চট্টগ্রামেে উগ্রবাদীদের স্থানীয় নেটওয়ার্ক খুঁজতে নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে জঙ্গী আস্তানায় অভিযান চালিয়ে ২৯টি গ্রেনেড ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধারের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে চট্টগ্রামের পুলিশ প্রশাসন। এসব অস্ত্রের সাথে স্থানীয় পর্যায়ের কোনো জঙ্গী যোগসূত্র আছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। বিশেষ করে পুলিশ এখন অন্যান্য মাধ্যম থেকে বেশি জোর দিচ্ছে মোবাইল নেটওয়ার্কের দিকে। পুলিশের মিরসরাই সার্কেলের এএসপি মাহবুবুর রহমান জানান, পুরো ঘটনাটি কুমিল্লার চান্দিনা থেকে সৃষ্ট।
তবে এখানে এসে কেন পৌছালো, লক্ষ্য কী ছিল, তা খতিয়ে দেখছি আমরা। মিরসরাইয়ে কোনো প্রকার আসামির সূত্র না পাওয়ায় আমরা মোবাইল নেটওয়ার্কের দিকেই বেশি নজর দিচ্ছি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরসরাই থানার ওসি (তদন্ত) জাকির হোসেন বলেন, মিরসরাইয়ে মূলত কোনো আসামি নেই। তবু আমরা মোবাইল নেটওয়ার্কের সূত্র ধরে এগুচ্ছি। জঙ্গীদের এখানে কোনো প্রকার যোগসাজোশ আছে কিনা খতিয়ে দেখার পাশাপাশি ওদের টার্গেটও চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। আশা করছি, অবশিষ্ট আসামিদের শীঘ্রই ধরা সম্ভব হবে। মিরসরাইয়ে নতুন করে জঙ্গী আস্তানার সন্ধান পাওয়ার পর সতর্কতা বাড়িয়েছে চট্টগ্রামের পুলিশ। বিভিন্ন এলাকায় ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি এলাকায় এলাকায় ‘রেইড’ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা। মিরসরাইয়ের ঘটনার পর এ অঞ্চলে নতুন কোনো আস্তানা আছে কিনা তা জানতে গোয়েন্দা নজরদারি ও অভিযান বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে পুলিশ সুপার জানান। কুমিল্লার চান্দিনায় গত মঙ্গলবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে একটি বাসে তল্লাসীর সময় পুলিশের দিকে বোমা ছোড়ে দুই জঙ্গি। পরে তাদের গুলি করে ও ধাওয়া দিয়ে আটক করা হয়। দুই জঙ্গীর মধ্যে মাহমুদুল হাসান নামের একজনকে নিয়ে ওই রাতেই মিরসরাইয়ের একটি বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় ২৯টি হাতবোমা, নয়টি চাপাতি, ২৮০ প্যাকেট বিয়ারিংয়ের বল এবং ৪০টি বিস্ফোরক জেল। রিদওয়ান মঞ্জিল নামে দোতলা ওই বাড়ির মালিক পুলিশকে বলেছেন, ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে মাহমুদুলই গত ফেব্রুয়ারি মাসে তার বাড়ির নিচ তলা ভাড়া নেন। নব্য জেএমবির সদস্যরা ওই বাড়িতে বিস্ফোরক তৈরি করত বলে প্রাথমিক তথ্য প্রমাণ পাওয়ার কথা বলেছেন কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের উপ-কমিশনার মহিবুল ইসলাম। পুলিশ সুপার মিনা বলেন, আগে থেকে নজরদারি থাকলেও সাম্প্রতিক ঘটনার পর সব থানাকে নতুন করে সতর্ক করেছেন তারা।
‘এলাকার মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়ানোর পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি ও ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিরসরাই উপজেলা একদিকে দুর্গম পাহাড়, ঝিরি ঝরনা আর অন্যপাশে বিশাল চরাঞ্চল, পরে ভারত সীমান্ত। এই মিরসরাইয়ের বুক চিরে ছুটে গেছে দেশের প্রধানতম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। তবে ভৌগলিক অবস্থানের সুযোগ নিয়েছে অপরাধী চক্র। একদিকে পাহাড়ের দূর্গম পরিবেশ, অন্যপাশে মহাসড়ক। ইচ্ছে করলেই অপরাধ করে সন্ত্রাসীরা লুকিয়ে পড়তে পারে। আইন-শৃংখলাবাহিনীর চোখ এড়াতে পারে। চাইলে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতও চলে যাওয়া যায়। আর ঢাকা ও চট্টগ্রামের সঙ্গেও যোগাযোগ সহজ। এখানের নিরিবিলি পাহাড়ি পরিবেশে খুব সহজেই তারা আস্তানা তৈরি করতে পারছে। এর আগে কুমিল্লার চান্দিনায় একটি পুলিশ চেক পয়েন্টে হামলার চালিয়ে এক পুলিশ সদস্যকে আহত করে জঙ্গিরা। এ সময় গ্রেফতার হওয়া দুই জঙ্গিকে জিজ্ঞাসাবাদের পরেই ফের উঠে আসে মিরসরাইয়ের নাম। আটককৃতদের বক্তব্যের সূত্র ধরেই চালানো হয় অভিযান।

No comments

Powered by Blogger.