রোজার বিনিময়ে জান্নাত নসিব হয়

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ফিরে এলো মাহে রমজান। মুমিনের জীবনে ফিরে ফিরে আসে অবারিত রহমত, বরকত, নাজাতের এ মাস। আল্লাহর সঙ্গে প্রেম করার এই মাস। বন্ধন রচনার এই মাস। সব চাওয়া-পাওয়া, ক্ষমা-মুক্তি, ইবাদত-বন্দেগি ও নৈকট্য লাভের এ মাস। এ মাসে মুমিনের ঈমানের বাগানে রহমতের ফুল ফোটে। সজীব হয়ে ওঠে ঈমানের চারা। সিয়াম-সাধনা ও ইবাদতের মাধ্যমে মহান আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় এটি। ইসলামের পঞ্চ ভিত্তির তৃতীয় ভিত্তি রোজা। প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমান নর-নারীর জন্য মাহে রমজানের রোজা রাখা ফরজ। একজন মুসলিমের জন্য নামাজের মতোই ফরজ রমজান মাসের রোজা পালন করা। মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনরা তোমাদের প্রতি আমি মাহে রমজানের রোজাকে ফরজ করেছি যেমন ফরজ করেছিলাম তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদের প্রতি। এতে আশা করা যায়, তোমরা তাকওয়া বা খোদাভীতি অর্জন করতে পারবে।’ (সূরা বাকারা, আয়াত-১৮৩) এভাবেই পবিত্র কোরআনে রমজান মাসের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। আদর্শ সমাজ নির্মাণে রমজানের ভূমিকা অন্যতম।
রমজানের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে একজন মানুষ হয়ে ওঠে প্রকৃত মুমিন। স্বচ্ছ পানিতে ভরে ওঠে আমলের দরিয়া। সব পাপ-পঙ্কিলতা মুছে ফেলার জন্য ব্যাকুল হয় সে। সব ধরনের জুলুম-অন্যায় থেকে বেঁচে থাকার জাগরণ ওঠে তার হৃদয়ে। আত্মশুদ্ধির মই বেয়ে আরশে আজিমে ওঠে সিয়াম বিপ্লবের সংযমী পতাকা। এ ধরনের আবেগ অনুভূতির মাধ্যমেই রমজানের মাহাত্ম্য প্রকাশ পায়। তবে মাহে রমজানে পুণ্যের বদলে, পাপ ও অন্যায় কারও কারও জীবনে বেড়ে যায়, এটা নিশ্চয়ই মানব জীবনের একটি আত্মিক পরাজয়, এটা নিশ্চয় শয়তানের ক্রীড়া, যার প্রভাব ব্যক্তি ও সমাজের ওপর বর্ষিত হলে সমাজ কলুষিত হয়ে যায়। এ মাসে বান্দা পার্থিব সব চাহিদা বিসর্জন দিয়ে আল্লাহর দয়া ও রহমত লাভ করার চেষ্টা করতে হবে। অতীতের সব পাপাচার মুছে ফেলে খোদার কাছে ক্ষমা চেয়ে নতুনভাবে ঈমানি জীবনযাপনের শপথ গ্রহণ করবে, তাকওয়ার অনুশীলনের মাধ্যমে পুরো বছরের ইবাদত ও আনুগত্যের শক্তি সঞ্চয় করবে, চিন্তাচেতনা ও কর্ম-সাধনায় আল্লাহর আনুগত্যে নিজেকে সমর্পিত করবে- এই হচ্ছে মুমিনের মাহে রমজান। এরকম মুমিনকেই রমজান পৌঁছে দেবে বেহেশতের রাইয়ান নামক দরজার কাছে। আমাদের সবার যেন রমজানের রোজার বিনিময়ে জান্নাত নসিব হয়।
লেখক : খতিব, গুলশান সেন্ট্রাল আজাদ মসজিদ ঢাকা

No comments

Powered by Blogger.