না বলেও যা বলে গেলেন প্রয়াত নগরপিতা by মিনা ফারাহ

পাকিস্তান আমলে মেট্রিকে ফার্স্ট ডিভিশন পেলে বাড়ি ভরে গেল আমাকে দেখতে আসা লোকজনে। সবার মুখে এক কথা, ফার্স্ট ডিভিশন কি মুখের কথা? বাবার গর্ব দেখার মতো। দুর্ভাগ্য, এক জীবনেই দেখতে হলো শিক্ষামন্ত্রীর মুখে ঘুষের ‘যোগ-বিয়োগ শিক্ষা’। এর পরও স্বপদে থাকার মতো অবিবেচক। তবে তিনি একা নন, এ জন্য দায়ী তার দল, যারা সংগ্রামী সংগঠনের বদলে সন্ত্রাসীদের এক প্রকার অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে। প্রথম দফায় ক্ষমতায় এসেছিল অদৃশ্য ভোট কারচুপি করে। দ্বিতীয় দফায় উন্মুক্ত ব্যালট লুণ্ঠন। এদের যারাই শক্তি জোগাচ্ছে, তারাই ইরাক-আফগানিস্তানে নরকের সৃষ্টি করেছে। এদের মোটিভ আজ সবার কাছে স্পষ্ট। উদ্দেশ্য, সমাজের সর্বস্তরে দুর্নীতিবাজ প্রতিষ্ঠান সৃষ্টির মাধ্যমে অঢেল টাকার ব্যবস্থা করা, যার পেছনে অন্ধের মতো ছুটবে সব মানুষ। দুর্নীতিবাজ প্রতিষ্ঠানগুলোই হবে অবৈধ টাকার একমাত্র ঠিকানা, যেগুলো ব্যবহার করা হবে দলীয় প্রতিষ্ঠানের মতো। শুরু থেকেই যুবসমাজের নীতিনৈতিকতা ধ্বংস করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে গডফাদারদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। প্রশ্নপত্র ও পরীক্ষার রেজাল্ট ফাঁস ছাড়াও টিউটোরিয়াল সিন্ডিকেট কেন এত শক্তিশালী? কারণ, দুর্নীতিবাজদের হুকুম মানতে বাধ্য নয় দুর্নীতিবাজেরা। নগরপিতার মৃত্যুতে উল্লসিত দখলদারেরা পুনরুজ্জীবিত হয়ে দখলে নেমেছে। রাষ্ট্রকে ওরা কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে সেটাই জানিয়ে গেলেন নগরপিতা। এ কাজটাই হোক তার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন। এই লেখাটির উৎসও তিনি। মেয়রকে যারাই ক্ষমতায় বসিয়েছিলেন, তারাও অনির্বাচিত হওয়ায় দখলদারদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যেতে পারেনি প্রশাসন। দুর্নীতি কখনোই পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব নয়। তবে আইনের শাসন থাকলে অনেকটাই সম্ভব। সে জন্য প্রয়োজন, নির্বাচিত সরকার। দেশের সর্বোচ্চ বিচারবিভাগ ও বিচারকদের সমন্বয়ে, জ্ঞানীগুণী নাগরিকদের মতামতের ভিত্তিতে সাব্যস্ত হয়েছিল- বর্তমান সংসদ অবৈধ। সেখানে কী হলো? দুর্নীতির রোগবালাই কোন পর্যায়ে, বেসিক ব্যাংক ‘ডাকাতির পর ফারমারস ব্যাংকের ‘মখা’ই প্রমাণ। ওদের বিচারের আওতায় আনার বদলে রাজনৈতিক পরিচয়ে আরো তিনটি নতুন ব্যাংকের ঘোষণা? শেয়ারবাজার ধসের পরও একই বক্তব্য মন্ত্রীর। কোনো জবাবদিহিতা ছাড়াই মুহিত-বাজেট প্রতি বছরই কেন আরো বৃহদাকার ধারণ করে?
