মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে হস্তক্ষেপ করে আসছেন। সম্প্রতি ইরানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের প্রতি তিনি সমর্থন জানিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার টুইটার বার্তায় দাবি করেছেন তার ভাষায়, ইরানের সরকার দেশের বাইরে সন্ত্রাসীদের অর্থের যোগান দিতে গিয়ে জাতীয় সম্পদের যে অপচয় করছে তারই প্রতিবাদে দেশটির জনগণ শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করছে। ইরান সরকারের উচিত জনগণের অধিকার ও বিশ্বাসের প্রতি সম্মান দেখানো এবং বিশ্ববাসী ইরানের ঘটনাবলী গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট কূটনৈতিক শিষ্টাচার ভঙ্গ করে ইরানসহ বিভিন্ন স্বাধীন দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের প্রতি সমর্থন যুগিয়ে আসছেন। বর্তমানে দেশটির কয়েকজন রাজনীতিবিদও ইরানে সৃষ্ট বিক্ষিপ্ত গোলযোগ ও অসন্তোষের বিষয়ে নানা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করছেন এবং তিলকে তাল বানিয়ে এ ইস্যুতে ইরানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছেন। আমেরিকার এই কর্মকর্তারাই বছরের পর বছর ধরে ইরানের বিরোধিতার করে আসছেন এবং তেহরান বিরোধী নানা পদক্ষেপ নিচ্ছেন। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, বিচ্ছিন্ন গোলযোগের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইরানে মার্কিন হস্তক্ষেপের মাত্র একদিন আগে ওয়াশিংটন ও তেলআবিব তেহরানের বিরুদ্ধে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের বিষয়ে সম্মত হয়। ধারণা করা হচ্ছে, ইরানে সাম্প্রতিক গোলযোগের প্রতি সমর্থন দেয়া ছিল ওই গ্রুপ গঠনের উদ্দেশ্য।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ইরানের জনগণের বিরুদ্ধে শত্রুতায় লিপ্ত। পরমাণু প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে, নতুন নতুন নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দিয়ে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিকে হুমকি হিসেবে তুলে ধরে, দেশটির ইতিহাস ঐতিহ্যকে অবমাননা করে, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সমর্থনের মিথ্যা অভিযোগ তুলে হোয়াইট হাউজ দীর্ঘদিন ধরে ইরানের জনগণের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে। কিন্তু সর্বশেষ ইরানে সৃষ্ট বিচ্ছিন্ন গোলযোগকে অজুহাত করে আমেরিকা নতুন করে হস্তক্ষেপ করা শুরু করেছে। ওয়াশিংটনের বিভিন্ন দেশে সরকার বিরোধী গ্রুপগুলোকে উস্কানি দেয়ার নজির রয়েছে এবং বহুবার রঙিন বিপ্লবের ওই থিওরি ওইসব দেশে বাস্তবায়ন করেছে। তাদের ধারণা ছিল ইরানের সরকারের বিরুদ্ধেও একই কৌশল প্রয়োগ করা যাবে। মধ্যপ্রাচ্যে দায়েশ সন্ত্রাসীদেরকে লেলিয়ে দিয়েও ব্যর্থ হওয়ার পর এখন মার্কিন সরকার ভেবেছিল কিছু মানুষের অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে তারা হয়তো এই সুযোগে চির শত্রু ইরানের সরকারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে পারবে। ইরানের জনগণের মধ্যে ওয়াশিংটনের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। এ ছাড়া দায়েশ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক বিজয়ে ফলে আমেরিকার এ অঞ্চলে আসন গাড়ার কোনো সুযোগই নেই। আমেরিকা পশ্চিম এশিয়া তথা মধ্যপ্রাচ্যে সাম্প্রতিক যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর এখন ইসরাইল ও সৌদি আরবের সহযোগিতায় ওই ব্যর্থতা নানাভাবে পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। বিশ্লেষকরা ইরানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমর্থনকে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে সর্বশেষ তীর ছোঁড়ার ঘটনা হিসাবেই দেখছেন এবং এ প্রক্রিয়া নতুন বছরেও অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তারা লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে না।

No comments

Powered by Blogger.