‘সিদ্দিক হত্যার নির্দেশদাতা প্রবাসী ছাত্রদল নেতা’

ইউরোপপ্রবাসী এক ছাত্রদল নেতার নির্দেশে বনানীর রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক সিদ্দিক হোসাইন মুন্সীকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা হেলাল উদ্দিনকে বুধবার প্রেস ব্রিফিংয়ে হাজির করে এ তথ্য জানান ডিএমপির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তবে এ তথ্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সিদ্দিক মুন্সীর স্বজনরা। এদিকে দুপুরে আদালতে হেলালকে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর গুলশান থানার কালাচাঁদপুর এলাকা থেকে কিলিং মিশনের ‘অপারেশনাল কমান্ডার’ হেলালকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বুধবার সকালে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে প্রেস ব্রিফিংয়ে তাকে হাজির করা হয়। এতে ডিএমপির অতিরিক্ত ডিআইজি ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ইউরোপ প্রবাসী এক ছাত্রদল নেতার নির্দেশে এ খুনের ঘটনা ঘটেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হেলাল জানিয়েছে পূর্ব পরিচিত ওই ছাত্রদল নেতা তাকে (হেলাল) বলেছিলেন সিদ্দিক মুন্সীর (রিক্রুটিং এজেন্সি মালিক) অফিসে মোটা অংকের নগদ টাকা পাওয়া যাবে। তবে শুধু টাকার জন্য এ খুনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে- এমন তথ্য খোদ তদন্ত সংশ্লিষ্টরাও বিশ্বাস করছে না। সিটিটিসি ইউনিটের প্রধান মনিরুল জানান, প্রবাসী ছাত্রদল নেতা হয়তো অন্য কারও কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা পেয়ে হেলালকে এ হত্যার দায়িত্ব দিয়েছিল। খুনের পরিকল্পনাকারী দেশে অথবা বিদেশে থাকতে পারে মন্তব্য করে মনিরুল বলেন, রিমান্ডে হেলালকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বিস্তারিত তথ্য বেরিয়ে আসবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হেলাল একজন পেশাদার খুনি। এই হত্যাকাণ্ডে ছয়জন অংশ নেয়। মুন্সি ওভারসিজের ভেতরে চারজন প্রবেশ করে। তারা প্রফেশনাল কিলার। তাদের মধ্যে দুইজন মাস্ক ও দুইজন ক্যাপ পরা ছিল। হেলাল তাদের ভাড়া করেছিল। হেলালসহ দুইজন বাইরে অবস্থান করে। তাদের সবার কাছে পিস্তল ছিল। কিলাররা ভেতরে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দেয়। দরজা বন্ধ থাকায় গুলির শব্দ খুব একটা বের হয়নি। সিটিটিসি কর্মকর্তা মনিরুল আরও বলেন, হেলাল প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। এ ঘটনায় পিচ্চি আল আমিন ও সাদ্দাম নামের আরও দুজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এই দুইজনসহ পাঁচজনকে গ্রেফতারে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। তিনি বলেন, হেলাল ছাত্রদলের মধ্যম পর্যায়ের নেতা। ছাত্রদলের সঙ্গে যুক্ত থাকায় হেলালের সঙ্গে প্রবাসী ওই নেতার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। এছাড়া হেলালের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যাসহ বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল বলেন, ঘটনার রাতে অস্ত্রধারীরা অন্তত ২৫ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এর পেছনে আরও কোনো কারণ আছে কি-না সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
প্রবাসী ছাত্রদল নেতা সম্পর্কে মনিরুল বলেন, ২০১৩ সালে সারা দেশে জ্বালাও-পোড়াও ঘটনায় বেশ কয়েকটি মামলায় আসামি হওয়ার পর ছাত্রদলের ওই নেতা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। তবে তদন্তের স্বার্থে ওই নেতার নাম প্রকাশ করতে চাননি তিনি। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের পরিদর্শক বিপ্লব কিশোর শীল দুপুরে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম কায়সারুল ইসলামের আদালতে হেলালকে হাজির করেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন জানান তিনি।  আদালত শুনানি শেষে হেলালকে দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সিদ্দিক মুন্সির জামাতা আবু হানিফ যুগান্তরকে বলেন, পুলিশ জানিয়েছে গ্রেফতার হেলাল হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা। ইউরোপ প্রবাসী ছাত্রদল নেতার নির্দেশ দেয়া সম্পর্কে বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, তারা কিছুই বুঝতে পারছেন না। তিনি বলেন, যেখানে শ্বশুরের কোনো শত্রু আছে এমন কথা শুনিনি; বিদেশে শত্রু আছে ভেবে অবাক হচ্ছি। পুলিশের প্রতি বিশ্বাস আছে জানিয়ে হানিফ বলেন, আশা করি পুলিশ প্রকৃত সত্য বের করতে পারবে। প্রসঙ্গত, ১৪ নভেম্বর রাতে বনানীর বি ব্লকে ৪ নম্বর রোডের ১১৩ নম্বর হোল্ডিংয়ে চার তলা ভবনের নিচ তলায় জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান এস মুন্সি ওভারসিজে ঢুকে মুখোশধারী কয়েকজন যুবক এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এতে ওই প্রতিষ্ঠানটির মালিক সিদ্দিক মুন্সি গুলিবিদ্ধ হয়ে নিজ অফিসেই মারা যান।

No comments

Powered by Blogger.