সঙ্কট এড়াতে কানাডা থেকে তিনটি উড়োজাহাজ কিনছে বিমান

সঙ্কট এড়াতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জন্য তিনটি নতুন উড়োজাহাজ কেনা হচ্ছে। এগুলো কেনা হবে কানাডা থেকে। উড়োজাহাজগুলো কেনার জন্য কানাডা সরকার ঋণও দেবে। ৭০ থেকে ৮০ আসনবিশিষ্ট টার্বোপ্রপ (ড্যাশ৮-কিউ৪০০এনজি) উড়োজাহাজগুলো সরাসরি ক্রয়চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয়পর্যায়ে কেনা হবে। এ জন্য কোনো টেন্ডার দেয়ার প্রয়োজন পড়বে না।
এ ধরনের উড়োজাহাজের একমাত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কানাডার ‘বম্বারডিয়ের ইঙ্ক’ এগুলো সরবরাহ করবে। আজ বুধবার ‘অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নীতিগত অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে। বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, রাষ্ট্রীয়পর্যায়ে (জিটুজি) সরাসরি ক্রয়চুক্তির মাধ্যমে এই উড়োজাহাজ তিনটি ক্রয় করা হবে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিমান ‘কানাডিয়ান কমার্শিয়াল কো-অপারেশন’ (সিসিসি)-এর সাথে চুক্তি করবে। পাশাপাশি উড়োজাহাজ ক্রয়ে কানাডা সরকারের প্রতিষ্ঠান ‘এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট কানাডা’ (ইডিসি) থেকে বাংলাদেশ বিমানের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। জানা যায়, বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ বিমানের বহরে মোট ১৩টি উড়োজাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে ৬টি বিমানের নিজস্ব, অপর ৭টি ভাড়ায় সংগৃহীত। বিমানের নিজস্ব উড়োজাহাজের মধ্যে চারটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর ও ২টি বোয়িং ৭৩৭-৮০০। ভাড়ায় সংগৃহীত উড়োজাহাজগুলোর মধ্যে একটি অভ্যন্তরীণ রুটে (ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, সৈয়দপুর, যশোর, বরিশাল ও কক্সবাজার) এবং একটি আন্তর্জাতিক রুটে (ঢাকা, কলকাতা, কাঠমান্ডু, ইয়াংগুন) ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব রুটে বেশি যাত্রী সেবার সুযোগ থাকায় বাংলাদেশ বিমানের বহরে দীর্ঘ মেয়াদে নিজস্ব উড়োজাহাজ বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করছে সংস্থাটি। বিমান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী জানুয়ারি ও মার্চে রি-ডেলিভারির জন্য ২টি উড়োজাহাজ বিমান বহর থেকে অপসারণ করা হবে এবং ২০২২ সালের শুরুতে আরো ৪টি উড়োজাহাজ ফেরত দেয়া হবে। ফলে বিমান বাংলাদেশের বহরে বিমান সঙ্কট দেখা দেবে। অন্য দিকে ভাড়ায় সংগৃহীত ২টি ড্যাশ ৮-কিউ৪০০ উড়োজাহাজের প্রতিটির রক্ষণাবেক্ষণ ও অন্যান্য খরচ ব্যতীত শুধু মাসিক ভাড়া বাবদ ১ লাখ ৬৮ হাজার ডলার ব্যয় করতে হচ্ছে।
বিমানে ড্যাস-৮ কিউ ৪০০ থেকে এনজি বা এ ধরনের ৭০ থেকে ৮০ আসনের টার্বোপ্রপ উড়োজাহাজ ক্রয় করা হলে ব্যয়ের সাশ্রয় হবে। এ বিষয়গুলো বিবেচনায় বাংলাদেশ বিমানের জন্য তিনটি উড়োজাহাজ ক্রয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, উড়োজাহাজ তিনটি ক্রয়ের জন্য ইতোমধ্যে কানাডয় বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এরপর বিক্রয় প্রস্তাব পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং নোগোসিয়েশন করার লক্ষ্যে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের একজন যুগ্ম সচিব ও সংসদবিষয়ক বিভাগের একজন যুগ্ম সচিব, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের একজন যুগ্ম সচিব, অর্থ বিভাগের একজন উপ-সচিব এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির মাধ্যমে নেগোসিয়েশন কার্যক্রম চলছে। এ বিষয়ে বিমান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আমাদের অনেক সম্ভাবনাময় রুট থাকা সত্ত্বেও স্রেফ উড়োজাহাজ সঙ্কটের কারণে এই রুটগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। যেমন ইতালি ও জাপানে অনেক বাংলাদেশী বসবাস করে। একসময় এসব দেশে বিমান ফ্লাইট পরিচালনা করত। তবে ভুল ব্যবস্থাপনা ও উড়োজাহাজ সঙ্কটের কারণে এই রুটে এখন আর বিমানের ফ্লাইট চলে না। এখন চেষ্টা করা হচ্ছে নতুন উড়োজাহাজ সংগ্রহ করে বন্ধ হয়ে যাওয়া রুটগুলো চালু করা যায় কি না।

No comments

Powered by Blogger.