চৌগাছায় নির্মাণাধীন খাদ্য গুদামের ছাদ ধসে ৫০ শ্রমিক আহত

যশোরের চৌগাছায় নির্মাণাধীন উপজেলা খাদ্য গুদামের ছাদ ধসে কমপক্ষে ৫০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৮ জনকে চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। আজ রোববার বিকেল ৫টার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার সাথে সাথেই নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ঢাকার ঢালী কনস্ট্রাকশনের সাইট ইঞ্জিনিয়ার তারিকুল ইসলাম ও কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠান স্থপতি সংসদের সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল মাজিদ তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ করে ঘটনাস্থল ছেড়ে পালিয়ে যান। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রকল্পের আওতায় বৈদেশিক অর্থায়নে ১.০৫ লাখ মেট্রিক টন ক্যাপাসিটির নতুন খাদ্য গুদাম প্রকল্পের আওতায় এক হাজার মেট্রিকটন খাদ্য গুদামের ভবন ছিল এটি। একটি প্যাকেজে মোট ছয়টি খাদ্য গুদামের নির্মাণ কাজের একটি চৌগাছার নতুন এই ভবন। আহত শ্রমিকরা হলেন- মুকুল (২৫), আল-আমীন (২২), হরিপদ (২০), কৃষ্ণ (৪৫), সেলিম (২৬), আবুল কাশেম (২৩), জনি (৩০), ইমান আলী (২৬), শফি (২১), ইকবাল (২৭), মজনু (২৭), আঃ রউফ (২৫), রফিকুল (২৭), আব্দুল (২৭), আজিজুর (৩২), তবিবর (২৬), আনিছুর (৩৪), কানাইসহ (২৪) কমপক্ষে ৫০ জন। খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলার লেবার সর্দার মোহাম্মদ আলী বলেন, প্রায় নয় হাজার বর্গফুটের এই ছাদ এবং বিমের ঢালাই একসাথে চলছিল। বেলা ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত একটানা ঢালাই শেষে আমার নেতেৃত্বে ৩৯ জন লেবার গোসল সেরে ফিরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলাম। এসময় উপরে থাকা শ্রমিকরা নেমে আসছিল। হঠাৎ বিকট শব্দে বিমসহ সম্পূর্ণ ছাদ ধসে পড়ে। এসময় উপরে এবং পাশে থাকা পঞ্চাশের অধিক শ্রমিক কম-বেশি আহত হন।
তিনি বলেন, ভীতের মাটি নরম থাকা, বিম আগে ঢালাই না দেয়াই একসাথে প্রায় নয় হাজার বর্গফুট ছাদের ঢালাই দেয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে। এর আগে লোকাল বালির স্থলে মাটি দিয়ে ভিত ভরাট, কুষ্টিয়া এবং সিলেট বালির স্থলে লোকাল বালি দিয়ে ভবন নির্মাণ, প্রথম শ্রেণির ইটের পরিবর্তে তৃতীয় শ্রেণির ইট ব্যবহার, রেইন কার্টার ইট দিয়ে গাথুনি, নুড়ি পাথর ব্যবহার, ল্যাপিং রডে ঝালাই না করা, কর্মস্থলে সাইনবোর্ড না রাখাসহ নানা অনিয়মের বিষয়ে ১৯ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে গেলে কনসাল্টেন্সি ফার্মের সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল মজিদ সাংবাদিকদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে বিচার দেন। তখন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নার্গিস পারভীন চৌগাছার সাংবাদিকদের খাদ্যগুদামের কাজে হয়রানি না করার জন্য বলেন। এরপর আজ রোববার এ দুর্ঘটনা ঘটল। এ বিষয়ে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা সালমা চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একজন প্রজেক্ট ডাইরেক্টর রেজাউল করিম ঢালাইয়ের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন আপনারা তার কাছে বিষয়টি জিজ্ঞেস করুন।’ অন্যদিকে উপজেলা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা কার্তিকচন্দ্র দেবনাথ বলেন, ‘আজ প্রথম দিনের ঢালাইয়ের কাজ চলছিল। প্রথম দিনের কাজ শেষে নির্মাধীন ওই ছাদ ধসে পড়ে।’ এ বিষয়ে চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নার্গিস পারভীন বলেন, ‘আমি ঘটনা শুনেছি। ভবনটির নির্মাণাধীন ছাদ ধসে পড়ার সময় কনসাল্টেন্সি ফার্ম এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঢালী কনস্ট্রাকশনের সাইট ইঞ্জিনিয়ার ঘটনাস্থলে অবস্থান করছিল।’

No comments

Powered by Blogger.