পশ্চিমাঞ্চল রেলের ১৭১ গেট কিপার ছাঁটাই

ছয় মাসের বেতন বকেয়া রেখে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ১৭১ গেট কিপারকে ছাঁটাই করা হয়েছে। বিনা নোটিশে মঙ্গলবার সকালে অস্থায়ী এসব কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়। এতে চরম বেকায়দায় পড়েছেন দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করা এ শ্রমিকরা। এদিকে ছাঁটাই হওয়ার পর বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা দুপুরে রাজশাহী মহানগরীর সিটি বাইপাস রেলক্রসিংয়ে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন। ছাঁটাই হওয়া গেট কিপাররা জানান, পশ্চিম রেলের গেট কিপারসহ অন্যান্য অস্থায়ী কর্মচারীদের গত ৬ মাস ধরে বেতন পরিশোধ করা হয়নি। এ নিয়ে গত ৩০ এপ্রিল তারা প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে সাক্ষাত করতে যান। কিন্তু প্রধান প্রকৌশলী না থাকায় শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী। তিনি ১৫ দিনের মধ্যে তাদের বেতন পরিশোধের আশ্বাস দেন। মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে রেলওয়ের গেট কিপাররা প্রতিটি গেটে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এসময় প্রতিটি গেটে গিয়ে রেলওয়ের ওয়েম্যানরা গেট কিপারদের বলেন, পশ্চিম রেলের সব গেট কিপারকে মৌখিকভাবে ছাঁটাই করা হয়েছে। এখন থেকে গেট কিপারদের পরিবর্তে তারা দায়িত্ব পালন করবেন। নগরীর সিটি বাইপাস গেটে ১৭ বছর ধরে অস্থায়ীভাবে চাকরি করছিলেন গেট কিপার দিপু মিয়া (৪৫)। ওয়েম্যানদের এমন কথা শুনে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। দিপু মিয়া বলেন, তার মতো প্রায় সব গেট কিপার বহুদিন ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ের মধ্যে বছরের প্রতিটি দিন তারা দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু তাদের চাকরি স্থায়ী করা হয়নি। এখন তাদের ছাঁটাই করার ঘোষণা দেয়া হলো।
এতে তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন। শাহাদাত হোসেন বাচ্চু (৩৫) নামে অপর এক গেট কিপার বলেন, তারা জানতে পেরেছেন রেলওয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপকের (ডিজিএম) মৌখিক নির্দেশে পশ্চিম রেলের মোট ১৭১ গেট কিপারকেই ছাঁটাই করা হয়েছে। এ জন্য আগে থেকে তাদের কোনো নোটিশও দেয়া হয়নি। এখন তাদের জায়গায় দায়িত্ব পালন করবেন রেললাইন মেরামতের কাজে নিয়োজিত স্থায়ী কর্মী ওয়েম্যানরা। প্রায় ১২ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করা এই শ্রমিক বলেন, তাদের সরকারি চাকরির বয়সের সময়সীমা শেষ হয়ে গেছে। এখন এভাবে তাদের ছাঁটাই করা হলে পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহারে দিন পার করতে হবে। তাই চাকরি ফিরিয়ে দিয়ে স্থায়ী করার দাবিতে বুধবার তারা রেলভবনে যাবেন। দাবি মানা না হলে তারা আন্দোলন করবেন। চাকরি ও বকেয়া বেতনের দাবিতে প্রয়োজনে তারা শ্রম আদালতে মামলা করবেন। অস্থায়ী কর্মীদের এভাবে ছাঁটাইয়ের বিষয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী রমজান আলী প্রথমে কর্মীদের ছাঁটাইয়ের বিষয়টি অস্বীকার করেন। তবে পরবর্তীতে তিনি বিষয়টি স্বীকার করে বলেন,‘বাড়ির কাজের লোককে বেতন দিতে না পারলে কী করে? কাজ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। বিষয়টি তেমনই। রেল কর্তৃপক্ষ গেট কিপারদের বেতন দিতে পারছে না। এ জন্যই তাদের ছাঁটাই করা হয়েছে।’

No comments

Powered by Blogger.