আদালতের বাইরে মীমাংসা চায় ভারতের সুপ্রিমকোর্ট

ভারতের অযোধ্যায় রাম মন্দির এবং বাবরি মসজিদ বিতর্কের সমাধান আদালতের বাইরে হওয়া উচিত বলে মনে করছে ভারতের সুপ্রিমকোর্ট। মঙ্গলবার দেশটির সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছে, হিন্দু-মুসলিম দুই পক্ষ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করুক। এই ইস্যুকে ‘স্পর্শকাতর ও আবেগের’ বিষয় উল্লেখ করে ৩১ মার্চের মধ্যে দুই পক্ষকে আলোচনায় বসার তাগিদ দেয়া হয়েছে। খবর এনডিটিভির। রাম মন্দির-বাবরি মসজিদ নিয়ে চলা একটি মামলার শুনানির সময় ভারতের প্রধান বিচারপতি জে এস খেহর বলেন, দুই পক্ষ নিজেদের মধ্যে আলোচনা করুন। আদালতের আদেশে বলা হয়, এই সমস্যা ধর্ম আর বিশ্বাসের সঙ্গে জড়িত। তাই এরকম একটি সংবেদনশীল বিষয়ের সমাধান একমাত্র আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই হতে পারে। ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতা সুব্রামানিয়ম স্বামী সুপ্রিমকোর্টে একটি আবেদন জানিয়েছিলেন যাতে অযোধ্যা মামলার দ্রুত শুনানি হয়। স্বামী সম্প্রতি বিবিসির একটি ফেসবুক লাইভ অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেছিলেন যে, দু’বছরের মধ্যে রাম মন্দির তৈরি হবে। সে সময় তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের পক্ষে অন্য কোনো জায়গায় রাম মন্দির তৈরি সম্ভব নয়। কারণ এটা ধর্মবিশ্বাসের ব্যাপার।’ সুপ্রিমকোর্ট বলেছে, আদালতের বাইরে যাতে গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছানো যায়, তার চেষ্টা করুক সব মহল। দরকারে মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ করা হোক। প্রধান বিচারপতি জেএস খেহর জানিয়েছেন, চাইলে তিনি মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে রাজি, তবে তা এজলাসের বাইরে হতে হবে। উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের অযোধ্যাতে ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত বাবরি মসজি ঘিরে কয়েক দশক ধরেই বিতর্ক চলছে, হয়েছে বহু মামলা মোকদ্দমাও। হিন্দুদের একটা অংশ বিশ্বাস করেন, যে জায়গায় মোগল সম্রাটরা বাবরি মসজিদ বানিয়েছিলেন, সেটাই হিন্দুদের আরাধ্য ভগবান রামচন্দ্রের জন্মস্থান।
সেখানকার রামমন্দির ভেঙেই মসজিদ তৈরি হয়েছিল। আশির দশকের শেষদিক থেকে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো ওই মসজিদ ভেঙে রামমন্দির তৈরি করার দাবিকে একটা রাজনৈতিক দাবিতে পরিণত করেন, যার মধ্যেই কয়েক লাখ উন্মত্ত হিন্দুত্ববাদী জনতা ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় বাবরি মসজিদ। আর তার পরেই ভারতজুড়ে দেখা দেয় মুসলিমবিরোধী দাঙ্গা, যাতে প্রায় দুই হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। ২০১০ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্ট তাদের রায়ে বলেছিল, যে জায়গায় রামচন্দ্রের মূর্তি স্থাপিত হয়েছে, সেখানে মূর্তিই থাকবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের অভিমতের ভিত্তিতে সেই রায়ে বলা হয়েছিল, বাবরি মসজিদের ভূমির মালিকানা সমান তিন ভাগে ভাগ করে হিন্দু মহাসভা, মৌহি আখড়া ও সুন্নি ওয়াকফকে দিতে হবে। বাবরি মসজিদসহ সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের আওতাধীন মোট ৬৪ একর জমি সমান তিন ভাগে ভাগ করে দেয়া হবে। বিচারক এসইউ খান তার রায়ে সে সময় বলেন, অযোধ্যার বাবরি মসজিদ মোগল সম্রাট বাবর নির্মাণ করেছিলেন, তবে তা রাম মন্দির ধ্বংস করে নয়। হাইকোর্টের ওই নির্দেশের ওপরেই স্থগিতাদেশ দিয়ে রেখেছে সুপ্রিমকোর্ট। সুপ্রিমকোর্টের শুনানির পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সুব্রামানিয়ম স্বামী বলেন, ‘মন্দির ও মসজিদ নির্মাণ করতে আমরা প্রস্তুত। কিন্তু মসজিদ নির্মাণ হওয়া দরকার নদী বরাবর।’ তার মতে, নামাজ যে কোনো জায়গায় পড়া যায় কিন্তু রামচন্দ্রের জন্মভূমি কখনও পাল্টানো সম্ভব নয়। অন্যদিকে, বাবরি মসজিদ অ্যাকশন কমিটি বলছে, আদালতের বাইরে মীমাংসার চেষ্টা আগেও হয়েছে। তবে তা ফলপ্রসূ হয়নি। তাই এর মীমাংসা আদালতকেই করে দিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.