কৃষি শুমারিতেই ব্যয় ৩৩৯ কোটি টাকা

অর্থনীতিতে কৃষির অবদান খুঁজে বের করতে মাঠে নামছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। ১০ বছর পর কৃষি শুমারি (শস্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ) পরিচালনা করবে সংস্থাটি। এর আগে সর্বশেষ ২০০৮ সালে কৃষি শুমারি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এ লক্ষ্যে ৩৩৮ কোটি ৯৮ লাখ ৪৪ হাজার টাকা ব্যয় ধরে একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। চলতি বছর থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ শুমারির কার্যক্রম চলবে। এ শুমারির মাধ্যমে কৃষি খাতে শস্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপ-খাতগুলোর পরিবার পর্যায়ে কৃষি খামারের সার্বিক তথ্য সংগ্রহ করে সংকলন ও প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করা হবে। সেইসঙ্গে এ খাতে দীর্ঘমেয়াদি অবকাঠামোগত কি ধরনের পরিবর্তন এসেছে সে চিত্রও উঠে আসবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। প্রকল্প প্রস্তাবে পরিসংখ্যান ব্যুরো মূলধন খাতে দুটি জিপ কিনতে ১ কোটি ২৪ লাখ টাকা, একটি মাইক্রোবাস কেনার জন্য ৫০ লাখ টাকা এবং ৪৯টি ডাবল কেবিন পিকআপ কেনার জন্য ২৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছে। এছাড়া আপ্যায়ন ব্যয় বাবদ থোক হিসাবে ৮ কোটি ৫৭ লাখ ১৪ হাজার টাকা, অনিয়মিত শ্রমিক ৪৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৪৭টি কম্পিউটার, ল্যাপটপ, প্রিন্টার, স্ক্যানার, আইসিএস স্ক্যানার ও ক্যামেরা বাবদ ১ কোটি ৫৩ লাখ ৫২ হাজার টাকা, কম্পিউটার সফটওয়্যার বাবদ ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা এবং কম্পিউটারসামগ্রী বাবদ ১০ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব রয়েছে। এছাড়া গণনাকারীসহ অন্য নানা বিষয়ে খরচের প্রস্তাব করা হয়েছে। একাধিক সূত্র জানায়, এসব খরচের মধ্যে কিছু খরচ গুরুত্বহীন বলা যায়। তবে শুমারি চলাকালীন থোক বরাদ্দ থেকে যাতে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় করা না হয় সেজন্য কঠোর মনিটরিং করা প্রয়োজন। একটি শুমারি পরিচালনা করতে এত ব্যয়ের প্রয়োজন আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব কেএম মোজ্জামেল হক যুগান্তরকে বলেন, এটা তো জরিপ নয়, এটা হবে শুমারি। আদম শুমারি, অর্থনৈতিক শুমারির পরই পরিসংখ্যান ব্যুরোর এটিই সবচেয়ে বড় কাজ। বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার প্রতি উপজেলায় এ শুমারি পরিচালিত হবে। তাছাড়া দেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে যদি চারজন করে একটি খানা বা পরিবার ধরি তাহলে ৪ কোটি বাড়িতে গণনাকারীদের যেতে হবে। সুতরাং এটা অনেক বড় কাজ হওয়ায় ব্যয়ও এত টাকা প্রয়োজন হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কৃষি শুমারি প্রকল্পে কোনো ধরনের অনিয়ম ও ত্রুটির খবর এলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যায়ে কঠোর নজরদারি অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি। পরিসংখ্যান ব্যুরো সূত্র জানায়, বাংলাদেশে কৃষি একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত।
সরকারের নীতি নির্ধারণ ও উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণে কৃষি জমির পরিমাণ, জমির ব্যবহার, কৃষক, শস্য উৎপাদন, মৎস্য উৎপাদন এবং প্রাণিসম্পদ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা প্রধানত কৃষি শুমারির মাধ্যমেই পাওয়া যায়। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত চারটি কৃষি শুমারি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এগুলো ১৯৭৭ সালে প্রথম, ১৯৮৩-৮৪ সালে দ্বিতীয়, ১৯৯৬ সালে তৃতীয় এবং ২০০৮ সালে চতুর্থ কৃষি শুমারি অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় পরিসংখ্যান আইন ২০১৩-তে আদম শুমারি ও অর্থনৈতিক শুমারির পাশাপাশি কৃষি শুমারির অনুষ্ঠানের বিষয় উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) প্রণীত ধারণা পদ্ধতি অনুসরণ করে সদস্য দেশসমূহে পাঁচ বা ১০ বছর অন্তর কৃষি শুমারি পরিচালনা করা হয়ে থাকে। এজন্য ১০ বছরে মথায় পঞ্চম কৃষি শুমারি পরিচালনা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ শুমারি পরিচালনা করতে ২ হাজার ৬০০ জন মাস্টার ট্রেইনার ও জোনাল কর্মকর্তা, ২৪ হাজার ৭০০ জন সুপারভাইজার ও দেড় লাখ গণনাকারী কাজ করবে। প্রকল্পের আওতায় মাঠ পর্যায়ে জোন ও গণনা এলাকা নির্ধারণ, গণনা ম্যাপ ও খানা তালিকা হালনাগাদ করা, শুমারি প্রশ্নপত্র, ফিল্ড ম্যানুয়াল ও প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল চূড়ান্ত করা ও মুদ্রণ, বিভিন্ন পর্যায়ে জনবলকে প্রশিক্ষণ দেয়া, মাঠ পর্যায়ে সব খানা (পরিবার) ও কৃষি খামারের মূল গণনা বা তথ্য সংগ্রহ, জাতীয় ও জেলাভিত্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ এবং যানবাহন ক্রয় করা হবে বলে জানা গেছে। শুমারি প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থবছরভিত্তিক বরাদ্দ চাহিদা হচ্ছে, চলতি অর্থবছরে ৩১০ কোটি ৬ লাখ ৬৪ হাজার টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৩ কোটি ৬১ লাখ ৮০ হাজার টাকা, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৯ কোটি ৩৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকা এবং ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ কোটি ৮৮ লাখ ৬৫ হাজার টাকা।

No comments

Powered by Blogger.