আ’লীগ-জাতীয় পার্টিতে প্রার্থী জট বিএনপিতে দুলুর পাল্লাই ভারি

জেলা সদর নিয়ে লালমনিরহাট-৩ আসনে বইছে নির্বাচনী আমেজ। বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে নেমে পড়েছেন। প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে চলছে নির্বাচনী প্রচার। ছোটখাটো সভা-সমাবেশেও থাকছেন প্রার্থীরা। মোড়ে মোড়ে সাঁটানো হয়েছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের পোস্টার ও ব্যানার। জেলা সদর আসনটি দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় পার্টির দখলে ছিল। বিশেষ করে ১৯৮৬ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা বিজয়ী হন। প্রায় ২০ বছর পর জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলুর হাত ধরে আসনটি দখলে নেয় বিএনপি। আগামী নির্বাচনেও ডাকসাইটে এই প্রার্থী বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির রংপুর বিভাগীয় এ সাংগঠনিক সম্পাদকের গতিশীল নেতৃত্বেই বিএনপি বর্তমানে একটি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। ২০০৮ সালে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে এ আসনে বিজয়ী হন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের। আগামী নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান তিনি। জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী হিসেবে জিএম কাদেরের নাম শোনা গেলেও জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মাহবুবুল আলম মিঠু দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে রয়েছেন। সর্বশেষ ২০১৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগ প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আবু সালেহ মো. সাঈদ দুলাল। অসুস্থতা কাটিয়ে ওঠে তিনিও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাইছেন। আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি ইঞ্জিনিয়ার আবু সালেহ মো. সাঈদ দুলাল মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে থাকলেও আরও একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী মাঠে রয়েছেন। তাদের মধ্যে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান অন্যতম। আসাদুল হাবিব দুলুর নেতৃত্বে বিএনপির ভোট বর্জনের ডাকে সাড়া দেয়ায় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অন্তত ২৭টি ভোট কেন্দ্রে কোনো ভোটই পড়েনি। আগামী নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে দুলুর পাল্লাই ভারি। অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, জেল-জলুমসহ নানা বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করেই দলের সব কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি এখানকার মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে আছি। তিনি বলেন, এখানকার মানুষের সঙ্গে আমার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আগামী নির্বাচনে এই সম্পর্কের প্রতিফলন ঘটবে। এমপি ও উপমন্ত্রী থাকার সময় তিনি এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করেছেন। আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বিএনপি এখন অনেক বেশি সংগঠিত। লালমনিরহাট-৩ আসন থেকে দু’বার এমপি নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের। ২০০৮ সালে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথমে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পরে বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় জিএম কাদেরের সঙ্গে জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম মিঠুর নামও জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে। জিএম কাদের স্থানীয়দের কাছে পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত। তিনি ঢাকায় বসবাস করলেও নির্বাচনকে সামনে রেখে কিছু দিন ধরে ঘন ঘন লালমনিরহাট আসছেন। নিজের এলাকার পাশাপাশি লালমনিরহাটের অন্য দুটি আসনের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে নিয়মিত গণসংযোগের পাশাপাশি সভা-সমাবেশ করছেন। তবে এসব কর্মকাণ্ডে জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মাহবুবুল আলম মিঠু ও তার অনুসারীদের কাউকে দেখা যাচ্ছে না। নির্বাচন নিয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, আমি লালমনিরহাট-৩ আসন থেকে তিনবার নির্বাচন করে দুইবারই জয়লাভ করেছি। এখানকার মানুষের জন্য আমি কাজ করেছি বলেই তারা আমাকে পছন্দ করে ও ভালোবাসে। আগামী নির্বাচনেও এখানকার মানুষ আমার সঙ্গে থাকবে বলে আমি বিশ্বাস করি। জাতীয় পার্টির অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী মাহবুবুল আলম মিঠু ২০১৩ সালে বিএনপি ছেড়ে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন। তিনি দলে যোগদান করেই জেলা ও উপজেলা জাতীয় পার্টি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটিগুলো নতুন করে গঠনের উদ্যোগ নেন। মিঠুসহ তার অনুসারীরা মনে করেন, ‘জাতীয় পার্টির ভক্তরা স্থানীয় কাউকে এ আসনে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চাইছেন। বিষয়টি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও জানেন। তাই আগামী নির্বাচনে তাকেই এ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে বলে তিনি মনে করেন। মাহবুবুল আলম মিঠু বলেন, মনোনয়নের বিষয়টি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ঠিক করবেন। আমি মনোনয়ন পাওয়ার আশায় কাজ করে যাচ্ছি। স্থানীয় জাতীয় পার্টির সবাই আমার পক্ষে রয়েছে। আওয়ামী লীগের এমপি ইঞ্জিনিয়ার আবু সালেহ মো. সাঈদ দুলাল শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় স্থানীয়দের সঙ্গে তার যোগাযোগ কিছুটা হলেও কমে গেছে। তবে তিনি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন। নির্বাচনী ভাবনা নিয়ে জানতে চাইলে বর্তমান এমপি দুলাল বলেন, ‘এখন আমি সুস্থ। নিয়মিত এলাকায় যাচ্ছি, আগামী নির্বাচনের জন্য কাজ করছি। এর বাইরে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান, সংরক্ষিত মহিলা এমপি অ্যাডভোকেট সফুরা বেগম রুমী এবং সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মোস্তফা স্বপন। তবে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান। তাকে জেলা আওয়ামী লীগের ‘কাণ্ডারি’ হিসেবে মনে করেন দলীয় নেতাকর্মীরা। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। দশম সংসদ নির্বাচনেও তিনি মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তবে মতিয়ার রহমানকে জেলা পরিষদের প্রশাসকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। পরে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে বিপুল ভোটেই জয়ী হন তিনি। নিয়মিত বসেন জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে। ফলে আগামী নির্বাচনে লালমনিরহাট-৩ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের ‘যোগ্য প্রার্থী’ হিসেবে শুধু মতিয়ার রহমানকেই মনে করছেন দলটির অনেকেই। অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান বলেন, আমি সব সময় দল ও মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এর আগেও মনোনয়ন চেয়েছিলাম। আগামী নির্বাচনেও আমি মনোনয়ন চাইব। অ্যাডভোকেট সফুরা বেগম রুমী বলেন, ২৬ বছর ধরে মহিলা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব পালন করছি। আগামী নির্বাচনে আমি মনোনয়ন চাইব। গোলাম মোস্তফা স্বপন বলেন, দল করতে গিয়ে আমি ভাই ও ভাতিজাকে হারিয়েছি। ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। এখন আওয়ামী লীগের সুখে-দুঃখে আছি। আগামী নির্বাচনে আমি অবশ্যই মনোনয়ন চাইব।

No comments

Powered by Blogger.