কিম জংয়ের সাক্ষাৎ পেলে ‘সম্মানিত হব’ : ট্রাম্প

উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সাক্ষাৎ পেলে সম্মানিত হবেন বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কোরীয় উপদ্বীপে চলমান যুদ্ধাবস্থার মধ্যে সোমবার ব্লুমবার্গকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, ‘তার (কিম) সঙ্গে আমার সাক্ষাতের মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে অবশ্যই আমি তা করব। এটা করতে পারলে আমি সম্মানিত বোধ করব।’ বর্তমান পরিস্থিতিতে কিমের সঙ্গে সাক্ষাতে রাজি আছেন বলেও জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। খবর বিবিসি ও সিএনএনের এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের কোনো দায়িত্বরত প্রেসিডেন্ট উত্তর কোরিয়ার কোনো ক্ষমতাসীন নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। তাই ট্রাম্পের এ পরিকল্পনা বিতর্কিত বলে মনে করা হচ্ছে। ব্লুমবার্গের সঙ্গে ওই সাক্ষাৎকারের পর তার ব্যাখ্যা দেন হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র শন স্পাইসার। তিনি বলেন, ‘তাদের সাক্ষাতের আগে উত্তর কোরিয়াকে অবশ্যই কিছু শর্ত মানতে হবে। উত্তর কোরিয়ার পারমাণু কর্মসূচির সমাপ্তি দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।’ এর আগে রোববার মার্কিন গণমাধ্যম সিবিএসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে কিমকে ‘অত্যন্ত বুদ্ধিদীপ্ত’ আখ্যা দেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘মাত্র ২৬-২৭ বছর বয়সে তিনি (কিম) বাবাকে হারান। এ অবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই অনেক কিছু মোকাবেলা, বিশেষ করে জেনারেলদের সঙ্গে লড়াই করে তাকে নেতা হতে হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমি নিশ্চিত বহু মানুষ তার কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিতে চেয়েছে। হয়তো তার ফুফা তার কাছ থেকে ক্ষমতা নিতে চেয়েছিল। কিন্তু তিনি তা হতে দেননি। কাজেই বোঝাই যায়, তিনি অত্যন্ত সেয়ানা লোক।’ এদিকে, উত্তর কোরিয়ার পরমাণু হুমকি মোকাবেলায় দক্ষিণ কোরিয়ায় মোতায়েন করা যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী সিস্টেম থাড সচল হয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী। ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী পদ্ধতিটি পুরোপুরি কার্যকর হতে আরও কয়েক মাস লাগলেও এটি এখনই পিয়ংইয়ংয়ের ক্ষেপণাস্ত্রকে বাধা দিতে পারবে বলে জানান যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা। গত সপ্তাহে সিউলে কয়েক দিনের মধ্যেই থাড সিস্টেম মোতায়েন করা হবে বলে ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। তখন ধারণা করা হচ্ছিল, চলতি বছরের শেষ দিকের আগে এটি ব্যবহার উপযোগী হবে না। দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর এক মুখপাত্র বলেন,
‘থাড এখন কোরিয়া প্রজাতন্ত্রকে সুরক্ষা দিতে সক্ষম।’ তবে পদ্ধতিটির এখন ‘শুধুমাত্র প্রাথমিক বাধা দেয়ার সক্ষমতা’ আছে বলে জানান যুক্তরাষ্ট্রের এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা। পদ্ধতিটির অন্যান্য অংশ যুক্ত হওয়ার পর চলতি বছরের শেষ নাগাদ এটি আরও শক্তিশালী হবে বলে জানান তিনি। টার্মিনাল হাই অ্যালটিচিউড এরিয়া ডিফেন্স (থাড) দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যাঞ্চলীয় কাউন্টি সেয়ংজুর একটি পরিত্যক্ত গলফ কোর্সে স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে এটি স্থাপনের প্রতিবাদে আশপাশের বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ প্রতিবাদ জানিয়েছে। স্থানীয় অনেকের ধারণা, সিস্টেমটি সম্ভাব্য একটি লক্ষ্যস্থল হওয়ায় তাদের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় এ সিস্টেম বসানোর প্রতিবাদ করেছে চীনও। তাদের ধারণা, থাডের রাডারের পরিধির কারণে তাদের সামরিক বাহিনীর নিরাপত্তা অভিযানেও হস্তক্ষেপ করতে পারবে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার হুমকি-পাল্টাহুমকিতে কয়েক সপ্তাহ ধরে কোরীয় উপদ্বীপজুড়ে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্র ও একমাত্র ঘনিষ্ঠ মিত্র চীনের সংযমের প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে উত্তর কোরিয়া ষষ্ঠবারের মতো পারমাণু বোমার পরীক্ষা চালাতে পারে এমন ধারণা থেকে সৃষ্ট উদ্বেগ উত্তেজনায় রূপ নিয়েছে। শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা থেকে বিরত রাখতে কোরীয় উপদ্বীপের জলসীমায় বিমানবাহী রণতরীসহ নৌবহর ও সাবমেরিন পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এবার যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্রবিরোধী সিস্টেমও এগুলোর সঙ্গে যুক্ত হল।

No comments

Powered by Blogger.