খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় আইএমএফের উদ্বেগ

ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলেছে, ব্যাংকিং খাতে মন্দ ঋণ বাড়ছে, যা উদ্বেগজনক। অবশ্যই এটা কমাতে হবে। কারণ খেলাপি ঋণ ব্যাংকগুলোকে দুর্বল করছে। এজন্য ব্যাংকগুলোর ওপর তদারকি ও নজরদারি বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে যে কোনো ধরনের সহযোগিতা করতে আইএমএফ প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া সংস্থাটি নির্দিষ্ট সময়সূচি অনুযায়ী নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছে। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে আইএমএফের এশিয়া-প্যাসিফিক বিভাগের প্রধান ব্রায়ান এইতকেন বলেন, খেলাপি ঋণ এখন ব্যাংকিং খাতের বড় সমস্যা। এর পরিমাণ সরকারি ব্যাংকগুলোতে বাড়ছে। কিন্তু বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে সেভাবে বাড়ছে না। এরপরও নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দিচ্ছে সরকার। এ জন্য দরকার শক্ত পর্যবেক্ষণ। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাংলাদেশে বড় ধরনের বিনিয়োগের প্রয়োজন। জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়াতে পুঁজিবাজার উন্নয়ন করতে হবে। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ বাড়াতে বন্ড মার্কেটকে সচল করতে হবে।
এক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো বন্ড ছেড়ে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে। সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বেশি উল্লেখ করে আইএমএফ বলেছে, দেশের জাতীয় বাজেটের অর্থায়নের জন্য সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকছে সরকার। এ নীতির পরিবর্তন করতে হবে। এছাড়া বাজেটের অর্থায়নের দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ প্রয়োজন। এজন্য সরকারকে বন্ডের প্রতি জোর দিতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, টেকসই সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য সরকারি বিনিয়োগ বাড়িয়ে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি, প্রতিযোগিতা তৈরি এবং উৎপাদনমুখী খাতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সহায়তা দরকার। এসব বিষয় নিয়ে আইএমএফ প্রতিনিধি দল সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা করেছে। আরও বলা হয়, কর আহরণ পদ্ধতি আরও আধুনিকায়ন করতে হবে। রাজস্ব আয় বাড়াতে নতুন নতুন খাতের সন্ধান করতে হবে। একই সঙ্গে সরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এতে রাজস্ব আদায় বাড়বে। জিডিপির প্রবৃদ্ধিও বাড়বে। আগামী পহেলা জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলে রাজস্ব আয় বাড়বে। নতুন এই আইন কর প্রশাসনকে আরও স্বচ্ছ করবে। পাশাপাশি করদাতাদের খরচ কমাতে সহায়তা করবে। এশিয়া-প্যাসিফিক বিভাগের প্রধান ব্রায়ান এইতকেন বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে রফতানি আয় এবং রেমিটেন্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অবস্থা পবিরর্তন করে দিচ্ছে। এছাড়া একটি দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের প্রয়োজন আছে। বর্তমান বাংলাদেশের রিজার্ভ গত কয়েক বছরের তুলনায় অনেক বেশি। এটি অর্থনীতিতে স্যালাইন হিসেবে কিভাবে কাজ করবে তা নিশ্চিত করতে হবে।
এছাড়া আইএমএফ মনে করছে, বাংলাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য কম, রেমিটেন্স প্রবাহ ও অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির কারণে অর্থনীতিতে সুফল আনবে। এর সুবিধা হিসেবে জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়বে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে। চলতি অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী মূল্যস্ফীতি ও জিডিপির প্রবৃদ্ধি ঠিক থাকবে। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিগত অর্থবছরের তুলনায় জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়ানো একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হবে। তবে মধ্যমেয়াদি দেশে পৌঁছতে হলে সামষ্টিক অর্থনীতির নীতি আরও সংস্কার এবং প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তার দরকার হবে। অনেক ব্যাংক থাকা সত্ত্বে সরকার নতুন দুটি ব্যাংক দিচ্ছে আপনি কি মনে করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক দেশে ব্যাংকের সংখ্যা বেশি আছে। এক্ষেত্রে সরকারকে আর্থিক খাতে শক্তভাবে মনিটরিং করতে হবে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বিভিন্ন দিক পর্যবেক্ষণে ব্রায়ান অ্যাটকিনের নেতৃত্বে আইএমএফের ৩ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় আসে। ১১ দিনের এই সফরে প্রতিনিধি দলটি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। সেই সফরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরতেই এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.