উত্তর পাওয়া যাবে কুখ্যাত আমেরিকান ব্যাংক ডাকাত উইলি সাটনের কাছে। সাংবাদিকেরা জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি ব্যাংক ডাকাতি করো কেন?’ উত্তরে সাটন- ‘ব্যাংক ডাকাতি করি; কারণ, ওইখানেই টাকা।’ গত ৯ বছরে যা দৃশ্যমান- মেগাবাজেট, কুইকরেন্টাল, একনেক, পদ্মা সেতু, ৫০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ, ব্যাংক, মিডিয়া, আবাসন, সুদবাজার, গোপন ইজারা... সর্বত্রই ব্যাংক ও এর পেছনেই ছুটছে লুটেরারা। প্রয়াত নগরপিতা জানিয়ে গেলেন, বৈধ সরকার না থাকলে উল্টো দুষ্কৃতকারীরাই রক্ষা করবে অবৈধ প্রশাসন। অন্যথায়, ওয়ান-ইলেভেনের মতো হয় জেলে, নয় পালিয়ে বাঁচতে হবে। ফিরে এসে আরো বেশি অদম্য এরা। উদ্দেশ্য, ২০৪১ পেরিয়ে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রই দখলে রাখা। অন্যথায় ব্যাংক থাকবে না, ডাকাতিও সম্ভব নয়, টাকার খায়েশ ধুলায় মলিন হয়ে যাবে। ১৬তম সংশোধনী বাতিলের বিষয়টিকে খুব কমই গুরুত্ব দেয়া হলো। সিনহাকে চাকরিচ্যুত করার পেছনের শক্তি- আন্তর্জাতিক। হ্যাঁ, ১৬তম সংশোধনী বাতিল হবে। অবৈধরাই বিচারপতিদের বিচার করবেন- করছেনও। সিনহা বনাম খায়রুল হকদের দৃষ্টান্ত একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকার। সিনহা চ্যাপ্টার শেষ, গ্যাংস্টারদের এবার ঠেকায় কে? তবে ওরা শুধু এখন আর আওয়ামী লীগেই সীমাবদ্ধ নয়। রসিক নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলতে চেয়েছেন, এই প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন দিলে বিএনপির সমস্যা নেই। ব্রিটিশ আমল থেকেই ‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’ বলে কথা। অনেকেরই মোটিভ সম্পর্কে জনমনে স্পষ্ট ধারণা নেই। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপি ইডিয়ট পার্টি, লিডাররা স্টুপিড। দলনেত্রী এদের নাম দিয়েছেন, ভূত-পেত্নি (ইত্তেফাক, ৩১ ডিসেম্বর)। এরকম একটি অকেজো বিরোধী দল থাকলে ২০০ বছর ক্ষমতায় থাকা কোনো ব্যাপার? ‘জোট সরকার দুর্নীতি করেনি’ বলব কেন? তবে ১১ বছর ক্ষমতায় না থাকাটা বিশাল ব্যাপার। এ কারণে তাদের কর্মকাণ্ড এখন অপ্রাসঙ্গিক এবং বর্তমান জনজীবনেও প্রভাবহীন। ৯ বছর ক্ষমতায় থেকেও জোট সরকারকে প্রত্যেকদিন যারাই ‘অগণতান্ত্রিক’ আখ্যা দিয়ে নিজেদের ‘নির্বাচিত’ সরকার বলে দাবি করে, তারাই ৪৭ বছরের শ্রেষ্ঠ দুর্নীতিবাজ। এদের সিন্ডিকেট এত বিশাল, যার তলে মাটিচাপা পড়ে বহু আগেই ‘খাম্বা দুর্নীতি’র মৃত্যু হয়েছে। তদুপরি বর্তমান ‘খাওয়া ভবনের’ তুলনায় ‘হাওয়া ভবনকে’ শিশু বললেও ভুল হবে, বরং ভ্রুণ। নির্বাচিত সরকার থাকলে মন্ত্রীর জামাই তারেক সাঈদসহ ২৬ খুনির ফাঁসির রায় কার্যকর করা কিংবা হলমার্কের তানভীরের উপযুক্ত শাস্তির জন্য এতকাল অপেক্ষা করতে হতো কী? ব্যাংকখেকো বাচ্চু এবং মখাকে নিয়ে যখন তোলপাড় হওয়ার কথা, উল্টো সবাই ব্যস্ত অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা নিয়ে! যেন দাউদ ইব্রাহিমের বিচার করছে পুরান ঢাকার আদালত। অন্যান্য নেতাকর্মীর কথা বাদই দিলাম, সপ্তাহে একাধিকবার হাজিরা দিতে হচ্ছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে, আর ফুরফুরে বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে সাবেক আতিউর, বাচ্চু, মখা প্রমুখ।
