হাউছিদের হামলায় ইয়েমেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট সালেহ নিহত

ইয়েমেনের রাজধানী সানায় শিয়াপন্থী হাউছি বিদ্রোহীদের হামলায় দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহ নিহত হয়েছেন। বিদ্রোহীরা হামলায় সালেহর বাসভবন ধ্বংস ও তিনি নিহত হয়েছেন বলে হাউছিরা দাবি করেছে। সালেহ ও তার মিত্র হাউছি বিদ্রোহীরা পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার কয়েক দিন পর তার নিহত হওয়ার খবর এলো। ২০১২ সালে ক্ষমতাচ্যুত সালেহর অনুগত যোদ্ধারা দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে হাউছিদের সাথে মিলে দেশটির আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের বাহিনী ও সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোটের বিরুদ্ধে লড়াই করছিল। কিন্তু গত সপ্তাহে সালেহ ও হাউছিদের মধ্যকার জোট ভেঙে যায় এবং গত শনিবারে তা বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত রাজধানী সানার রাস্তায় প্রকাশ্য যুদ্ধে রূপ নেয়। সামাজিক মাধ্যমগুলোতে সালেহর নিখোঁজের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সোমবার সকালে ইরান সমর্থিত একটি গণমাধ্যমে সালেহর মৃত্যুর খবর প্রচার করা হয়। তবে সালেহর দল জেনারেল পিপলস কংগ্রেস বিষ্ফোরণে তার নিহত হওয়ার খবর অস্বীকার করেছে। সোমাবার সকালে সানাভিত্তিক একটি গ্রুপ আলজাজিরাকে বলেছে, হাউছি বিদ্রোহীরা রাজধানীসহ দেশটির বেশির ভাগ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইরান সমর্থিত হাউছিদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত হুসাইন আলখুতাতি বলেছেন, ‘অল্প কিছু জায়গা বাদে পুরো সানা তাদের দখলে।’
প্রচণ্ড লড়াই : নিহত ১২৫
ইন্ডিপেন্ডেন্ট জানায়, ইয়েমেনের রাজধানী সানায় নতুন করে লড়াইয়ে অন্তত ১২৫ জন নিহত এবং ২৩৮ জন আহত হয়েছে। আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি এ খবর জানিয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহর সমর্থনে গতকালও দ্বিতীয় দিনের মতো সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের জঙ্গি বিমানগুলো সানায় হাউছি মিলিশিয়াদের অবস্থানের ওপর হামলা চালায়। রেড ক্রসের মুখপাত্র আয়োলান্ডা জ্যাকুমেট জানান, যুদ্ধের কারণে বাসিন্দারা তাদের বাড়িতে আটকা পড়েছে। তাদের বাড়িতে অনেক প্রয়োজনীয় সেবা বন্ধ হয়ে গেছে এবং রোগী, আহত ব্যক্তি ও গর্ভবতী নারীদের হাসপাতালে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তিনি জানান, রেড ক্রস সানার যে তিনটি হাসপাতালে চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করে সেখানে আহতদের চিকিৎসার জন্য জরুরি ভিত্তিতে কিট দরকার। তারা হাসপাতালে লাশের ব্যাগ ও অন্যান্য সরঞ্জাম সরবরাহ করার উপায় বের করার চেষ্টা করছেন। অপারেশন করা এবং ওষুধ ও টিকা সংরক্ষণের জন্য হাসপাতালে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা জরুরি। যুদ্ধের কারণে রেড ক্রস তাদের ১৩ জন আন্তর্জাতিক কর্মীকে সানা থেকে জিবুতিতে সরিয়ে নিয়েছে। বর্তমানে সেখানে তাদের ১৯৯ জন স্টাফ অবস্থান করছে, এর মধ্যে ২১ জন বিদেশী। হাউছি মিলিশিয়ারা সানায় সালেহর বাসভবন উড়িয়ে দিয়েছে। বাসিন্দারা জানান, সালেহ কোথায় রয়েছেন তা জানা যায়নি। ছয় দিনের শহুরে লড়াইয়ে সালেহর অনুগত বাহিনী হাউছিদের কাছে অনেক জায়গা হারিয়েছে। রোববার তিনি হাউছিদের সাথে তার জোট আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল ঘোষণা করেন। সালেহর পক্ষত্যাগ ইয়েমেন যুদ্ধের জন্য বড় ধরনের ঘটনা। এ যুদ্ধকে ইরান ও সৌদির মধ্যে ছায়াযুদ্ধ বলে মনে করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.