রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাখাইনে ক্যাম্প নির্মাণ

প্রত্যাবাসন চুক্তির আওতায় মিয়ানমার সরকার বাংলাদেশ থেকে যেসব রোহিঙ্গাকে ফেরত নেবে তাদের রাখার জন্য রাখাইন রাজ্যে ক্যাম্প তৈরি করছে সেদেশের প্রশাসন। ফিরিয়ে নেয়ার পর তাদেরকে নিজ নিজ বাড়িঘরে ফিরতে না দিয়ে এসব ক্যাম্পে একরকম বন্দি রাখা হবে বলে দাবি করেছেন রোহিঙ্গারা। রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলের তাওংপিওয়ো লেটওয়ে (বার্মিজ নাম) গ্রামে একটি পুলিশ চেকপোস্টের পাশেই ইতোমধ্যে দু’টি ক্যাম্প নির্মাণ করা হয়েছে। মিয়ানমার সরকার বলছে, ফিরিয়ে নেয়া রোহিঙ্গাদের সাময়িকভাবে ওই ক্যাম্পে রাখা হবে। কিন্তু এ খবরে আতঙ্কিত রোহিঙ্গারা। তারা মিয়ানমারে ফিরে আবারও নির্যাতনের মুখোমুখি হতে চান না। এছাড়া তারা সহায় সম্পত্তি ফিরে পাওয়া না পাওয়া নিয়েও হতাশায় ভুগছেন। তবে মিয়ানমারে ফিরে যেতে আগ্রহী হিন্দু উদ্বাস্তরা। ২২ ফেব্রুয়ারি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর প্রথম দিকেই চার শতাধিক হিন্দু রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু এসব রোহিঙ্গার মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশা। তারা বলছেন, তাদের ফেলে আসা সহায় সম্পত্তি, ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট ফিরে পাবেন কি না তার কোনো নিশ্চিয়তা নেই। হিন্দু উদ্বাস্তু ক্যাম্পের মাঝি মধুরাম শীল (৩৪) জানান, মুখোশধারী লোকজন তাদের বাড়িতে লুটপাট করে এদেশে চলে আসতে বাধ্য করে। তারা দেশ ছাড়তে না চাইলে ওই মুখোশধারীরা গুলি করে অনেক হিন্দুকে হত্যা করেছে।
যে কারণে অনিচ্ছা সত্বেও তাদেরকে এদেশে চলে আসতে হয়েছে। এখানে ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়ে চাহিদা মতো ত্রাণ সামগ্রী পাওয়া গেলেও তাদের মন কাঁদছে ফেলে আসা ভিটে-মাটি ও সহায় সম্পত্তির জন্য। জগদীস শীলসহ কয়েকজন হিন্দু নারী-পুরুষ জানান, মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার খবর পেয়ে তারা খুশি হয়েছেন। সেখানে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে তারা বলেন, তাদের গ্রামের পাশে একটি পুলিশ ক্যাম্প রাখতে হবে। তা না হলে মুখোশধারী সন্ত্রাসীরা তাদের উপর আবারো হামলা করতে পারে। তারা আরো বলেন, তাদের জায়গা-জমি বাড়ি ঘর ফেরত দেয়া নিশ্চিত করতে হবে এবং ক্যাম্পে না রেখে নিজ নিজ বাড়ি ঘরে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। শনিবার সকালে ক্যাম্পে গিয়ে দেখা যায়, হিন্দু শরনার্থীরা তাদের জিনিসপত্র গোছগাছ করছেন। জানতে চাইলে রাখাইনের চিকনছড়ি থেকে পরিবারের সাত সদস্য নিয়ে পালিয়ে আসা সুরুদন পাল (৬০) জানান, তিনি চিকনছড়ি বাজারে ব্যবসা করতেন। তার প্রায় ১৫ কানি জমির পাকা ধান কেটে নিয়ে গেছে। ঘরটি পুড়িয়ে দিয়েছে। গরু ছাগল লুটপাট করেছে। প্রত্যাবাসনের আওতায় রাখাইনে ফিরে গিয়ে কি খাবেন তা নিয়ে দুচিন্তায় ভুগছে পরিবারটি। এভাবে বেশ কয়েকটি পরিবার তাদের দুঃখ দুর্দশার কথা সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরে। উখিয়া পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও ইউপি সদস্য স্বপন শর্মা রনি বলেন, ২২ ফ্রেব্রুয়ারি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। শুরুতেই হিন্দুদের ফেরত পাঠানোর মধ্য দিয়ে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার উদ্বোধন করা হবে। তিনি বলেন, এখানে আশ্রয় নেয়া হিন্দুরা ফিরে যেতে আগ্রহী। তবে সেখানে তাদের হারানো সহায়-সম্পত্তি ফিরে পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে মিয়ানমার সরকারকে।
রোহিঙ্গা পল্লীতে লুট
এদিকে রাখাইনের বুচিডং অঞ্চলে এখনো থাকা রোহিঙ্গাদের উপর নিপীড়ন চালাচ্ছে সেনাবাহিনী ও রাখাইন বৌদ্ধরা। তারা রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও সম্পদ লুট করছে। গত সোমবার উপজেলার নদীপাড়ের তংবাজারে রোহিঙ্গাদের মারধর করে বাড়িঘরের দামি আসবাবপত্র, স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা, মোবাইল সেট, সৌর বিদ্যুৎ প্যানেল, গৃহপালিত পশু-পাখি ও ক্ষেতের ফসল লুট করে সনা সদস্য ও বৌদ্ধরা। রোহিঙ্গারা এসবের কোনো প্রতিবাদ করতে পারে না। কেননা, প্রশাসন রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন করার জন্য এদেরকে লেলিয়ে দিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.