পাবনায় পিয়াজের দরে ধস

পাবনায় জেলায় চলতি মওসুমে গোটা পিয়াজের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে মুলকাটা পেঁয়াজের বাজার দরে ধস নেমেছে। মুলকাঁটা পেঁয়াজ প্রতি মাণ ৮০০ টাকা থেকে কমে সাড়ে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গোটা পেঁয়াজ বাজারে উঠলে দাম আরো কমতে পারে বলে ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। পেঁয়াজের দাম কমে যাওয়ায় কৃষকদের মাঝে হতাশা দেখা দিয়েছে। দেশে পেঁয়াজ চাহিদার ৩০ ভাগ পুরণ করে থাকে পাবনায় উৎপাদিত। পাবনা কৃষি সম্প্রসারন অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ১৯ লাখ টন। সেখানে উৎপাদন হয় মাত্র ১২ লাখ টন। ঘাটতি থাকে সাত লাখ টন। এই পেঁয়াজ বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। চলতি বছর পাবনা জেলায় ২৫ হাজার কৃষক ফরিদপুরি, তাহেরপুরী ও মিটকা জাতের পেঁয়াজ আবাদ করেছেন। তবে তাহেরপুরী জাতের আবাদ হয়েছে সবচেয়ে বেশি। প্রায় ৪৭ হাজার ৯২২ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রতি হেক্টরে গড়ে সাড়ে ১৩ টন হিসেবে প্রায় ছয় লাখ ৪৬ হাজার ৯৪৭ টন। আবহাওয়া অনুকুুলে থাকায় পেঁয়াজ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্র ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।দেশে পেঁয়াজ চাহিদার ৩০ ভাগ পুরণ করে থাকে পাবনায় উৎপাদিত। পাবনার সুজানগর উপজেলায় ১৮ হাজার হেক্টরে দুই লাখ ৪৩ হাজার টন, সাঁথিয়ায় ১৬ হাজার হেক্টরে দুই লাখ ১৬ হাজার টন, পাবনা সদরে পাঁচ হাজার হেক্টরে ৬৭ হাজার ৫০০ টন, ঈশ্বরদীতে দুই হাজার ২১০ হেক্টরে ২৯ হাজার ৮৩৫ টন, বেড়ায় দুই হাজার হেক্টরে ২৭ হাজার টন, ফরিদপুরে এক হাজার ১০০ হেক্টরে সাড়ে ১৪ হাজার ৮৫০ টন, চাটমোহরে এক হাজার ১০০ হেক্টরে সাড়ে ১৪ হাজার ৮৫০ টন, ভাঙ্গুড়ায় এক হ্াজার হেক্টরে ১৩ হাজার ৫০০ টন ও আটঘড়িয়ায় এক হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সাড়ে ২০ হাজার ২৫০ টন পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। প্রায় ৪৭ হাজার ৯২২ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রতি হেক্টরে গড়ে সাড়ে ১৩ টন হিসেবে প্রায় ছয় লাখ ৪৬ হাজার ৯৪৭ টন। সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয় সুজানগর। তবে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবছর পেঁয়াজ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে কৃষকরা আশা প্রকাশ করেছেন।
পাবনার বিভিন্ন হাটÑবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ বছর জেলায় মুলকাটা পিয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছ্।ে প্রতি বিঘায় ৩০ থেকে ৩৫ মন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। বর্তমানে হাটবাজারে মুলকাটা পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়। গোটা পেঁয়াজ হাটবাজারে আমদানি শুরু হলে দাম আরো কমে যেতে পারে বলে র্কষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতীয় পেঁয়াজের অবাধ আমদানি কারণে দেশি পেঁয়াজের দাম কমে গেছে। তাছাড়া চাহিদার চেয়ে হাট-বাজারে বেশি আমদানি হওয়ায় পেঁয়াজের দাম কমেছে। আজ শনিবার বেড়া সিঅ্যান্ডবি চতুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, হাটে প্রায় পাঁচ থেকে সাত হাজার মন মুলকাটা পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। চট্রগ্রাম, সিলেট, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বেপারী, পাইকার ও বাঁধাই ব্যবসায়ীরা আরৎদারের মাধ্যমে চাহিদা অনুয়ায়ী পেঁয়াজ কিনছেন। পরে পেঁয়াজ বস্তায় ভরে ট্রাকে করে সড়ক পথে নিজ নিজ গন্তব্যে নিয়ে যাচ্ছেন। সপ্তাহের প্রতি শনি ও মঙ্গলবার এই দুই দিন হাট বসে। হাটে মান ভেদে প্রতি মন পেঁয়াজ ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। চতুরহাটে সুজানগর ও সাঁথিয়া এলাকার কৃষক আজিম, আহাদ আলী, অমল দাস, রজব আলী অনেকেই জানান, পেঁয়াজ আবাদে প্রতিদিন একজন কৃষি শ্রমিককে দিতে হয় ৪০০ টাকা। এছাড়া তিন বেলা খাবারও দিতে হয়। খাকছাড়া গ্রামের রমজান আলী জানান, প্রতি বিঘা জমিতে বীজ আড়াই হাজার টাকা, চারা তৈরি এক হাজার ৫০০ টাকা, চারা রোপন থেকে পেঁয়াজ তোলা পর্যন্ত ৪০ জন শ্রমিক প্রয়োজন হয়। এই ৪০ জন শ্রমিকের শ্রমমূল্য ও খাবার বাবদ খরচ হয় ১৮ হাজার টাকা। রাসায়নিক সার ও কম্পোষ্ট সার এক হাজার ২০০ টাকা থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা, এবং সেচ খরচ লেগেছে ৫০০ টাকা। নিড়ানীতে লেগেছে এক হাজার ৫০০ টাকা। এছাড়া পরিবহন খরচসহ প্রতি বিঘা জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদন খরচ পড়েছে প্রায় ২৮ হাজার টাকা। পেঁয়াজ চাষিরা জানান, প্রতি বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে মুলকাটা পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ মন। প্রতি মন পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা দরে। অর্থাৎ কৃষকেরা প্রতি বিঘা জমির পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় খরচ বাদে লোকসান হয়েছে ১২ হাজার হাজার টাকা। মহাজনের ঋণ ও কৃষি শ্রমিকের মজুরী পরিশোধ করতে মওসুমের শুরুতেই প্রান্তিক ও বর্গাচাষিদের শ্রমে-ঘামে ফলানো পেঁয়াজ লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। অবশ্য তারা প্রতিটি ফসলেরই ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন। অন্যদিকে গোটা পিয়াজ আবাদ খরচ যেমন বেশী, ফলনও বেশী পাওয়া যায়। এই গোটা পেঁয়াজ দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। ক্ষিদির গ্রামের পেঁয়াজ চাষি ওয়াজেদ মন্ডল জানান, মুলকাটা পিয়াজে প্রতি বিঘায় তার লোকসান হয়েছে প্রায় ১২ হাজার টাকা। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে আগামীতে পেঁয়াজ আবাদ অনেকেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে বলে কৃষরা জানিয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.