নিরাপত্তা চাওয়ায় ছাত্রীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা

রাজশাহী ইন্সটিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিতে (আইএইচটি) ছাত্রীদের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ কর্মীরা। এ ঘটনায় পাঁচজন ছাত্রী আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের হোস্টেল ছাড়তেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। হামলায় আহত ছাত্রীরা হলেন- ফার্মেসি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের রূপা খাতুন, একই বর্ষের নাজনিন আক্তার, তৃতীয় বর্ষের মিম আক্তার এবং ল্যাব বিভাগের প্রথম বর্ষের মোহনা খাতুন ও আফরিন শারমিন। বুধবার বেলা ১১টার দিকে ছাত্রীদের ওপর হামলার এ ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগ ও বহিরাগতসহ অর্ধশতাধিক তরুণ এ হামলা চালায় বলে ছাত্রীদের অভিযোগ। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া আহত ছাত্রীদের উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আইএইচটির ছাত্রীরা অভিযোগ করেন, ক্যাম্পাসের ভেতরেই তাদের হোস্টেল। এ হোস্টেলে যখন তখন ঢোকার চেষ্টা করেন ছাত্রলীগ নেতারা। হোস্টেলের বাইরে থেকে তাদের উদ্দেশ্য করে অশ্লীল কথাবার্তা এবং গালিগালাজও করা হয়। এসবের প্রতিবাদে তারা বুধবার সকালে অধ্যক্ষের কাছে স্মারকলিপি দিতে যান। স্মারকলিপি দিয়ে তারা তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে অধ্যক্ষের কার্যালয়েই অবস্থান নেন। এক পর্যায়ে অধ্যক্ষ তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আশ্বাস দিলে তারা হোস্টেলে ফিরছিলেন। এ সময় তাদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালানো হয়। হামলায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বহিরাগতরাও ছিলেন বলে অভিযোগ ছাত্রীদের। ছাত্রীরা বলেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন এবং অনেকের চুল ধরে টানাটানি করেন। চড়-থাপ্পড় এমনকি কিল-ঘুষিও মারা হয় ছাত্রীদের। এর ফলে বেশ কয়েকজন ছাত্রী আহত হন। এদের মধ্যে পাঁচজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তারা হাসপাতাল ছাড়েন। তবে ছাত্রীদের ওপর হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আইএইচটি ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদ হাসান। তিনি বলেন, ছাত্রীদের ওপর হামলার অভিযোগ বানোয়াট। তাদের ওপর হামলার প্রশ্নই ওঠে না। ছাত্রীদের সঙ্গে পাঁচজন ছাত্রদল নেতা ছিলেন।
তারা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিচ্ছিলেন। নেতাকর্মীরা তাদেরকেই ধাওয়া দিয়েছেন। এ সময় দৌড়ে পালাতে গিয়ে পড়ে দু’জন ছাত্রী আহত হন। ছাত্রীদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ তুলে জাহিদ বলেন, ছাত্রী হোস্টেলে সন্ধ্যা ৬টার আগে সবার ঢুকে যাওয়ার কথা। কিন্তু রাত ১০টা পর্যন্ত তারা বাইরে থাকেন। এর ফলে ক্যাম্পাসের বদনাম হয়। তাই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে কয়েক দিন আগে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকেই অধ্যক্ষর কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করা হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়েই ছাত্রীরা তাদের বিরুদ্ধে অধ্যক্ষের কাছে পাল্টা অভিযোগ করতে যান। আর তাদের ইন্ধন দেন ছাত্রদলের নেতারা। রাজশাহী আইএইচটির অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলামও ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, হামলার ঘটনা ঘটেনি। ছোট দরজা দিয়ে সবাই একসঙ্গে দৌড়ে বের হতে গিয়ে কয়েকজন পড়ে আহত হয়েছে। অধ্যক্ষ জানান, ঘটনার পর অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভা ডাকা হয়। এ সময় পরিস্থিতি সামাল দিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য আইএইচটি বন্ধ ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত হয়। তাই হোস্টেলের আবাসিক ছাত্রদের বেলা ১টা এবং ছাত্রীদের বেলা ৩টার মধ্যে হোস্টেল ছাড়ার জন্যও নির্দেশ দেয়া হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ থাকবে বলেও জানান অধ্যক্ষ। নগরীর রাজপাড়া থানার ওসি হাফিজুর রহমান বলেন, হামলার সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। তবে এ সময় কাউকে আটক করা যায়নি। ঘটনার পর অতিরিক্ত পুলিশও মোতায়েন করা হয়। এ ঘটনায় আইএইচটির পক্ষ থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।

No comments

Powered by Blogger.