শিশু সন্তানকে চুবিয়ে হত্যা করে প্রতিশোধ নিল যুবলীগ নেতা!

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় মায়ের পরকীয়ার বলি হতে হয়েছে সাত বছরের শিশু সন্তান মিজানুর রহমান জিসানকে। পানিতে চুবিয়ে হত্যার পর ওই শিশুর লাশ গর্তে পুঁতে রাখে যুবলীগ নেতা আলী আহমদ। মাছ ধরার নামে কৌশলে ডেকে নিয়ে শিশুটিকে হত্যা করা হয়। শুক্রবার রাতে গর্ত থেকে জিসানের লাশ উদ্ধার করা হলেও রোববার পুলিশ হত্যাকাণ্ডের প্রাথমিক কারণ উদঘাটন করে। স্থানীয় লোকজন ঘাতক আলী আহমদকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেছে। এ ঘটনার কয়েক দিন আগে যুবলীগ নেতা জিসানের মাকে হুমকি দিয়ে বলেছিল ‘তোমার এমন ক্ষতি করব যা জীবনেও পুষিয়ে নিতে পারবে না’। পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, উপজেলার চরতি ইউনিয়নের দক্ষিণ চরতি এলাকার আবুল হাশেমের স্ত্রী আনোয়ারা বেগমের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক ছিল একই ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদের। সম্প্রতি তাদের এ সম্পর্কে ফাটল ধরে। আনোয়ারা বেগম আলী আহমদকে এড়িয়ে চললে ক্ষেপে যায় সে। কয়েক দিন আগে আনোয়ারা বেগমকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয় আলী আহমদ। এরই মধ্যে শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আলী আহমদ মাছ ধরতে যাওয়ার সময় আনোয়ারা বেগমের শিশু ছেলে জিসানকে চকলেট দেয়ার নাম করে নিয়ে যায়। সে যে জিসানকে নিয়ে যাচ্ছে এটা এলাকার অনেকেই দেখেছেন। মাছ ধরা শেষ করে আলী আহমদ বাড়িতে ফিরে এলেও ফিরেনি জিসান। এ কারণে জিসানের বাবা আবুল হাসেম ও মা আনোয়ারা বেগম তাদের সন্তান কোথায় আছে তা আলী আহমদের কাছে জানতে চান। এ সময় আলী আহমদ জানান, জিসানের সঙ্গে তার দেখাই হয়নি। এলাকার লোকজন জিসান তার সঙ্গে যেতে দেখেছেন- এমন কথা বললে আলী আহমদ বলে, ‘আমার সঙ্গে গিয়েছিল, কিন্তু কিছুক্ষণ পর চলে এসেছে। এরপর কোথায় গেছে জানি না।’ আলী আহমদ একেক সময় একেক ধরনের কথা বলায় জিসানের বাবা-মা বিষয়টি এলাকার লোকজনকে জানান। এলাকাবাসী তাকে ডেকে শিশু জিসানের বিষয়ে জানতে চাইলে আলী আহমদ তাদেরকেও এলোমেলো তথ্য দেয়।
তখন স্থানীয় লোকজন তাকে আটক করে শিশুটির সন্ধানের জন্য চাপ দিতে থাকে। এক পর্যায়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে আলী আহমদ স্বীকার করে যে, জিসানকে ডোবার পানিতে চুবিয়ে মেরে মাটিতে পুঁতে রাখা হয়েছে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এলাকার লোকজন গিয়ে বাড়ির নিকটবর্তী ডোবার পাশের গর্ত থেকে জিসানের লাশ উদ্ধার করে। এরপর বিক্ষুব্ধ জনতা আলী আহমদকে মারধর করে সাতকানিয়া থানা পুলিশের হাতে সোপর্দ করে। নিহত জিসানের মা আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আলী আহমদ মাছ ধরার নাম করে আমার বুকের ধন জিসানকে নিয়ে গিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। আলী আহমদের সঙ্গে আমার কোনো পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল না। এটা মিথ্যা কথা। তবে আমার পরিবারের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক ছিল। একটা বিষয় নিয়ে ভুল বুঝাবুঝির জেরে কয়েক দিন আগে আলী আহমদ আমাকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছিল। সে বলেছিল, আমার বড় ধরনের ক্ষতি করবে; যা আমি পুষিয়ে নিতে পারব না। কিন্তু সে আমার কী ক্ষতি করবে তখনও তা বুঝে উঠতে পারিনি। সে আমার বুকের মানিককে এভাবে কেড়ে নেবে তা বিশ্বাসই করতে পারছি না।’ সাতকানিয়ার ওসি রফিকুল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ‘এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। আলী আহমদের সঙ্গে জিসানের মা আনোয়ারা বেগমের পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল বলে আমরা জানতে পেরেছি। হত্যা মামলায় আলী আহমদকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’

No comments

Powered by Blogger.