সড়কের চেয়ে জমির আইল ভালো!

মাগুরা শহরের কর্মস্থল থেকে প্রতিদিন রাত নয়টার দিকে হেঁটে বাড়ি ফেরেন বাসুদেব সিকদার (২৮)। বাড়ি পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ডেফুলিয়া গ্রামে। যে সড়ক হয়ে যেতে হয়, তার চেয়ে সড়কের পাশের ফসলি জমির আইলই বেশি পছন্দ বাসুদেবের। ‘সড়কটির অবস্থা খুবই খারাপ। ভাঙাচোরা এ সড়কের চেয়ে জমির আইল কয়েক গুণ ভালো। তাই গত পাঁচ বছর আমি বর্ষা মৌসুম ছাড়া জমির আইল দিয়েই কর্মস্থলে যাতায়াত করি,’ পিচঢালাই ও খোয়া উঠে গিয়ে গ্রামীণ রাস্তার চেহারা নেওয়া সড়কটি দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলছিলেন পেশায় নরসুন্দর বাসুদেব। চরম ভোগান্তির এই সড়কের নাম ‘আজিজার বিশ্বাস সড়ক’। মাগুরা পৌরসভার ডেফুলিয়া বাজার থেকে ছোটব্রিজ এলাকায় মাগুরা-ঝিনাইদহ সড়কে মিশেছে এটি। আশপাশের ৮-১০টি গ্রামের বাসিন্দাদের মাগুরা শহরে যাতায়াতের সহজ পথ এটি। কিন্তু প্রায় দুই কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটি অন্তত এক দশকেও সংস্কারের মুখ দেখেনি। ফলে এলাকাবাসীকে প্রায় চার কিলোমিটার পথ ঘুরে বিকল্প পথে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এই সড়কপথে নিয়মিত চলাচলকারী নছিমনচালক আফিল বিশ্বাস (৫০) বলেন, অন্তত ১০-১৫ বছর ধরে সড়কটির এই দুরবস্থা চলছে। নির্বাচিত হওয়ার আগে মাগুরা পৌরসভার বর্তমান মেয়র খুরশিদ হায়দার (টুটুল) সড়কটি অগ্রাধিকােরর ভিত্তিতে মেরামতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি কথা রাখেননি। মেয়র খুরশিদ হায়দার প্রথম আলোকে বললেন, ‘সড়কটি সংস্কার করার জন্য যাতে এক মাসের মধ্যে দরপত্র আহ্বান করা যায়, আমি সেই ব্যবস্থা নেব।’ দুরবস্থার কারণে সড়কটিতে মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনাও ঘটছে। স্থানীয় যুবক মো. শাহারুল ইসলামসহ (২৫) চারজন সম্প্রতি ভ্যানে করে বাড়ি ফিরছিলেন। ভাঙাচোরা রাস্তার কারণে ভ্যানটি উল্টে গিয়ে সবাই কমবেশি আহত হন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীেগর স্থানীয় এক নেতা দুঃখ করে বললেন, পৌরবাসী হয়েও এ এলাকার অধিবাসীদের পৌরসভার কোনো সুযোগ-সুবিধাই নেই।
না আছে পয়োনিষ্কাশনের সুবিধা, না আছে সড়কবাতি। আর পৌরসভার এ সড়কে চলাচলের সময় পাশের ইউনিয়নের লোকজন গালমন্দ করতে করতে যান। তখন পৌর নাগরিক হিসেবে তাঁর লজ্জা লাগে। কিন্তু দলীয় কারণে (বর্তমান মেয়র ক্ষমতাসীন দলের লোক) তাঁরা অভিযোগ করতে পারেন না। এদিকে ওই ৮-১০টি গ্রামের অনেক ছেলেমেয়ে মাগুরা শহরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে। চাকরি, ব্যবসাসহ অন্যান্য কাজে নিয়মিত শহরে যেতে হয় অনেককে। তাঁদের ভোগান্তির শেষ নেই। তাঁদের একজন মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের কর্মচারী আবু সুফিয়ান (৫২)। ভাঙাচোরা রাস্তার কারণে প্রায়ই অফিসে পৌঁছাতে দেরি হচ্ছিল তাঁর। পরিস্থিতি সামলাতে এখন আগের চেয়ে আধা ঘণ্টা আগে বাড়ি থেকে বের হন তিনি। এলাকাবাসীর ভোগান্তির কথা উল্লেখ করে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি নিজের অবস্থানে থেকে যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করছেন। কিন্তু সড়কটি ঠিক করার মালিক পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। মাগুরা পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ১৯৯৩ সালের দিকে সড়কটি সংস্কার করেছিল পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। পরে সড়কটি সওজের (সড়ক ও জনপথ বিভাগ) আওতায় চলে যায়। তারা একবার সংস্কার করেছিল। দুই বছর হলো সড়কটি আবার পৌরসভার আওতায় ফিরেছে। সড়কটির বর্তমান অবস্থা খুব খারাপ স্বীকার করে তিনি বলেন, সংস্কার করেও তেমন লাভ হবে না। কারণ, এলাকার কিছু ইটভাটার কারণে সড়কটিতে ভারী ট্রাক চলে। অল্প দিনেই অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে।

No comments

Powered by Blogger.