যেভাবে ঢাকায় আনা হলো সোফিয়াকে

সারা বিশ্বে আলোচিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নারী রোবট সোফিয়া মঙ্গলবার প্রথম প্রহরে ঢাকায় পা রেখেছে। থাই এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসে সোফিয়া। তার সঙ্গে বাংলাদেশে এসেছেন নির্মাতা ডেভিড হ্যানসন। সোফিয়ার দেহের বিভিন্ন অংশ খুলে খণ্ড-খণ্ডভাবে বাক্সবন্দি করে ঢাকায় আনা হয়েছে। তার আগমন নিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিল ব্যাপক কৌতুহল। তাকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরের প্রস্তুতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। বুধবার থেকে শুরু হতে যাওয়া দেশের সবচেয়ে বড় তথ্যপ্রযুক্তি উৎসব ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের উদ্বোধনী দিনেই সোফিয়া উপস্থিত থাকবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। সঙ্গে থাকবেন তার নির্মাতা ড. ডেভিড হ্যানসন। ৬ ডিসেম্বর ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে সোফিয়াকে নিয়ে দু’টি সেশন করা হবে। প্রথম সেশনে দেশের পলিসি মেকার এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে তার বৈঠক হবে। দ্বিতীয় সেশনে থাকবে তরুণ গেম ডেভেলপার, সফটওয়্যার ডেভেলপার, অ্যাপ ডেভেলপার ও উদ্ভাবকদের সঙ্গে আলোচনা। এছাড়া আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে ড. ডেভিড হ্যানসন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন। উল্লেখ্য, রিয়াদে গত অক্টোবর মাসে এক অনুষ্ঠানে রোবটটি প্রদর্শন করা হয়েছিল। প্রদর্শনীতে উপস্থিত শত শত প্রতিনিধি রোবটটি দেখে এতোটাই মুগ্ধ হন যে সেদিনই এটিকে সৌদি নাগরিকত্ব দেয়া হয়। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে সোফিয়ার ছবি শেয়ার হতে থাকে। সোফিয়া নানা বিষয়ে অসংখ্য প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিশাল তথ্যভাণ্ডারে যুক্ত থাকে সে। এছাড়া মানুষের সঙ্গী ও সহযোগী হিসেবেও কাজ করতে পারে সোফিয়া। নারী রোবট ‘সোফিয়া’কে সৌদি নাগরিকত্ব দেয়া নিয়ে কেন এত বিতর্ক এর আগে রোবট নারী ‘সোফিয়া’কে সৌদি নাগরিকত্ব দেয়ার পর সেখানে এখন তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে এই রোবট একজন সৌদি নারীর চেয়েও বেশি অধিকার ভোগ করছে কিনা। সৌদি আরবের রিয়াদ নগরীতে গত সোমবার এক অনুষ্ঠানে এই রোবটটি প্রদর্শন করা হয়। প্রদর্শনীতে উপস্থিত শত শত প্রতিনিধি রোবটটি দেখে এতটাই মুগ্ধ হন যে সেখানে সাথে সাথেই এটিকে সৌদি নাগরিকত্ব দেয়া হয়। রোবট নারী ‘সোফিয়া’র ছবি এরপর সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে শেয়ার হয়। কিন্তু অনেকেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন একজন সৌদি নারীর তুলনায় কিভাবে ‘সোফিয়া’ এত বেশি অধিকার ভোগ করছে। হংকং এর একটি কোম্পানি ‘হ্যান্সন রোবোটিক্স’ সোফিয়া নামের রোবটটি তৈরি করেছে। ‘সোফিয়া’ ইংরেজীতে কথা বলে। কিন্তু তার মাথায় হিজাব বা পরনে আবায়া ‘বোরকা সদৃশ আচ্ছাদন’ নেই। অথচ যে কোন সৌদি নারীকে বাইরে বেরুতে হলে এসব পরেই বেরুতে হয়।
‘সোফিয়া’কে সৌদি নাগরিকত্ব দেয়ার খবরটি দেখে প্রথমত সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশিরভাগ প্রতিক্রিয়া ছিলো বেশ ইতিবাচক। এই খবরটি টুইটারে তিরিশ হাজার বার শেয়ার হয়। কিন্তু এর পরেই শুরু হয় এটি নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ। ‘সোফিয়া কলস ফর ড্রপিং গার্ডিয়ানশীপ’ অর্থাৎ সোফিয়া তার ওপর অভিভাবকের খবরদারি তুলে নেয়ার দাবি জানাচ্ছে বলে আরেকটি বিদ্রুপাত্মক পোস্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতে থাকে। সৌদি রীতি অনুযায়ী কোন মেয়েকে বাইরে যেতে হলে সাথে অবশ্যই একজন পুরুষ অভিভাবক থাকতে হবে। অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, সোফিয়ার কোন পুরুষ অভিভাবক নেই, সে আবায়া ‘বোরকা’ পড়ে না, মাথায় কাপড় দেয় না। এটা কিভাবে সম্ভব? একটি নারী রোবটের অধিকার কি একজন সৌদি নারীর চেয়ে বেশি? যেরকম দ্রুততার সঙ্গে ‘সোফিয়া’কে সৌদি নাগরিকত্ব দেয়া হয়েছে সেটি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অনেকে। সাংবাদিক মুর্তজা হোসেন লিখেন, ‘যে ‘কাফালা’ শ্রমিকরা তাদের প্রায় পুরোটা জীবন এখানে কাটাচ্ছেন তাদেরও আগে এই রোবট সৌদি নাগরিকত্ব পেয়ে গেল?’ ব্রিটিশ-লেবানীজ সাংবাদিক কারিম চাহায়েব লিখেন, ‘লাখ লাখ মানুষ যখন রাষ্ট্রবিহীন নাগরিক হিসেবে ধুঁকছে, তখন একটি রোবট সৌদি নাগরিকত্ব পেল।’ রোবট বর্তমান যুগে একটি অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক যন্ত্র, একটি কিতৃম মানুষ। যা মানুষের থেকে কয়েক গুন বেশি দ্রুত কাজ করতেপারে। কিন্তু বিশেষ মহলে প্রশ্ন আছে ‘এর বিচার-বিবেচনা কি মানুষের মত।’

No comments

Powered by Blogger.