প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগের আহ্বান

২৪ আগস্টের মধ্যে পদত্যাগ অন্যথায় অক্টোবর থেকে একদফা আন্দোলন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের * বিচার বিভাগ নিয়ে মন্তব্য করায় প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আগামী ২৪ আগস্টের মধ্যে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে পদত্যাগের আলটিমেটাম দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের নেতারা। এই সময়ের মধ্যে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে দেয়া পর্যবেক্ষণ ও রায় প্রত্যাহারেরও আহ্বান জানান তারা। অন্যথায় অক্টোবর থেকে একদফা আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে আওয়ামীপন্থী আইনজীবীদের এই শীর্ষ সংগঠন। এর আগে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে সুপ্রিম কোর্টের দেয়া রায় ২৪ আগস্টের মধ্যে বাতিলের দাবি জানিয়েছিল সংগঠনটি। অপর দিকে প্রধান বিচারপতি এবং বিচার বিভাগ সম্পর্কে মন্তব্য করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করেছেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতারা। মঙ্গলবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ মানববন্ধন এবং সমিতি ভবনের উত্তর হলে প্রতিবাদ সভা করে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে দেয়া রায়ের অপ্রাসঙ্গিক ও অসাংবিধানিক বক্তব্যে সংক্ষুব্ধ আইনজীবীদের ব্যানারে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ এ মানববন্ধনের আয়োজন করে। মানববন্ধনে প্রধান বিচারপতির অপসারণ দাবি করে নানা স্লোগান দেন আইনজীবীরা। মানববন্ধনে পরিষদের সদস্য সচিব ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘গত পরশু প্রধান বিচারপতি এজলাসে বসা অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীকে চোখ রাঙানির মাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি তার বক্তব্যে বলেছেন, পাকিস্তানের মতো প্রধানমন্ত্রীকে নাকি তিনি পদ থেকে সরিয়ে দিতে পারেন। এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি (প্রধান বিচারপতি) তার শপথ ভঙ্গ করেছেন। প্রধান বিচারপতির এজলাসে বসে প্রধানমন্ত্রীকে এ রকম হুমকি দেয়া নজিরবিহীন উল্লেখ করে ব্যারিস্টার তাপস বলেন, ‘এটা শপথ ভঙ্গের শামিল। সুতরাং আগামী ২৪ তারিখের মধ্যে এই রায়ের প্রাসঙ্গিক, অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক বক্তব্য প্রত্যাহারসহ সম্পূর্ণ রায় বাতিলপূর্বক তার পদত্যাগ দাবি করছি। অন্যথায় আগামী অক্টোবর থেকে একদফা আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে অপসারণ করার আন্দোলনের কর্মসূচি দিতে আমরা বাধ্য হব।’ তিনি বলেন, ‘ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে প্রধান বিচারপতি অপ্রাসঙ্গিক, অসাংবিধানিকভাবে যে মন্তব্য করেছেন এ মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি আমাদের পবিত্র ধর্ম ইসলামকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন। তিনি আমাদের স্বাধীনতার স্থপতি যার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলার চেষ্টা করেছেন। সংসদকে হেয় করেছেন। তিনি মহিলা সংসদ সদস্যের বিষয়ে কটূক্তি করে নারীদের হেয় করেছেন। তাদের হেয় করে গোটা নারী সমাজকে হেয় করেছেন।’ তাপস বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি তার রায়ে উল্লেখ করেছেন তিনি নাকি কারও সার্ভেন্ট নন। তিনি প্রজাতন্ত্রের কোনো কর্মকর্তা নন। তিনি হলেন নিজেই মাস্টার। আমরা তার নিন্দা জানাই।’ সংগঠনের আহ্বায়ক সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ইউসুফ হোসেন হুমায়ন বলেন, ‘প্রাসঙ্গিক নয়, অথচ ওপেন কোর্টে অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে তিনি বললেন কী হয়েছে পাকিস্তানে দেখেছেন? সুপ্রিম কোর্ট কী পারে।’ তিনি বলেন, ‘আমি একটি কথা বলতে চাই, বাংলাদেশ ইজ নট পাকিস্তান, এটা মনে রাখতে হবে। এ বাংলাদেশ রক্তের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ। এটা অসম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। কাজেই ওই সব কথা বলে পার পাবেন না।’ সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘আগামী ২৪ আগস্ট আমরা এ দাবিতে আবার মিলিত হব।
আমরা এর আগে বলেছিলাম ২৪ তারিখের মধ্যে আপনার অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য প্রত্যাহার করবেন।’ মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম, সুপ্রিমকোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক নুরুল ইসলাম সুজন এমপি, সাবেক বিচারপতি মুনসুরুল হক চৌধুরী, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, অ্যাডভোকেট লায়েকুজ্জামান মোল্লা, সাবেক সম্পাদক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী, সানজিদা খানম এমপি, আওয়ামীপন্থী আইনজীবী নেতা আজহার উল্লাহ ভুইয়া, রবিউল আলম বুদু প্রমুখ। এদিকে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে সমিতি ভবনের উত্তর হলে প্রতিবাদ সভা করেন বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ব্যানারে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন সমিতির সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব মাহবুবউদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, আবেদ রাজা, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, গাজী কামরুল ইসলাম সজল প্রমুখ। প্রতিবাদ সভায় অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগ করতে বলেছেন। বিচার বিভাগ নিয়ে মন্তব্য করার কারণে আপনি নেজিই পদত্যাগ করুন। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি একা এই রায় দেননি। আপিল বিভাগের সব বিচারপতি একমত হয়ে এ রায় দিয়েছেন। প্রধান বিচারপতিকে বলব, সরকারের কিছু ব্যক্তি ছাড়া ১৬ কোটি মানুষ আপনার সঙ্গে আছে। তিনি বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যান খায়রুল হক রায় নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন তা বিচার বিভাগকে হেয় করেছে। তিনি বিচার বিভাগকে বিতর্কিত করেছেন। এ পদে থাকার কোনো অধিকার তার নেই। তার পদত্যাগ করা উচিত।

No comments

Powered by Blogger.