মসুল বিজয় ‘খুব কাছেই’

ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মসুল পুনরুদ্ধারে দীর্ঘ অভিযানের শেষ পর্যায়ে রয়েছে ইরাকি বাহিনী। শহরটিতে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) অবশিষ্ট বিচ্ছিন্ন অবস্থানগুলোতে প্রতিরোধ গড়ে তোলা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে চিরুনি অভিযান চালাচ্ছে ইরাকি সেনাবাহিনী। ইরাক সরকারের পক্ষ থেকে শিগগিরই আনুষ্ঠানিক বিজয় ঘোষণা করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইরাকি সেনাবাহিনী বলছে, মসুল দখল করতে শহরটির নিকটবর্তী তাইগ্রিস নদী থেকে মাত্র কয়েকশ’ মিটার দূরে রয়েছে তারা। তবে ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল আবাদি রোববার মসুল বিজয়ের ঘোষণা দিয়েছেন। খবর বিবিসি ও আলজাজিরার। মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনীর বিমান হামলায় গত বছরের ১৭ অক্টোবর থেকে শহরটি পুনরুদ্ধারে অভিযান শুরু করে ইরাকি বাহিনী। ২০১৪ সালে ইরাকের সুন্নি অধ্যুষিত এলাকাগুলো দখল করে ইরাক ও প্রতিবেশী সিরিয়ার দখলকৃত অংশে ‘খেলাফত’ ঘোষণা করে আইএস। এর আগেই ওই বছরের জুনে মসুল দখল করে নিয়েছিল জঙ্গিগোষ্ঠীটি। কিন্তু ৯ মাস আগে ইরাকে আইএসের সবচেয়ে বড় শক্তিকেন্দ্রটির দিকে ইরাকি বাহিনী অগ্রসর হওয়ার পর থেকে জঙ্গিরা তাদের অবস্থান হারাতে শুরু করে। অভিযানে মার্কিন জোট বাহিনীর যুদ্ধবিমান এবং জোট বাহিনীর সামরিক উপদেষ্টাদের নেতৃত্বে ইরাকি বাহিনীর সঙ্গে কাজ করছেন কুর্দি পেশমের্গা যোদ্ধারা, সুন্নি আরব আদিবাসী ও শিয়া বেসামরিক বাহিনীগুলো। আইএসের হাত থেকে শনিবার পুরান মসুলের নুজাইফি স্ট্রিটের পাশাপাশি আত-তুব ও আস-সাগা এলাকা পুনরুদ্ধার করে সেনাবাহিনী। এসব এলাকা এতদিন আইএসের শক্ত ঘাঁটি ছিল। এদিন জঙ্গিরা বেপরোয়া প্রতিরোধ চালিয়ে মসুলের পুরনো শহরের ছোট একটি এলাকার দখল ধরে রেখেছিল। দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানায়, কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওই এলাকাটি তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে বলে প্রত্যাশা করছে ইরাকি বাহিনী। ইরাকের যৌথ অপারেশন কমান্ড জানায়, আমাদের সেনা ইউনিট সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তাইগ্রিস নদীর কাছাকাছি থেকে খুব বেশি দূরে নেই তারা। অপারেশন কমান্ড আরও জানায়, মসুল শহরের পশ্চিমের ওই নদীর ধারে প্রায় শতাধিক আইএস জঙ্গি আটকা পড়েছে। এরইমধ্যে সেখানের দুটি ব্লকের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বলে দাবি করেছে সেনা কমান্ড। ইরাকি কমান্ডাররা বলছেন, আইএসকে পরাজিত করতে তাদের সেনা সদস্যরা মাত্র ‘কয়েকশ মিটার’ দূরে রয়েছে। গত এক সপ্তাহে খুব ধীর গতিতে অগ্রসর হয়েছে ইরাকি বাহিনী। কেননা, এলাকা ছাড়ার আগে মরণ কামড় হিসেবে বোমা পুঁতে রেখে পালাচ্ছে জঙ্গিরা।
শনিবার এক মার্কিন জেনারেলও ঘোষণা করেছে, মসুল বিজয় খুব কাছেই। ব্রিগেডার জেনারেল রবার্ট সফগে বলেন, ‘আজ বা কালকের মধ্যে বিজয় আসবে এমনটা বলছি না, তবে খুব শিগগিরই আইএসের পতন হবে।’ ইরাকি সেনাবাহিনীর সাহসী ভূমিকার জন্য তাদের অভিনন্দন জানান রবার্ট। গত কয়েক মাসের তীব্র লড়াইয়ের পর কামান-বন্দুকের শব্দ এখন অনেকটা কমে এসেছে। আকাশে জোট বাহিনীর যুদ্ধবিমানগুলোর আনাগোনা থাকলেও তারা আর আগের মতো বোমাবর্ষণে ব্যস্ত নেই। বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত ছোট কয়েকটি এলাকায় কিছু প্রতিরোধ অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যেই ইরাকি নিরাপত্তা বাহিনীগুলো বিজয় দাবি করা শুরু করে দিয়েছে। যদিও ইরাকি সরকার বা যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট- কেউই নিশ্চিত করেনি, তারপরও শিগগিরই বিজয়ের ঘোষণা আসবে, এরকম একটি ধারণা সবার মধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে সেনারা বিজয়োল্লাস শুরু করেছে বলে জানিয়েছে কয়েকটি গণমাধ্যম। আইএস যোদ্ধারা আত্মসমর্পণ করেছে বলে লাউডস্পিকারে ঘোষণা করেন ইরাকি এক কমান্ডার। পরে এ দাবি বাতিল করে দিয়েছে ইরাকি বাহিনীর কমান্ডার। ইরাকি পর্যবেক্ষক গোষ্ঠী বলছে, শহরটি দখল করতে আরও ২-৩ দিন সময় লাগতে পারে। শনিবার উল্লসিত পুলিশ বাহিনী মসুলের কয়েকটি এলাকায় আইএসের কালো পতাকা পায়ে মাড়িয়ে সেলফি তুলেছেন এবং বিজয় চিহ্ন ‘ভি’ দেখিয়েছেন। গত সপ্তাহেও মসুল দখলের দাবি করেছিল ইরাকি কর্তৃপক্ষ।

No comments

Powered by Blogger.