স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি বিএনপির

গুলশানে বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে পুলিশ বেআইনিভাবে তল্লাশি চালিয়েছে অভিযোগ করে এজন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের পদত্যাগ দাবি করেছে বিএনপি। আজ রোববার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই দাবি জানান। তিনি বলেন, সরকার সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে চেয়াপারসনের কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়েছে। এজন্য আমরা আজকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছি। কারণ আমরা মনে করি, সম্পূর্ণভাবে বেআইনি কাজ করেছে পুলিশ। সেজন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবশ্যই সেটার জবাব দিতে হবে, তাকেই এর দায় বহন করতে হবে। সেজন্য আমরা তার (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) পদত্যাগ দাবি করছি। একই সঙ্গে বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, গত কয়েক দিন ধরে সারাদেশে গণগ্রেফতার শুরু করেছে। আমরা কাছে এখনই খবর এসছে, কুষ্টিয়ার সদর উপজেলাতে ১৭ জন নেতা-কর্মীকে গতরাতে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। সাতক্ষীরায় ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে। গতরাতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণে সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার সাহেবের বাসায় তল্লাশি চালানো হয়েছে। এভাবে সারাদেশেই পুনরায় আবার নতুন করে গণগ্রেফতার শুরু করেছে। নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। সংবাদ সম্মেলনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব ও সুপ্রিম কোর্টের সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, হাবিবউন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, বিলকিস জাহান শিরিন, শামা ওবায়েদ, শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদের ভুইয়া জুয়েল, কাজী আবুল বাশার প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা যখন দেশে একটা শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক চর্চার শুরু করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছি, যখন আমরা ‘ভিশন ২০৩০’ দিয়েছি। এরপরপরই গুলশানে সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলের নেত্রীর কার্যালয়ে যে আগ্রাসন হয়েছে- এটা নজির বিহীন ঘটনা। এ ধরণের ফ্যাসিবাদী আক্রমন দেশে যে গণতন্ত্রের ন্যুনতম ভবিষ্যৎ আছে, তাকে বিনষ্ট করবার একটা পাঁয়তারা। এটা উস্কানিমূলক। আমরা মনে করি, একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের প্রধানের কার্যালয়ে বেআইনিভাবে পুলিশি তল্লাশি অভিযান গণতন্ত্রের জন্য অশনি সংকেত বহন করছে। এটা গণতন্ত্রের জন্য, মানুষের স্বাধীনতার জন্যে, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে, মানুষের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে এই ঘটনাটি একটি অত্যন্ত ঘৃণিত ন্যাক্কারজনক ঘটনা। যা দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটা কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়ে থাকবে।
আমরা মনে করি, এটা একটি ফ্যাসিবাদী আক্রমণ। এ থেকে আবারো প্রমাণিত হলো, এই সরকার গণতন্ত্রের বিশ্বাস করে না। তারা গণতন্ত্রের সব প্রতিষ্ঠাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে এবং জনগণের অধিকারকে হরণ করছে। গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে পুলিশের পরিচালিত তল্লাশিটি বেআইনি হয়েছে দাবি করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন বলেন, 'সিআরপিসি‘র বিধান হচ্ছে- এরকম তল্লাশি করতে হলে স্থানীয় দুই গণমাণ্য ব্যক্তি অবশ্যই থাকতে হবে। এখানে দেখা যাচ্ছে, গণমান্য ব্যক্তি কাউকেই অবহিত করা হয়নি। আইনের আরো বিধান হচ্ছে, যে ভবনটি তল্লাশি করবে, সেই ভবনের যে মালিক বা সেই ভবনের যারা থাকেন, তাদেরকে অবহিত করবেন। প্রথমে বলবেন, তাদের দরজা এবং যেভাবে আছে সেগুলো খুলে দিতে। সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র এই আইনজীবী বলেন, তল্লাশির পর আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে জেনেছি, তারা কোনো গণমান্য ব্যক্তি তো নেননি। ওই অফিসে যে দু'জন পিয়ন ছিলো, তাদেরকে একটি কক্ষে আটকিয়ে রেখে তল্লাশি করেছে। এসব কাজ সম্পূর্ণরূপে বেআইনি। পুলিশ সিআরপিসি‘র ১০৩ ধারা লঙ্ঘন করেছে এবং ৯৬ ধারাও যথাযথভাবে প্রতিপালন করা হয়নি। আদালত যে আদেশ দিয়ে তা প্রতিপালনে তারা আইনের কোনো তোয়াক্কা করে নাই। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনৈতিক দলের অফিসে তল্লাশি করা ইতিপূর্বে আমার প্রায় ৩৭ বছরে আইন পেশায় আমি কখনো দেখিনি। এখানে আদালত শুধুমাত্র আদেশ নিয়েছে কিন্তু কোনো পরোয়ানা ইস্যু হয় নাই। দলের সিনিয়র আইনজীবীরা বিষয়টি নিয়ে বসে ‘পরবর্তী পদক্ষেপ’ গ্রহণ করবে বলে জানান অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন।

No comments

Powered by Blogger.