বলছি, গডফাদার সিন্ডিকেটের নেটওয়ার্কের কথা। আওয়ামী তিন টার্মেই শেয়ারবাজার দুর্নীতি ও আবাসন খাতে ধস। প্রতিষ্ঠান দুটো এখনো ‘কোমায়’। এর সাথে জড়িতদের অনেকেই প্রশাসনে। এক বিলিয়নিয়ার হাইকমান্ডের রাজনৈতিক উপদেষ্টাও! যুগান্তর পত্রিকা একাধিকবার তার ব্যাপক অর্থ কেলেঙ্কারি এবং জিএমজি এয়ারলাইন্সের ৩০০ কোটি টাকা খেয়ে ফেলা নিয়ে বিস্তারিত লিখেছিল। কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের শিরোমণি এই লোক, ৩২ নম্বরের ত্রাণ তহবিলের দানবীরদের শীর্ষে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলেই এসব রোগবালাই ছড়ায়, কিন্তু কাউকেই জেলে যেতে হয় না। সরকারি ও বেসরকারি- যা হচ্ছে ব্যাংকে। গ্যাংস্টাররাই ভুয়া ব্যবসায় খুলে বন্ধ দরজার ভেতরে ঋণ লেখে। নিজেরাই গ্রাহক, প্রাপক, পাচারকারী। আন্ডার ইনভয়েস, ওভার ইনভয়েস, ভুয়া দলিল। ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করা সবচেয়ে সহজ। উদাহরণ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৮০০ মিলিয়ন ডলার উধাওয়ের সময়কালীন গভর্নর। মখা-বাচ্চুর মতোই তিনিও নিরাপদে! তিনি জানেন না, হতেই পারে না।
কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের কয়েকটি নমুনা-
যিনি পরিবহন শ্রমিকনেতা, তিনিই মন্ত্রী। যিনি এমপি, তিনিই সারাক্ষণ মাল্টিমিলিয়ন ডলারের ক্রিকেট নিয়ে ব্যস্ত। যিনি সংস্কৃতিমন্ত্রী, টেলিভিশন খুললেই বিজ্ঞাপনে তার কণ্ঠ। যিনি সড়কমন্ত্রী, তিনিই মহাসচিব, তিনিই আওয়ামী লীগের সবচেয়ে ‘বড় মাইক’। তার মন্ত্রণালয়ের অবহেলায় সড়কে প্রতিদিনই মৃত্যুর মিছিল। সড়কে সময় দেয়ার মতো সময় তার হাতে নেই। বরং ব্যস্ত বড়বড় কাজে। উদাহরণস্বরূপ, অমৃতাক্ষর ছন্দে প্রতিদিনই যাত্রাগানের গায়কের সুরে বলেই যাচ্ছেন, এই নেত্রীকে সরকার প্রধানে রেখে নির্বাচন। ‘নাকে খত দিয়ে নির্বাচনে আসবে বিএনপি।’ ছয় বছর পরও পদ্মা সেতুর একটা ঠ্যাং ছাড়া আর কী দেখালেন! এ দিকে সড়কমন্ত্রীর উন্নয়নের মহাসড়কে ব্যাপক ধস। এই সরকারের আমলে ভূমিদস্যুরা সবচেয়ে বেশি বেপরোয়া। ৯ বছরে কতগুলো বস্তিতে আগুন এবং কারা দিচ্ছে? বস্তিসিন্ডিকেট এত বেশি শক্তিশালী, কালশীর দুই বছর পর আবারো জ্বালিয়ে দিলো মিরপুরের বস্তি। অথচ কালশীতে ৯টি মৃত্যুর ঘটনায় সরাসরি স্থানীয় এমপি যুক্ত থাকার প্রমাণ মিডিয়ায় থাকা সত্ত্বেও কিছুই হলো না। আবার বলছি, জীবিতাবস্থায় একজন অসহায় মেয়রের কথা, যার মৃত্যুর পরই দখলদারেরা বেজায় খুশি।
