কঠিন হচ্ছে আমেরিকায় প্রবেশ, বাড়ছে ক্ষোভও

ছয় মুসলিম-প্রধান দেশের বাসিন্দাদের ভিসা দিতে নতুন নিয়ম চালু করার প্রতিবাদে উত্তাল আমেরিকা। মার্কিন প্রশাসনের বিরুদ্ধে এবার সমাজকর্মীদের সঙ্গে প্রকাশ্যে হাতে হাত মিলিয়ে আন্দোলনে নামলেন আইনজীবীরাও। লস অ্যাঞ্জেলস থেকে নিউ ইয়র্ক, শিকাগো থেকে ওয়াশিংটন— রাস্তায় রাস্তায় বিক্ষোভকারীদের হাতে সাদা-কালো প্ল্যাকার্ড। যেখানে লেখা : ডোনাল্ড ট্রাম্প ফ্যাসিস্ট। তবে কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। নয়া নিয়ম অনুযায়ী, এবার থেকে আমেরিকার সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠ’ পারিবারিক বা ব্যবসায়িক সম্পর্ক থাকলেই এই ৬টি দেশের নাগরিক বা উদ্বাস্তুরা মার্কিন মুলুকের ভিসা পাবেন। চলতি সপ্তাহেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের জারি করা মার্কিন অভিবাসন নীতি সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিকে আংশিক সম্মতি দিয়েছে সেদেশের সুপ্রিম কোর্ট। এরপরই, মার্কিন দূতাবাস ও কনস্যুলেটে পাঠানো নির্দেশিকায় বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট ৬টি দেশের সকল আবেদনকারীকে প্রমাণ দিতে হবে যে, তাদের অভিভাবক, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান, সাবালক ছেলে বা মেয়ে, জামাতা, পুত্রবধূ মার্কিন নাগরিক। নির্দেশিকায় স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে— দাদা-দাদি, নানা-নানি, নাতি-নাতনি, চাচা, মামা, ভাইপো-ভাইঝি, ভাগ্নে-ভাগ্নি, খালাতো-চাচাতো ভাই-বোন, শালা-ভগ্নিপতি, শালী-ননদ, দেওর-ভাসুর, বাগদত্তাসহ অন্যান্য আত্মীয়কে ‘ঘনিষ্ঠ’ পারিবারিক সম্পর্ক হিসেবে গণ্য করা হবে না। ফলে ছয় মুসলিম দেশের নাগরিক এবং সব দেশের শরণার্থীদের আমেরিকায় প্রবেশ কঠিন হচ্ছে। যে ছয়টি দেশের নাগরিকদের উপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে সেগুলি হলো— ইরান, লিবিয়া, সিরিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইয়েমেন। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার নতুন এই নীতি কার্যকর হয়েছে। তবে এসব দেশের নাগরিক যাদের আগে থেকেই বৈধ ভিসা আছে তাদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম কার্যকর হবে না। দ্বৈত নাগরিকরা যদি নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত দেশ থেকে আমেরিকায় আসেন তবে তাদের প্রবেশেও বাধা দেয়া হবে না। এছাড়া ব্যবসায়িক বা শিক্ষাগত সম্পর্কের ক্ষেত্রেও নতুন নির্দেশনার নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না। গত সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্ট আংশিক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে হোয়াইট হাউজের আবেদন মঞ্জুর করে, যেখানে ঘনিষ্ঠ নয় এমন আত্মীয়দের মার্কিন ভিসা কঠোর করার নীতি ৯০ দিনের জন্য অনুমোদিত হয়। শরণার্থীদের আমেরিকায় প্রবেশে ১২০ দিনের নিষেধাজ্ঞায়ও সায় দেন বিচারকরা। বিচারকদের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশনস বলেন, সুপ্রিম কোর্টের এ রুলিং ‘সরকারের সব শাখার ক্ষমতার পার্থক্য পুনঃস্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে’। অন্যদিকে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন ইমিগ্রান্টস রাইটস প্রজেক্টের পরিচালক ওমর জাদওয়াত বলেন, আংশিক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কারণে যারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তাদেরই আমেরিকায় প্রবেশে অনুমতি দেওয়া উচিত। আর ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির প্রেসিডেন্ট ডেভিড মিলিব্যান্ড বলেন, নতুন নির্দেশের কারণে জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন এমন ব্যক্তিদের প্রবেশ বাধাগ্রস্ত হবে, নিরপরাধ মানুষ আরো বিপদে পড়বে। নতুন নীতিতে এ ধরনের সবাইকে কঠোর যাচাইয়ের মুখে ফেলা হচ্ছে, বলেন তিনি।এদিকে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে নিয়মটি বাস্তবায়ন শুরুর কিছু সময় আগে হাওয়াই অঙ্গরাজ্য এক ফেডারেল বিচারকের কাছে নতুন এই নিয়মের ব্যাখ্যা চেয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.