ট্রাম্প-জিনপিং ‘হানিমুন’ শেষ!

বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্ক উত্তেজনার এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। চীনের কাছে হংকংকে ফিরিয়ে দেয়ার ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এখন উৎসবের আমেজে রয়েছেন। ঠিক সেই সময়ে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে চীনের একটি ব্যাংকের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং তাইওয়ানের কাছে বড় ধরনের অস্ত্র বিক্রি চুক্তির মধ্য দিয়ে চীনা প্রেসিডেন্টের খোশ মেজাজ অনেকটাই ম্লান করে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত এপ্রিলেই নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও চীনা প্রেসিডেন্ট জিনপিং ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোর বিলাসবহুল রিসোর্টে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে করেন। ওই বৈঠকে ট্রাম্প চীনকে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র বলে উল্লেখ করেন। তবে অনেকের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সেই ‘হানিমুন’ শেষ হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ চীন সাগর ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র যখন ধৈর্য হারিয়ে ফেলেছে, ট্রাম্প ও জিনপিংয়ের সম্পর্ক তখন শীতল হতে শুরু করেছে। এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার তাইওয়ানের কাছে ১৪২ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে।
তাইওয়ান স্বায়ত্তশাসিত দেশ হলেও চীন এটাকে তার নিজের ভূখণ্ড বলে দাবি করে। আর সে কারণেই তাইওয়ানের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির সিদ্ধান্ত মার্কিন-চীন সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছে চীন। এছাড়া উত্তর কোরিয়ার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে দু’জন চীনা নাগরিক ও চীনের ব্যাংক অব ড্যানডংয়ের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ওয়াশিংটন। মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্টিভ মুচিন ব্যাংকটিকে অর্থপাচারের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠান মার্কিন আর্থিক ব্যবস্থার মাধ্যমে কালো তালিকাভুক্ত বলে উল্লেখ করেন। তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রি ও চীনা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণায় ইতিমধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে চীন। যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত কুই তিয়ানকাই বৃহস্পতিবার পিপল’স ডেইলি পত্রিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এই পদক্ষেপকে ট্রাম্প এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈঠকের চেতনাবিরোধী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, ‘চীনা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং বিশেষ করে তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রি অবশ্যই পারস্পরিক আস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। একই সঙ্গে এটা মার-এ-লাগোতে এ দুই নেতার বৈঠকের চেতনাবিরোধী।’ চীনা রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রি চীনের দীর্ঘদিনের ‘এক চীন নীতিকে’ও মারাত্মকভাবে লঙ্ঘন করেছে। তিয়ানকাই বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্তে চীন শক্ত প্রতিবাদ জানাচ্ছে এবং এর প্রতিক্রিয়ায় ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে চীনের অধিকার থাকবে।’ নির্বাচনী প্রচারণা থেকেই চীনের বাণিজ্য ও পররাষ্ট্রনীতির সমালোচনা করে বিভিন্ন বক্তব্য আসছিলেন ট্রাম্প। তবে প্রেসিডেন্ট জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর চীনের ‘এক চীন নীতি’ মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। বিশ্লেষকদের মতে, তাইওয়ানের কাছে ট্রাম্পের অস্ত্র বিক্রির সিদ্ধান্ত এক চীন নীতি থেকে সরে আসার ইঙ্গিত রয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন বৃহস্পতিবার বিতর্কিত এ অস্ত্র বিক্রির পরিকল্পনার বিষয়ে কংগ্রেসকে অবহিত করেছে। উল্লেখ্য, ট্রাম্পের অধীনে তাইওয়ানের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি এটাই প্রথম। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর দাবি করেছে, এসব অস্ত্র তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে। গত মার্চে প্রথম এ সব অস্ত্র বিক্রির বিষয়ে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হিদার নয়ার্ট জানিয়েছেন, চুক্তির আওতায় তাইওয়ানে যে অস্ত্রগুলো সরবরাহ করা হবে তার মধ্যে রয়েছে রাডার বিধ্বংসী উচ্চগতির ক্ষেপণাস্ত্র, বিমান প্রতিরক্ষায় ব্যবহৃত অস্ত্র এবং ভারি টর্পেডোসহ সাত ধরনের অস্ত্র।

No comments

Powered by Blogger.