বাংলাদেশে গুম এখন টক অব দ্য ওয়ার্ল্ড। উত্তরে হাইকমান্ড- ‘ইংল্যান্ড-আমেরিকাতেও গুম হয়।’ এর একটি সুষ্ঠু জবাব প্রয়োজন। কারণ এভাবে গুমের ঘটনা মেনে নেয়া যায় না। শুধুই কী ২০ দল? গুমের তালিকায় মিডিয়া, সাংবাদিক, পদক, কবর, পানামা পেপার্সের ২৬ আওয়ামী লীগার। হঠাৎ বাড়ি ঘেরাও করে অভিযানের তোলপাড়। সব মিডিয়া তখন অভিযানের দিকে ছোটে। দেশী সন্ত্রাসীরা কিন্তু বিদেশীদের মতো বাজার, ধর্মাঙ্গন বা বিয়ের অনুষ্ঠানে আত্মাহুতির ঘটনা ঘটায় না। কিন্তু রাষ্ট্র যেন কোত্থেকে আগাম খবর পায়, কোন বিশেষ বাড়িতে সন্ত্রাসীরা রয়েছে। অভিযান শেষে শুধু সন্ত্রাসীরাই মরে। ঘটনাগুলো তখনই বেশি ঘটে, যখন অবৈধ সরকারের ভিত নড়েচড়ে ওঠে। করাপশনের গভীরে পৌঁছানোর দায়িত্ব যাদের, সেই দুদক ও বিচারবিভাগ সরব নয় কেন? গুপ্ত আস্তানা ফেরত ভিকটিমদের প্রত্যেকের ঘটনাই হুবহু। মিছির আলী কিংবা দস্যু বনহুর সিরিজের মতোই রহস্য। চোখ বেঁধে ফেলে ৩ ঘণ্টার যাত্রা। এরপর বনাঞ্চলের গহীনে একটি বাড়ির শানবাঁধা মেঝেতে দিনের পর দিন রাখা। দরজার নিচ দিয়ে খাবারের প্লেট। দুই সপ্তাহ পরপর বাইরে এনে কিছুক্ষণের জন্য চোখ খুলে দেয়া। মারপিট না করা। ফেরার পথেও ৩ ঘণ্টার যাত্রা। নামিয়ে দেয়ার সময় একই বক্তব্য। ‘পেছন ফিরে তাকাস না, তাকলেই গুলি করব।’ উৎপল দাসরা নিশ্চয়ই মামাবাড়িতে বেড়াতে যান না। কিন্তু ফিরে এসে সবাই বোবা কেন? নাকি সবাই কণ্ঠনালী জমা রাখার শর্তে ফেরত আসে! বিএনপির দুই নেতাকে গুমের দীর্ঘ দিন পর হঠাৎ গ্রেফতার দেখাল পুলিশ। এরপরই জেলহাজতে রেখে রিমান্ড চাওয়া। যুক্তিবাদীরা বলবেন, ‘ভিকটিমদের প্রথম এবং দ্বিতীয় গুম-বাড়ির ঠিকানা একটাই!’ যারা সন্ত্রাসীদের আগাম তথ্য জানার মতো পারদর্শী, নিশ্চয়ই ‘গুম-বাড়িটিও’ বের করার মতো পারদর্শী।
এতকিছু বলার কারণ, অনুন্নত দেশে ১৬ কোটি মানুষের দায়িত্ব নেয়া সবচেয়ে কঠিন কাজ। কর্মসংস্থান, আইনের শাসন, মানবাধিকার... প্রতিটি ইঞ্চিতে চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশ ছাড়াও ভেনিজুয়েলা, নাইজারের মতো দেশে গণতন্ত্রের নামে বিরাট ধাপ্পাবাজি। অনেক দেশে বন্দুকের নলের মুখে ভোটের বাক্স ভরে নিজেরাই ক্ষমতায়। ফলে বছরজুড়েই উত্তেজনা, অসন্তোষ, বিক্ষোভ, রায়ট, টিয়ার-গ্যাস, গুম-খুন...। ঢাকা এয়ারপোর্টের পুলিশের পক্ষ থেকেও চমৎকার তথ্য। শ্রমিকেরা নাকি কামলা। সত্যিই তাই। কারণ বিশেষ রাজনৈতিক দলের ভরণপোষণ জোগাতে গিয়ে অন্যদের কর্মসংস্থানের জায়গাগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। উপজেলা থেকে রাজধানী, সর্বত্রই চাকরির পূর্বশর্ত, দলের কিনা! রাজনৈতিক পরিচয়ের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের এত বেশি ক্ষতি হয়েছে, যে জন্য লাখ লাখ যুবক বেকার। প্রতি বছরই পুরনো বেকারদের সাথে যোগ হচ্ছে আরো কয়েক লাখ। এরাই কর্মসংস্থানের অভাবে কেউ যোগ দিচ্ছে সিন্ডিকেটে, কেউ বিদেশে যেতে মরিয়া। ২০১৭ সালেই গেছে ১৩ লাখের বেশি। আওয়ামী লীগের আমলে যোগ হয়েছে ‘মহিলাকর্মী’, আসলেই যাদের এক প্রকার যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহারের তথ্য মিডিয়ায়। বেকারত্ব থেকে অস্থিরতা। অস্থিরতা থেকে নৈরাজ্য। আগুন সামলাতে বিদেশে নতুন নতুন শ্রমবাজার খুলতে মরিয়া হাইকমান্ড। দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করা প্রায় শেষ। বেঁচে আছে ফেইক নিউজের ওপর। একমাত্র বৈধ সরকারই পারে এসবের ঊর্র্ধ্বে ওঠে জনকল্যাণে কাজ করতে। ‘সুশৃঙ্খল রাষ্ট্রই বৈধ উপায়ে জীবন-জীবিকা নিশ্চিত করতে পারে।’ গুম বিষয়ে হাইকমান্ডের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমের রেফারেন্স দিচ্ছি। যারা আইনের বাইরে গিয়ে বড়লোক হতে চায়, পশ্চিমের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের প্রতিহত করে। আর যারা সৎ পথে চলে, রাষ্ট্রই প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়। বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে পশ্চিমের অর্থনৈতিক ঊর্ধ্বগতির সাথে যুক্ত হতে পেরেছে সারা বিশ্বের মানুষ। ওয়াল স্ট্রিটের সৌজন্যে গত ৩০ বছরে মিলিয়নিয়ার-বিলিয়নিয়ারদের বিস্ফোরণ ঘটেছে। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯৫ সালে যারা অ্যামাজন স্টকে এক ডলার বিনিয়োগ করেছে, বর্তমান মূল্য ৪০ হাজার ডলার। সার্বিক আবাসন খাতের মূল্য প্রায় ৩২ ট্রিলিয়ন ডলার। ২০১৭ সালে ডাউজোন্সের মূল্য বেড়েছে ২৭ শতাংশ। বুঝলাম, আমেরিকাতেও গুম হয়; কিন্তু এই প্রশ্নেরও উত্তর প্রয়োজন : ‘আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে, প্রতিবারই আবাসন এবং শেয়ারবাজারে ধস নামে কেন? মেয়রের মৃত্যুর পরই দখলদারেরা আবারো সক্রিয় কেন?’
সমস্যার গোড়া, ৫ জানুয়ারির রোগবালাই। এর সাথে জড়িতদের বিচার হয়নি বলেই, রন্ধ্রে রন্ধ্রে গ্যাংস্টারদের বিস্তার। পুলিশের ঘুষ খাওয়া যেমন ওপেনসিক্রেট, তেমনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও ‘সহনীয় মাত্রা’র অনুমোদিত ঘুষের ফরমান জারি করলেন মন্ত্রী নিজে। জিয়া অরফানেজের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি ক্ষয় করলেও মইনু-ফখরু সরকারকে বৈধতার ঘোষণা দিয়েছিলেন কে? যুদ্ধাপরাধীদের ফিরিয়ে আনতে মিলিয়ন-মিলিয়ন ডলার ব্যয়; কিন্তু এই দুইজনকে ফিরিয়ে আনতে আগ্রহ না থাকার কারণ কী? ওয়ান-ইলেভেনের ষড়যন্ত্রের শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হোক। তবে সবার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গেলেন প্রয়াত নগরপিতা। ‘রুদ্ধদ্বার বৈঠকে আওয়ামী লীগ নেতাদের কী বলেছেন জয়’- পরিচয়, নিউ ইয়র্ক, ২০ ডিসেম্বর। সারাংশ এরকম- ১. ব্যাপক হারে জোট সরকারের দুর্নীতি প্রচারের নির্দেশ; ২. মিডিয়াসহ রাস্তা ও সব প্রচারযন্ত্র দখলে রাখা; ৩. ব্যাপক হারে ক্ষমতাসীনদের উন্নয়ন প্রচারে বাধ্যবাধকতা; ৪. যেকোনো মূল্যে আওয়ামী লীগকেই আবারো ক্ষমতায় আনা।
সারমর্ম : অবৈধ সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে সঙ্ঘবদ্ধদের মধ্যে সব দলেরই লোক। কারণ সৎভাবে জীবিকার সুযোগ ধ্বংস করায় দুর্নীতিবাজদের সমর্থন না করলে না খেয়ে মরতে হবে।
ই-মেইল : farahmina@gmail.com
ওয়েবসাইট : www.minafarah.com

No comments

Powered by Blogger.