চড়া সুদে ৪ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক

বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নেটওয়ার্ক উন্নয়নসংক্রান্ত প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক থেকে চড়া সুদে ঋণ নিচ্ছে সরকার। এ ঋণের পরিমাণ ৫০ কোটি মার্কিন ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ৮০ টাকা ধরে) প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। সংস্থাটি স্কেলআপ ফ্যাসিলিটির (এসইউএফ) আওতায় এ ঋণ নেয়া হচ্ছে। ফলে সুদের হার সব মিলিয়ে ৩-৪ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। তবে বর্তমানে সহজ শর্তের ঋণে কোনো সুদ না দিলেও সার্ভিস চার্জ হিসেবে শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ নেয় বিশ্বব্যাংক। পরিশোধের সময়ও দীর্ঘ। অর্থাৎ ৬ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩৮ বছরে পরিশোধ করতে হয়। সেখানে এ কর্মসূচির আওতায় ঋণ নেয়া হলে পরিশোধের সময়ও কম হবে। এ ঋণের বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সম্মতি পাওয়ার পর বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে মতামত চেয়ে চিঠি দিয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। মতামত পেলেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে বিশ্বব্যাংককে। জানতে চাইলে ইআরডির অতিরিক্ত সচিব ও বিশ্বব্যাংক উইংয়ের প্রধান মাহমুদা বেগম মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, এ স্কেলআপ ফ্যাসিলিটির আওতায় গত অর্থবছরে ৩০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ নেয়ার কথা ছিল বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিদ্যুতের একটি প্রকল্পে ৫৯ মিলিয়ন ডলার ঋণ নেয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরে ৫০ কোটি ডলার ঋণ নেয়ার সীমা নির্ধারিত রয়েছে। তাই বেশি প্রকল্পের না নিয়ে আমরা একটিতেই এ পরিমাণ ঋণ নেয়ার বিষয়ে নেগোশিয়েশন করেছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ খাতে অনেক বেশি সুদে ঋণ নেয়া হচ্ছে, সেক্ষেত্রে এটি এখনও কম বলা চলে।
যদিও সহজ শর্তের ঋণের চেয়ে এক্ষেত্রে সুদের হার বেশি হবে। তারপরও নেয়া যেতে পারে। সে সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব বিদ্যুৎ বিভাগের। ইআরডি সূত্র জানায়, ২০ আগস্ট বিদ্যুৎ সচিবের কাছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে যে চিঠি পাঠানো হয়েছে সেখানে উল্লেখ করা হয়, ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর ইনহ্যান্সমেন্ট অ্যান্ড স্ট্রেনদেনিং অব পাওয়ার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক ইন ইস্টার্ন রিজিওন শীর্ষক প্রকল্পের জন্য ২৯ কোটি ২৭ লাখ ৪ হাজার ডলার অর্থায়নে বিশ্বব্যাংককে অনুরোধ জানানো হয়। প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)। ওই প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের স্কেলআপ ফ্যাসিলিটি (এসইউএফ) শীর্ষক তহবিল থেকে ৫০ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার বিষয়ে বিশ্বব্যাংক সম্মত হয়েছে। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এসইউএফ তহবিল থেকে ঋণ গ্রহণে বাংলাদেশ সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হচ্ছে- এ তহবিলের ঋণ স্থির সুদের হারে প্রদেয়, ত্রৈমাসিকভাবে এ স্থির সুদের হার বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা আইডিএ’র মাধ্যমে নির্ধারিত. এককালীন ফ্রন্ট-ইন্ড ফি শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ এবং অনুত্তোলিত ঋণের স্থিতির ওপর শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ কমিটমেন্ট ফি প্রদান করতে হবে। অপরদিকে বিদ্যুৎ খাতে অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা বা দেশগুলো তুলনামূলক উচ্চ সুদে ঋণ প্রদান করে থাকে। লন্ডন উন্টার ব্যাংক অফারড রেট (লাইবর) অস্থিতিশীল হলে সুদের হার পরিবর্তিত হলে ঋণ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, সাধারণত উন্নয়ন সহযোগী দেশ বা সংস্থা ব্যয় ও পরিশোধের মুদ্রা নির্ধারণ করে। এসইউএফ তহবিলের ক্ষেত্রে বাস্তবায়নকারী সংস্থা গ্রান্ট এলিমেন্ট বিবেচনা করে সুবিধা অনুযায়ী এসডিআর ছাড়াও এসডিআরভুক্ত চারটি মুদ্রা মার্কিন ডলার, ইউরো, পাউন্ড ও জাপানি ইয়েনের যে কোনো একটি মুদ্রায় সিঙ্গেল কারেন্সি লেন্ডিং (এসসিএল) কর্মসূচির আওতায় ঋণ গ্রহণ করতে পারবে। সূত্র জানায়, এর আগে এসইউএফ তহবিল থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে বাস্তবায়নাধীন পাওয়ার সিস্টেম রিলায়েবিলিটি অ্যান্ড ইফিসিয়েন্সি ইমপ্র“ভমেন্ট প্রজেক্টের জন্য যে ৫৯ মিলিয়ন ডলার ঋণ নেয়া হয়েছিল, সেক্ষেত্রে ২ দশমিক ৮৫ শতাংশ স্থির হারে সুদ ধার্য করা হয়েছে। এ ঋণ ইউরোতে গ্রহণ ও পরিশোধ করা হবে- যা ৯ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩০ বছরে পরিশোধ করতে হবে। এ প্রকল্পটি ইতিমধ্যেই অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এক প্রশ্নের জবাবে মাহমুদা বেগম বলেন, যখন এ তহবিল থেকে ঋণ প্রস্তাব পাঠানো হয় তখন প্রকল্পটির ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই ২৯ কোটি ২৭ লাখ ৪ হাজার মার্কিন ডলার ঋণ চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে বিশ্বব্যাংকের মিশন এসে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছে, প্রকল্পে নতুন কম্পোনেন্ট যোগ হওয়ায় এর ব্যয়ও বেড়ে গেছে। তাই তারা ৫০ কোটি ডলার ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.