দেশে গরু-ছাগলের সংখ্যা বাড়ছে

দেশে গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়ার উৎপাদন বাড়ছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে, কয়েক বছরে মাংসের দাম বেড়ে যাওয়ায় গবাদিপশু পালনে আগ্রহী হয়েছেন দেশের খামারিরা। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে পশুর খামার করার বেশ আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে বাজারেও গরুর মাংসের দাম কিছুটা কমেছে। ঢাকার মাংস ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রতি কেজি মাংসের দাম ৪৮০-৫২০ টাকা থেকে কমে দেশি ও ভারতীয় গরুভেদে ৪৪০-৪৮০ টাকায় নেমেছে। ঢাকার বাইরে কোনো কোনো উপজেলা শহরে দাম নেমেছে ৪০০ টাকায়। চাহিদা কম থাকা ও গরুর সরবরাহ বৃদ্ধি দাম কমার কারণ। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবে, ২০১৬-১৭ অর্থবছর শেষে দেশে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৪৭ লাখ ৪৫ হাজারে, যা আগের বছরের চেয়ে ৩ লাখ ৮৮ হাজার বেশি।
এর মধ্যে গরুর সংখ্যা বেড়েছে দেড় লাখ। দেশে গবাদিপশু পালন ও গরুর মাংস উৎপাদনে এ চিত্র উঠে এসেছে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের এক প্রতিবেদনেও। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেশে হিমায়িত গরুর মাংস আমদানির বিষয়ে মতামত চাইলে ট্যারিফ কমিশন এ প্রতিবেদন তৈরি করে। কমিশন গবাদিপশু ও মাংস উৎপাদনের তথ্য নিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কাছ থেকে। জানতে চাইলে অধিদপ্তরের পরিচালক (উৎপাদন) মো. মাজহারুল আলম আকন্দ প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষিত বেকার যুবকেরা এখন গবাদিপশুর খামার করছেন। গরু ও মাংস আমদানি না হলে মাংসের উৎপাদন ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। তিনি বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি না গরু অথবা মাংস আমদানি হোক। এটা হলে দেশের খামারগুলো ধ্বংস হয়ে যাবে।’ দেশে গরু পালনের এ প্রবণতা শুরু হয় ভারত সরকার সীমান্ত দিয়ে গরু আসার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপের পর। ২০১৪ সালে মে মাসে ভারতে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর গরু পাচার রোধে সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। এর আগে আনুষ্ঠানিক হিসাবে দেশে বছরে ২০ লাখের মতো গরু ভারত থেকে আসত। অবশ্য ভারতীয় গরু আসা কমে যাওয়ায় দেশে খামার করার সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে যে ৫ কোটি ৪৭ লাখ ৪৫ হাজার গবাদিপশু ছিল, তার মধ্যে গরুর সংখ্যা ২ কোটি ৩৯ লাখ, মহিষ ১৪ লাখ ৭৮ হাজার, ছাগল ২ কোটি ৫৯ লাখ এবং ভেড়া ৩৪ লাখ। এ সংখ্যা প্রতিবছরই বাড়ছে বলে জানিয়েছে অধিদপ্তরটি।
গরুর মাংসের দাম কমেছে
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মাংস বিক্রেতা আবুল কালাম আজাদ বলেন, তিনি এখন প্রতি কেজি গরুর মাংস ৪৪০ থেকে ৪৬০ টাকায় বিক্রি করেন। এ দর দুই মাস আগেও ৪০ থেকে ৬০ টাকা বেশি ছিল। দাম কমার কারণ জানতে চাইলে ওই বিক্রেতা বলেন, ৫০০ টাকায় গরুর মাংস কেনার সাধ্য সাধারণ মানুষের নেই। এ কারণে চাহিদা খুব কম। কাজীপাড়ার ব্যবসায়ী মো. সেলিম ছোট গরুর মাংস বিক্রি করেন। তিনি বলেন, কিছুদিন আগেও প্রতি কেজির দর ৫০০ টাকার বেশি ছিল। এখন ৪৭০-৪৮০ টাকায় বিক্রি করেন তিনি। কুষ্টিয়ার পৌরবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেখানে গরুর মাংস প্রতি কেজি ৪২০ টাকায় নেমেছে, যা কিছুদিন আগেও ৪৫০-৪৬০ টাকা ছিল। বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় গরুর মাংস বিক্রি হয় ৪০০ টাকা কেজিতে, যা কিছুদিন ৩৮০ টাকা ছিল বলে জানান সেখানকার মাংস বিক্রেতারা।

No comments

Powered by Blogger.