বিএনপি প্রমাণ করেছে তারা পাকিস্তানের পক্ষে

গণহত্যা দিবসে বিএনপির কর্মসূচি না থাকার তীব্র সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সরকার ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস ঘোষণা করেছে। কিন্তু একটি বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠী বিএনপি-জামায়াত তা পালন করল না। এর মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হল যে একদিকে তারা যেমন বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, অপরদিকে যুদ্ধাপরাধী, গণহত্যাকারী, লুণ্ঠনকারী, অগ্নিসংযোগকারী, মেয়েদের ইজ্জত লুণ্ঠনকারী এবং অপরাধীদেরকেই এরা আপন মনে করে। প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে বিষয়টি মনে রাখার আহ্বান জানান। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে সোমবার বিকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ ৯ ডিসেম্বরকে গণহত্যা দিবস ঘোষণা করেছে। কিন্তু যে দেশে যেদিন গণহত্যা শুরু হয়, সে দেশে সেদিন দিবসটি পালনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের পার্লামেন্টে আলোচনার পর সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এরপর কেবিনেটেও সেটা পাস করেছি। কেবিনেট যখন পাস করেছে, তখন সবার জন্য প্রযোজ্য, সবাই হণহত্যা দিবস পালন করবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপি-জামায়াত বুঝিয়ে দিল তারা বাংলার জনগণের সঙ্গে নেই- তারা আছে আলবদর, আলশামস, রাজাকার, হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মাটিতে কোনো জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের স্থান হবে না। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থান অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশের মাটিতে এদের বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে যা যা করার সবই করা হবে।
জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযানও চলবে, দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির চাকাও সচল রাখা হবে। সরকার প্রধান আরও বলেন, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযানে গেলেই কাদের মনে কষ্ট লাগে, মনোবেদনার সৃষ্টি হয় তা দেশবাসীর সামনে স্পষ্ট। দেশ এগিয়ে গেলে, দেশের মানুষ শান্তিতে থাকলেই এদের অন্তর্জ্বালা শুরু হয়। কিভাবে জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের রক্ষা করবে, তাদের অপকর্ম কিভাবে ঢাকবে সেজন্য একই ভাঙা রেকর্ড তারা বাজিয়েই যাচ্ছে। কিন্তু জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। আমরা চাই না দেশে কোনো জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের সৃষ্টি হোক। বিএনপি-জামায়াত জোটের অগ্নিসন্ত্রাস, জ্বালাও-পোড়াও যেভাবে দেশের মানুষ মোকাবেলা করেছে, এখন সময় এসেছে এসব জঙ্গি-সন্ত্রাসীদেরও ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা ও প্রতিহত করার। ধর্মের নামে জঙ্গিবাদ ও আত্মহননের পথ বেছে নিয়ে মুষ্টিমেয় একটি গোষ্ঠী মুসলমানদেরকেই বিশ্বের সামনে হেয় করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলাম শান্তি ও পবিত্র ধর্ম। ইসলামে আত্মহনন মহাপাপ। কিন্তু ইসলাম ধর্মের নাম ব্যবহার করে কিছু বিপথগামী এসব অপকর্ম করে বিশ্বের সব মুসলমানদেরই হেয় করছে। আত্মহনন করে মানুষ মারতে পারলেই নাকি জান্নাতে যাওয়া যাবে, সঙ্গে আরও ৭০ জনকে নিয়ে যেতে পারবে! এ পর্যন্ত যারা আত্মঘাতী হয়েছে তারা কী জান্নাতে গেছে নাকি দোজখে গেছে? কেউ (আত্মঘাতী) কি এ ব্যাপারে কোনো মেসেজ পাঠিয়েছে, কেউ কী সেই মেসেজ পেয়েছে? আসলে এরা পবিত্র ও শান্তির ধর্ম ইসলামকেই হেয় করছে। মুষ্টিমেয় কিছু লোক গোটা মুসলমানদের জীবনই অতিষ্ঠ করে তুলেছে। বাড়ি ভাড়া দেয়ার ক্ষেত্রে মালিকদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যারা বাড়ি ভাড়া দিচ্ছেন, কাকে দিচ্ছেন, সে কী করেন, এসব খোঁজখবর নিন। শুধু ঢাকা শহরেই নয়, দেশের যে কোনো জায়গায় বাড়ি ভাড়া দেয়ার আগে এসব খোঁজখবর নেয়ার জন্য বাড়ির মালিকদের আহ্বান জানাচ্ছি। তা না হলে কিন্তু ক্ষতি আপনাদেরও হবে। বিপদে আপনারাও পড়বেন। জিয়াউর রহমানকে যারা স্বাধীনতার ঘোষক বলেন তাদের ‘অর্বাচীন’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো একজনের বাঁশির ফুঁতে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি। বঙ্গবন্ধুর ২৪ বছরের সংগ্রাম ও নেতৃত্বের ফসলই হচ্ছে আমাদের স্বাধীনতা। তাই এখন স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে কে কী বলে তা নিয়ে আলোচনা করার কোনো দরকার নেই। আর স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়েই বিতর্কের অবসান হয়ে গেছে। সর্বোচ্চ আদালতের রায়েই রয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই হচ্ছেন স্বাধীনতার ঘোষক। আদালতের রায় অমান্য করে যেসব অর্বাচীন ঘোষক নিয়ে মিথ্যাচার করবে তখন বুঝবেন- ‘পাগলে কিনা কয়, ছাগলে কিনা খায়।’ আসলে যারা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না,
পরাজিত শক্তির পদহেলন করে তারাই এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চায়। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ও ডাকসুর সাবেক ভিপি আকতারুজ্জামান, ড. শাম্মী আহমেদ, ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মঞ্চে উপস্থিত থাকলেও বক্তব্য দেননি। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এ আলোচনা সভা বিকাল ৩টায় শুরু হয়। এর আগে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা সমাবেত হন কৃষিবিদ ইন্সটিটিউট অডিটরিয়াম এলাকায়। দুপুর ২টার মধ্যে নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ হয় হলরুম। বাইরে দাঁড়িয়ে শত শত লোক মাইকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা শোনেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘ ৩৪ মিনিট বক্তৃতায় দেশের স্বাধীনতা আন্দোলন সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর অবদান, সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান অব্যাহত রাখা এবং বিএনপির অপরাজনীতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

No comments

Powered by Blogger.