা বাতিল। এক দিন আগে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ আরও এক মাসের জন্য বাজেট বরাদ্দ অনুমোদন করে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে। ডেমোক্র্যাটদের প্রলুব্ধ করতে এই প্রস্তাবে ‘চিপ’ নামে পরিচিত শিশু জীবনবিমা কর্মসূচির সমর্থনে আগামী ছয় বছরের জন্য অর্থ বরাদ্দের ব্যবস্থা রাখা হয়। শুক্রবার রাতে একই প্রস্তাব সিনেটে উত্থাপিত হলে মোট ৬০টি হ্যাঁ-বাচক ভোট লাভে ব্যর্থ হওয়ায় তা গৃহীত হতে পারেনি। দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ৪ জন রিপাবলিকান সিনেটর প্রস্তাবটির বিপক্ষে ও ৫ জন ডেমোক্রেটিক সিনেটর প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দেন। উভয় দলই মনে করে, সরকারের কার্যক্রম বন্ধের কারণে এ বছরের নভেম্বরে মধ্যবর্তী নির্বাচনে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দল ভোটার রোষের শিকার হবে। সর্বশেষ জনমত জরিপে অবশ্য প্রায় ২০ পয়েন্টের ব্যবধানে অধিকাংশ আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও রিপাবলিকান পার্টিকেই এই অচলাবস্থার জন্য দায়ী করেছেন, কারণ তারাই এখন ক্ষমতায়। রিপাবলিকান পার্টি দাবি করেছে, অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা প্রদানের মতো অন্যায্য প্রশ্নে ডেমোক্র্যাটদের একগুঁয়েমিপনার কারণে বাজেট বরাদ্দ প্রশ্নটি গৃহীত হয়নি। ট্রাম্পের কট্টর সমর্থকদের কাছে এই যুক্তি আদৃত হবে বলে রিপাবলিকানদের ধারণা। অন্যদিকে, ডেমোক্র্যাটরা ভাবছেন ‘ড্রিমার’দের প্রশ্নে অনড় থেকে নিজেদের সমর্থকদের মধ্যে তাঁদের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাবে এবং মধ্যবর্তী নির্বাচনে সে কারণে তাঁরা পুরস্কৃত হবেন। যেসব রিপাবলিকান-প্রধান অঙ্গরাজ্য থেকে ডেমোক্রেটিক সিনেটররা নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁরা রক্ষণশীল ভোটারদের রোষের শিকার হতে পারেন, এই বিবেচনা থেকে শুক্রবার রাতের সিনেট ভোটে বাজেট বরাদ্দ প্রশ্নে রিপাবলিকান প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন। বাজেট প্রশ্নে এই দুই দলের পিং পং খেলা অবশ্য থেমে নেই। দুই দলের নেতারাই জানিয়েছেন, এই সপ্তাহান্তের মধ্যেই একটি সমঝোতা প্রস্তাব তাঁরা চূড়ান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাবেন, যাতে সোমবার কার্যদিবসের শুরুতে সরকারের কার্যক্রমের বন্ধ চাকা ফের খুলে যায়।

No comments

Powered by Blogger.